ইরাক
ও সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধের অবসানে পশ্চিমা বিশ্ব তেমন কিছুই করেনি। এ
গৃহযুদ্ধ মধ্যপ্রাচ্য থেকে এ পর্যন্ত সবচেয়ে বড় গণ-দেশত্যাগের ঘটনার
সূত্রপাত করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের চলমান শরণার্থী সংকটের কারণও এটাই।
সিরিয়ার মোট দুই কোটি ৩০ লাখ মানুষের অর্ধেকের বেশি ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে। এর মধ্যে ৪০ লাখ মানুষ দেশের বাইরে শরণার্থী হয়েছে। ইরাকেও ঘরবাড়িছাড়া লোকের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। দেশটির প্রায় ৩০ লাখ লোক বাস্তুচ্যুত হয়েছে। তাদের অনেকেই উপলব্ধি করতে শুরু করছে যে এই যুদ্ধ সহজে শেষ হচ্ছে না। এ কারণে তারা নিজের দেশে নিরাপদে বেঁচে থাকার আশা আর রাখছে না।
ইরাক ও সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ সংকটকে ক্রমেই গভীরতর করছে। ইরাকের ভেতরে জঙ্গিদের সঙ্গে সরকারি বাহিনীর রণাঙ্গনে যে সমরসজ্জা, তা এখন সীমান্তে মোতায়েন সেনা ও অস্ত্রসরঞ্জামের তুলনায় অনেক গুণ বেশি। এ পরিস্থিতিতে দেশটিতে চলছে চরম অস্থিতিশীলতা। এ ছাড়া ইরাক ও সিরিয়ায় শিয়া মিলিশিয়া, কট্টর সুন্নি বাহিনী, বিভিন্ন আদিবাসী গোষ্ঠী একে অপরকে নির্মূল করতে লড়ছে। বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্য করে প্রতিদিন হামলা চালিয়ে সাম্প্রদায়িক ঘৃণা ক্রমান্বয়ে বাড়িয়ে তুলছে কট্টর সুন্নি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস)। উগ্র শিয়ারাও প্রতিশোধ নিতে সীমা লঙ্ঘন করছে। তবে গৃহযুদ্ধের বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রত্যেকটি সম্প্রদায়ই এতটা ভীতসন্ত্রস্ত যে সহায়-সম্পদ বেদখল হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি নিয়েও পালিয়ে যাচ্ছে তারা। সিরিয়ার কুর্দি কর্তৃপক্ষ তাদের পুরো এলাকা জনশূন্য হওয়া নিয়ে চিন্তিত। কেননা কুর্দি বাসিন্দারাও ঘরবাড়ি ছেড়ে ইউরোপের পথে ছুটছে।
দৃশ্যত এক শতাব্দী আগের প্রথম বিশ্বযুদ্ধের মতোই দীর্ঘ হচ্ছে ইরাক ও সিরিয়ার লড়াই। ২০১১ সালে পশ্চিমা শক্তি যেমন যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্স এবং এর আঞ্চলিক মিত্র সৌদি আরব, তুরস্ক ও কাতারের হিসাবে ব্যাপক ভুল হয়েছিল। তাদের ধারণা ছিল, সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পতন লিবিয়ার মুয়াম্মার গাদ্দাফির মতোই দ্রুত হবে।
সাম্প্রদায়িক সংঘাতে ইরাক ও সিরিয়া ছিন্নভিন্ন হলেও পশ্চিমা শক্তিগুলোর মধ্যে অদ্ভুত বিচ্ছিন্নতা দেখা যাচ্ছে। জরুরি ভিত্তিতে কিছু করার তাগিদ অন্তত এখন পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না। ইউরোপীয় ইউনিয়নে শরণার্থীদের অবিশ্রান্ত ঢলের কারণে পাশ্চাত্যের নির্লিপ্ত আচরণের পরিবর্তন হয়েছে—এটা বলারও সময় এখনো আসেনি।
