ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় গতকাল শুক্রবার
আবার স্থল অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। যুদ্ধবিমান ও সামরিক
হেলিকপ্টারের সহায়তা নিয়ে স্থলবাহিনীর ওই অভিযানে গতকাল নিহত হয়েছে অন্তত
২৪ জন। আহত হয়েছে ২০০ জন। প্রাণ বাঁচাতে গাজার বাসিন্দারা বাড়িঘর ছেড়ে
নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটছে। খবর এএফপি, বিবিসি ও রয়টার্সের।
হামাস
হুঁশিয়ারি করে বলেছে, এ আগ্রাসনের জন্য ইসরায়েলকে চড়া মূল্য দিতে হবে।
ইসরায়েলি হামলার জবাবে তারা গাজা থেকে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে রকেট ছুড়ছে।
ইসরায়েল বলছে, গতকাল এক ইসরায়েলি সেনা নিহত হয়েছেন। তবে কোথায় ও কীভাবে
নিহত হয়েছেন, তা সুনির্দিষ্ট করে জানানো হয়নি।
এর আগে ১৩ জুলাই দিবাগত
রাত থেকে প্রথম গাজায় স্থল অভিযান শুরু করেছিল ইসরায়েলি নৌ কমান্ডোরা।
তবে এক দিন পরই ওই স্থল হামলা স্থগিত করা হয়েছিল। ৭ জুলাই থেকে গতকাল
পর্যন্ত গাজায় ইসরায়েলি অভিযানে নিহত ব্যক্তির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৬১। এই
সময়ে আহত হয়েছে এক হাজার ৯২০ জন।
>>গাজার একটি হাসপাতালে যন্ত্রণায় কাঁদছে ইসরায়েলি হামলায় আঘাত পাওয়া এক শিশু। ওই হামলায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে তাদের বাড়িটি l ছবি: এএফপি
গাজায়
স্থল অভিযানের ঘোষণা দিয়ে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানায়, ‘হামাস ১০ দিন
ধরে জল, স্থল ও আকাশপথে ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতি
অবসানের জন্য বারবার প্রস্তাব দিলেও হামাস তা নাকচ করেছে। তাই গাজায় আবারও
স্থল অভিযানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)।’ ওই
ঘোষণায় আরও বলা হয়, ইসরায়েলি জনগণকে বেপরোয়া সন্ত্রাসের হাত থেকে রক্ষা
করতে হামাসের ‘সন্ত্রাসী অবকাঠামো’ ধ্বংস করাই এই অভিযানের লক্ষ্য।
এদিকে
গাজায় ইসরায়েল হামাসের বিরুদ্ধে স্থল অভিযান আরও বাড়াতে প্রস্তুত। দেশটির
প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গতকাল এ কথা বলেছেন। তিনি বলেন,
সেনাবাহিনী হামাসের সুড়ঙ্গগুলো লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে। কিন্তু এ কাজ
কেবল বিমান হামলা চালিয়ে করা সম্ভব নয়। নেতানিয়াহু বলেন, ‘আমি আরও ব্যাপক
পরিসরে স্থল অভিযান চালানোর প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি। সেনাবাহিনী
সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নিচ্ছে।’
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র মেজর আরি
সালিকার বলেন, গাজায় হামাসের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনার কেন্দ্র,
বিভিন্ন স্থাপনা ও সুড়ঙ্গগুলো ধ্বংস করতেই স্থল অভিযানের সিদ্ধান্ত নেওয়া
হয়েছে।
গাজার সেজাইয়া এলাকার বাসিন্দা বাসিল আরিয়ার বলেন, সন্ধ্যা থেকে
ভোর পর্যন্ত থেমে থেমে হামলা হয়েছে। বাড়িতে পানি নেই, বিদ্যুৎ নেই। কোনো
রকমে জীবন নিয়ে জাতিসংঘ শিবিরে আশ্রয় পেয়েছেন তিনি।
গাজার জরুরি
সার্ভিসের মুখপাত্র আশরাফ আল-কুদরা গতকাল জানান, শুক্রবার সকালে গাজার
দক্ষিণাঞ্চলে হামলায় নিহত একজনকে উদ্ধার করা হয়। তার আগে দক্ষিণাঞ্চলের খান
ইউনিস এলাকায় হামলায় দুই ব্যক্তি নিহত হন। খান ইউনিসেই পৃথক হামলায় একই
পরিবারের চার সদস্য নিহত হন। ট্যাংকের গোলায় নিহত হন অপর তিনজন। হতাহতের
সংখ্যা বেড়েই চলেছে।
কাতারে নির্বাসিত হামাসের প্রধান খালেদ মিশেল
বলেছেন, দখলদার ইসরায়েল জল ও আকাশপথে হামলা চালিয়ে লক্ষ্য অর্জন করতে না
পেরে স্থল অভিযানের ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু এই অভিযানও ব্যর্থতায় পর্যবসিত
হবে। ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস হামলা বন্ধের দাবি জানিয়ে
বলেছেন, এই অভিযান আরও রক্তপাত বৃদ্ধি করবে।
নেতানিয়াহুকে কেরির ফোন:
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে টেলিফোন করে গাজা অভিযানে
পরোক্ষ ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনার আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী
জন কেরি। পাশাপাশি যত দ্রুত সম্ভব যুদ্ধবিরতিতে যাওয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন
তিনি। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এ তথ্য জানানো হয়।
Comments[ 0 ]
Post a Comment