 |
প্রধান শিক্ষক এমদাদুল হককে এভাবেই শিকল দিয়ে বেঁধে রাখে অপহরণকারীরা। পরে র্যাব তাকে উদ্ধার করে |
নাটোরে
গত এক মাসে ছাত্র-শিক্ষকসহ ১০টি অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে এক মাদরাসা
ছাত্রকে মৃত ও ছয়জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছে দুই মাদরাসা
ছাত্র ও এক বাক প্রতিবন্ধী। এসব ঘটনায় নাটোরের সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক
বিরাজ করছে।
র্যাব, পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২৩ আগষ্ট
থেকে ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এক মাসে নাটোর জেলায় চার মাদরাসা ছাত্র, এক
মাদরাসা ছাত্রী, এক প্রধান শিক্ষক, দুই ব্যবসায়ী, এক নারী ও এক বাক
প্রতিবন্ধী নিমার্ণ শ্রমিকসহ ১০টি অপহরনের ঘটনা ঘটেছে।
এসব ঘটনার মধ্যে
প্রধান শিক্ষককে র্যাব ও দুই ব্যবসায়ীকে পুলিশ উদ্ধার করেছে। মাদরাসা
ছাত্র আমিনুল হককে (১২) মুক্তিপণের টাকা নিয়ে ছেড়ে দিয়েছে অপহরণকারীরা।
নাটোর শহরের আলাইপুরের কওমী মাদরাসা ছাত্র তানভীর হোসেনের (১১) লাশ
মাদরাসার পাশের সেপটিক ট্র্যাংকি থেকে উদ্ধার করেছে র্যাব। অপহৃত নারীকে
গণধর্ষণের পর অপহরণকারীরাই ছেড়ে দেয়। এ ছাড়া বড়াইগ্রামের রাজাপুর কওমী
মাদরাসার অপহৃত ছাত্র সাইফুল্লাহ (১২), নাটোর সদরের লক্ষীপুর খোলাবাড়িয়া
কওমী মাদরাসার ছাত্র কাজল (১১) এবং নাটোর সদরের গৌরিপুর গ্রামের বাক
প্রতিবন্ধী নিমার্ণ শ্রমিক হায়দার আলী মোল্লা (৩৬) এখনো নিখোঁজ রয়েছে।
অপহৃতদের
পারিবারিক ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২৩ আগষ্ট নাটোর সদরের গৌরিপুর
গ্রামের বাক প্রতিবন্ধী নিমার্ণ শ্রমিক হায়দার আলীকে জেলার গুরুদাসপুর
উপজেলার নাজিরপুরে কাজের কথা বলে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গুম করা হয়। এঘটনার
তার স্ত্রী মিনা বেগম আব্দুস সালাম, রাজু ও আবু তাহের নামে তিনজনের
বিরুদ্ধে গুমের অভিযোগে মামলা করলেও কোনো অভিযুক্তকেই পুলিশ এখনো পর্যন্ত
আটক করতে পারে নাই।
২৫ আগষ্ট পাশের আত্রাই পতিসর থেকে এক মানসিক
প্রতিবন্ধী নারীকে নৌকায় অপহরণ করে নাটোরের সিংড়ায় এনে গণধর্ষণ করা হয়। এ
ঘটনায় বর্তমানে পাঁচজন জেল হাজতে রয়েছে। একই দিন নাটোর শহরের আলাইপুরের
কওমী মাদরাসা ছাত্র তানভীর হোসেন (১১) নিখোঁজ হয়। ছয়দিন পর ৩১ আগষ্ট তার
লাশ মাদরাসার পাশের সেপটিক ট্র্যাংকি থেকে উদ্ধার করেছে র্যাব। একই সময়ে
র্যাব নিহতের তিন সহপাঠিকে এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে আটক করেছে।
আটককৃত তিন কিশোর ইতোমধ্যে আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে বলেছে, ভারতীয়