পাকিস্তান ও নাইজেরিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে কমপক্ষে নয়টির বেশি আদিবাসী, উপজাতি বা বিচ্ছিন্নতাবাদী গৃহযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে। এ ছাড়া উত্তর-পূর্ব নাইজেরিয়ায় চলছে বোকো হারামের সন্ত্রাসী তৎপরতা। আছে আফগান যুদ্ধ। স্নায়ুযুদ্ধ চলাকালেও এত বেশি দেশে গৃহযুদ্ধ দেখা যায়নি। কারণ, তখনকার সোভিয়েত ইউনিয়ন জানত, এ ধরনের অস্থিরতা অন্য বিশ্বশক্তিকে সুযোগ এনে দেবে। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর লিবিয়া বা ইরাকের মতো দেশগুলোর সমস্যায় পড়ার মধ্যে আর কোনো স্বার্থ দেখছে না পশ্চিমা শক্তিগুলো। এটাও লক্ষণীয় যে গুরুত্বপূর্ণ উৎপাদনকারী দেশ হওয়া সত্ত্বেও ওই দুটি দেশের সরকার পতনে তেলের দামেও তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি। বিশ্বায়ন ও নব্য-উদার, মুক্তবাজার অর্থনীতির এই যুগে প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ হ্রাস পেয়েছে। মুক্তবাজার অর্থনীতি চালু থাকায় সরকার জনগণের অর্থনৈতিক নিরাপত্তার প্রচেষ্টা এড়িয়ে যাওয়ার মতাদর্শগত ন্যায্যতা পেয়েছে। এখানে শক্তি ও সম্পদ একচেটিয়াভাবে ক্ষমতাসীন অভিজাতদের হাতে।
২০১১ সালের আগেও সিরিয়ার রাজধানীর দামেস্কের মধ্যাঞ্চল জীবনযাপনের জন্য বেশ ভালো জায়গা ছিল। সেখানে ছিল দারুণ সব রেস্তোরাঁ ও বিপণিবিতান। একই সময় উত্তর-পূর্ব সিরিয়ায় চলছিল বিপর্যয়কর খরা। কিন্তু সেখানকার জনসাধারণের জন্য সরকার কিছুই করেনি। ফলে ঘরবাড়ি ছেড়ে ওই এলাকার প্রায় ৩০ লাখ মানুষকে শহরের বস্তি এলাকায় আশ্রয় নিতে হয়। ওই স্থানগুলোই পরবর্তী সময়ে বিদ্রোহীদের শক্ত ঘাঁটিতে পরিণত হয়।
স্নায়ুযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর গত ২৫ বছরে বিশ্বায়ন ও মুক্তবাজার অর্থনীতিকে আধুনিক শক্তি হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। তবে বাস্তবতা হলো, জাতিরাষ্ট্র ও জাতীয়তার বোধ হ্রাসের পর এর স্থানে ভালো কিছু প্রতিস্থাপিত হয়নি। বরং আইএসের মতো মৌলবাদী শক্তিগুলোর জন্য দুয়ার খুলে গেছে।
সিরিয়ার মোট দুই কোটি ৩০ লাখ মানুষের অর্ধেকের বেশি ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে। এর মধ্যে ৪০ লাখ মানুষ দেশের বাইরে শরণার্থী হয়েছে। ইরাকেও ঘরবাড়িছাড়া লোকের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। দেশটির প্রায় ৩০ লাখ লোক বাস্তুচ্যুত হয়েছে। তাদের অনেকেই উপলব্ধি করতে শুরু করছে যে এই যুদ্ধ সহজে শেষ হচ্ছে না। এ কারণে তারা নিজের দেশে নিরাপদে বেঁচে থাকার আশা আর রাখছে না।
ইরাক ও সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ সংকটকে ক্রমেই গভীরতর করছে। ইরাকের ভেতরে জঙ্গিদের সঙ্গে সরকারি বাহিনীর রণাঙ্গনে যে সমরসজ্জা, তা এখন সীমান্তে মোতায়েন সেনা ও অস্ত্রসরঞ্জামের তুলনায় অনেক গুণ বেশি। এ পরিস্থিতিতে দেশটিতে চলছে চরম অস্থিতিশীলতা। এ ছাড়া ইরাক ও সিরিয়ায় শিয়া মিলিশিয়া, কট্টর সুন্নি বাহিনী, বিভিন্ন আদিবাসী গোষ্ঠী একে অপরকে নির্মূল করতে লড়ছে। বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্য করে প্রতিদিন হামলা চালিয়ে সাম্প্রদায়িক ঘৃণা ক্রমান্বয়ে বাড়িয়ে তুলছে কট্টর সুন্নি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস)। উগ্র শিয়ারাও প্রতিশোধ নিতে সীমা লঙ্ঘন করছে। তবে গৃহযুদ্ধের বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রত্যেকটি সম্প্রদায়ই এতটা ভীতসন্ত্রস্ত যে সহায়-সম্পদ বেদখল হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি নিয়েও পালিয়ে যাচ্ছে তারা। সিরিয়ার কুর্দি কর্তৃপক্ষ তাদের পুরো এলাকা জনশূন্য হওয়া নিয়ে চিন্তিত। কেননা কুর্দি বাসিন্দারাও ঘরবাড়ি ছেড়ে ইউরোপের পথে ছুটছে।
দৃশ্যত এক শতাব্দী আগের প্রথম বিশ্বযুদ্ধের মতোই দীর্ঘ হচ্ছে ইরাক ও সিরিয়ার লড়াই। ২০১১ সালে পশ্চিমা শক্তি যেমন যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্স এবং এর আঞ্চলিক মিত্র সৌদি আরব, তুরস্ক ও কাতারের হিসাবে ব্যাপক ভুল হয়েছিল। তাদের ধারণা ছিল, সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পতন লিবিয়ার মুয়াম্মার গাদ্দাফির মতোই দ্রুত হবে।
সাম্প্রদায়িক সংঘাতে ইরাক ও সিরিয়া ছিন্নভিন্ন হলেও পশ্চিমা শক্তিগুলোর মধ্যে অদ্ভুত বিচ্ছিন্নতা দেখা যাচ্ছে। জরুরি ভিত্তিতে কিছু করার তাগিদ অন্তত এখন পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না। ইউরোপীয় ইউনিয়নে শরণার্থীদের অবিশ্রান্ত ঢলের কারণে পাশ্চাত্যের নির্লিপ্ত আচরণের পরিবর্তন হয়েছে—এটা বলারও সময় এখনো আসেনি।
পাকিস্তান ও নাইজেরিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে কমপক্ষে নয়টির বেশি আদিবাসী, উপজাতি বা বিচ্ছিন্নতাবাদী গৃহযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে। এ ছাড়া উত্তর-পূর্ব নাইজেরিয়ায় চলছে বোকো হারামের সন্ত্রাসী তৎপরতা। আছে আফগান যুদ্ধ। স্নায়ুযুদ্ধ চলাকালেও এত বেশি দেশে গৃহযুদ্ধ দেখা যায়নি। কারণ, তখনকার সোভিয়েত ইউনিয়ন জানত, এ ধরনের অস্থিরতা অন্য বিশ্বশক্তিকে সুযোগ এনে দেবে। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর লিবিয়া বা ইরাকের মতো দেশগুলোর সমস্যায় পড়ার মধ্যে আর কোনো স্বার্থ দেখছে না পশ্চিমা শক্তিগুলো। এটাও লক্ষণীয় যে গুরুত্বপূর্ণ উৎপাদনকারী দেশ হওয়া সত্ত্বেও ওই দুটি দেশের সরকার পতনে তেলের দামেও তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি। বিশ্বায়ন ও নব্য-উদার, মুক্তবাজার অর্থনীতির এই যুগে প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ হ্রাস পেয়েছে। মুক্তবাজার অর্থনীতি চালু থাকায় সরকার জনগণের অর্থনৈতিক নিরাপত্তার প্রচেষ্টা এড়িয়ে যাওয়ার মতাদর্শগত ন্যায্যতা পেয়েছে। এখানে শক্তি ও সম্পদ একচেটিয়াভাবে ক্ষমতাসীন অভিজাতদের হাতে।
২০১১ সালের আগেও সিরিয়ার রাজধানীর দামেস্কের মধ্যাঞ্চল জীবনযাপনের জন্য বেশ ভালো জায়গা ছিল। সেখানে ছিল দারুণ সব রেস্তোরাঁ ও বিপণিবিতান। একই সময় উত্তর-পূর্ব সিরিয়ায় চলছিল বিপর্যয়কর খরা। কিন্তু সেখানকার জনসাধারণের জন্য সরকার কিছুই করেনি। ফলে ঘরবাড়ি ছেড়ে ওই এলাকার প্রায় ৩০ লাখ মানুষকে শহরের বস্তি এলাকায় আশ্রয় নিতে হয়। ওই স্থানগুলোই পরবর্তী সময়ে বিদ্রোহীদের শক্ত ঘাঁটিতে পরিণত হয়।
স্নায়ুযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর গত ২৫ বছরে বিশ্বায়ন ও মুক্তবাজার অর্থনীতিকে আধুনিক শক্তি হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। তবে বাস্তবতা হলো, জাতিরাষ্ট্র ও জাতীয়তার বোধ হ্রাসের পর এর স্থানে ভালো কিছু প্রতিস্থাপিত হয়নি। বরং আইএসের মতো মৌলবাদী শক্তিগুলোর জন্য দুয়ার খুলে গেছে।

No comments:
Post a Comment