টিভি চ্যানেলে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনা দেখেই তারা সহপাটিকে অপহরণ
করে তার বাবার কাছ থেকে বিকাশের মাধ্যমে মুক্তিপণ নেয়ার চেষ্টা করেছিল।
২৮
আগষ্ট নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার ক্ষিদ্র মালঞ্চি গ্রামের আতাহার আলীর
বাড়ি থেকে মারজানা (৯) নামে ঢাকা রায়ের বাজারের কদমতলি এলাকার তালিম উদ্দিন
মহিলা মাদরাসার অপহৃত ছাত্রীকে উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় পুলিশ অপহরণকারী
চক্রের সদস্য আতাহার আলীর আত্মীয় আব্দুল মালেককে আটক করেছে। এর দুদিন আগে
মাদরাসার পাশ থেকে সে অপহৃত হয়েছিল।
৩ সেপ্টেম্বর নাটোর সদরের লক্ষীপুর
খোলাবাড়িয়া কওমী মাদরাসার ছাত্র কাজল (১১) বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরের
মাদরাসায় যাওয়ার সময় অপহরণ হয়। ভ্যান চালক বাবা দেলোয়ার হোসেন মুক্তিপণের
টাকা দিতে না পারায় আজো তার ছেলে মুক্তি পায়নি।
৫ সেপ্টেম্বর সকালে বাড়ি
থেকে মাদরাসায় যাওয়ার পথে অপহরণ হয় বড়াইগ্রামের রাজাপুর কওমী মাদরাসার
অপহৃত ছাত্র আমিনুল হক (১২) ও সাইফুল্লাহ (১২)। পরের দিন বিকাশে চাহিদা মতো
মুক্তিপণের টাকা দেয়ার পর অপহরণকারীরা একটি চলন্ত মাইক্রোবাস থেকে আমিনুল
হককে স্থানীয় মুলাডুলি বাজারের পাশে নামিয়ে দিলেও আজ পর্যন্ত উদ্ধার হয়নি
অপর মাদরাসা ছাত্র সাইফুল্লাহ।
৯ সেপ্টেম্বর অপহরণেরর ১১দিন পর নাটোরের
সিংড়া উপজেলার বিলাঞ্চলের আধঘোলা গ্রাম থেকে শিকল দিয়ে হাত-পা বাঁধা
অবস্থায় অপহরণকারীদের দূর্গম এলাকার একটি ঘর থেকে র্যাব উদ্ধার করে অপহৃত
রাজশাহী বাঘার ছাতারী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এমদাদুল হককে (৫৫)।
পাওনা টাকা ফেরত দেয়ার কথা বলে মোবাইলে নাটোরে ডেকে নিয়ে তাকে অপহরণ করা
হয়। র্যাব এ ঘটনায় মুল পরিকল্পনাকারীসহ চারজনকে আটক করেছে।
১৬
সেপ্টেম্বর নাটোর শহরের মীরপাড়ার আব্দুল গফুরের ছেলে ব্যবসায়ী হেলাল উদ্দিন
(৩৫) ও ভবানীপুর গ্রামের প্রাণ মোহাম্মদের ছেলে মাসুদ পারভেজ (৩৭) অপহৃত
হন। দুই লাখ টাকা মুক্তিপন দাবির পর বিকাশে প্রথমে ৬০ হাজার টাকা দেয়
অপহৃতদের পরিবার। পরের দিন মোবাইল ট্র্যাকিং করে সকালে পুলিশ পাবনার
চাটমোহর থেকে দুই ব্যবসায়ীকে উদ্ধার ও চার অপহরণকারীকে আটক করেছে।
এ
বিষয়ে জানতে চাইলে নাটোরের পুলিশ সুপার শ্যামল কুমার মুখার্জী নয়া দিগন্তের
এই প্রতিবেদকে বলেছেন, প্রতিটিই বিচ্ছিন্ন ঘটনা, তারপরও পুলিশ সব ঘটনাই
আন্তরিকতার সাথে তদন্ত করে নিখোঁজ মানুষদের উদ্ধারের চেষ্টা করেছে।
ইতোমধ্যে বেশির ভাগ উদ্ধারও হয়েছে। যে তিনজন এখনো উদ্ধার হয়নি তাদের
উদ্ধারে পুলিশ সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
Comments[ 0 ]
Post a Comment