২৪ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতির সময় শেষ না হতেই
আবারও গাজায় ভয়াবহ হামলা শুরু করেছে ইসরাইল। স্থলবাহিনীর ট্যাংকের গোলা
নিক্ষেপের পাশাপাশি অব্যাহত আছে বিমান, স্থল ও নৌ হামলা। মানবিক
অস্ত্রবিরতি প্রত্যাখ্যান করে হামাস রকেট হামলা চালিয়ে যাচ্ছে অভিযোগ করে
রোববার সকালে এক বিবৃতিতে পুনরায় হামলা শুরু করার ঘোষণা দেয় ইসরাইল। এর আগে
শনিবার ১২ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতি সফলভাবে শেষ হওয়ার পর জাতিসংঘের অনুরোধে
বিরতি আরও ১২ ঘণ্টা বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছিল ইসরাইলি মন্ত্রিসভা। তবে রোববার
দুপুরে হামাস ঘোষণা করে ঈদ উপলক্ষে তারা ২৪ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতিতে রাজি। যদিও
তাৎক্ষণিকভাবে ইসরাইলের তরফ থেকে এর কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। এদিকে
গাজায় লাশের মিছিল ক্রমেই দীর্ঘ হচ্ছে। গত ২০ দিনে নিহত হয়েছেন ১০৫০ জন
ফিলিস্তিনি। আহত হয়েছেন প্রায় সাড়ে ছয় হাজার। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক
সংস্থা জানিয়েছে, ইতিমধ্যে প্রায় দেড় লাখ গাজাবাসী বাড়িঘর হারিয়েছেন।
বিবিসি, আলজাজিরা ও এএফপিসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের পাঠানো খবর।
![](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjT8_r5FdgWeEEjRzjrhs4n1MhPuHPZMx2JbAKf4Ly5x9xvWJ8TXS9igeavi0N3UIIIf5tYLjfq1kP6tkXIFAzzL9BwVORW7eJJY2DxL3DKyYay6r9euee5rfMb3YlZZhruFXALGIqdHHk/s1600/Gaza-main-getty.jpeg)
রোবাবর
সকালে ইসরাইলি হামলায় তিন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গাজার জরুরি বিভাগের
মুখপাত্র আশরাফ আল কুদার বলেন, সেন্ট্রাল গাজার নিকটবর্তী সীমান্তের কাছে
ট্যাংকের গোলার আঘাতে দুজন নিহত হন। এছাড়া খান ইউনিস শহরে বোমা হামলায়
অন্যজন নিহত হয়েছেন। পরবর্তীকালে আরও বেশ কয়েকটি হামলায় নিহতের সংখ্যা
বাড়তে থাকে। শনিবার ১২ ঘণ্টা যুদ্ধবিরতির পর রোববার রাতে জাতিসংঘের অনুরোধে
আরও ১২ ঘণ্টার বিরতিতে সম্মত হয় ইসরাইল। তবে কয়েক ঘণ্টা যেতে না যেতেই
ইসরাইলি সেনারা এক বিবৃতিতে জানায়, হামাস যুদ্ধবিরতি প্রত্যাখ্যান করে রকেট
হামলা অব্যাহত রাখায় তারাও পুনরায় গাজায় হামলা শুরু করতে যাচ্ছে। রোববার
সকালে হামাসের ছোড়া কমপক্ষে ৫টি রকেট ইসরাইলের ভূখণ্ডে আঘাত করেছে বলে
অভিযোগ করে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী। গাজার বাসিন্দারা জানান, ঘোষণার
কিছুক্ষণ পরই গাজা উপত্যকায় আগের মতো গোলাবর্ষণের শব্দ শোনা গেছে। এএফপির
খবরে বলা হয়, বর্ধিত ১২ ঘণ্টার মধ্যে ১০ ঘণ্টা যেতেই গাজায় হামলা শুরু করে
ইসরাইল।
অপরদিকে যুদ্ধবিরতির সময়টিকে নতুন হামলা চালানোর প্রস্তুতি
হিসেবে ব্যবহার করেছে ইসরাইল- এই অভিযোগ করে ইসরাইলি সেনারা গাজা ছেড়ে না
যাওয়া পর্যন্ত নতুন কোনো যুদ্ধবিরতি মানবে না বলে জানিয়েছে হামাস। গাজার
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ৮ জুলাই থেকে গাজায় শুরু হওয়া ইসরাইলের
প্রায় একতরফা বর্বর হামলায় এক হাজার ৫০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত
হয়েছেন সাড়ে ছয় হাজার। বাস্তুচ্যুত হয়েছেন প্রায় দেড় লাখ মানুষ। হতাহতদের
বেশির ভাগই বেসামরিক নাগরিক। তাদের মধ্যে অনেক নারী ও শিশু রয়েছে। বাড়ি-ঘর
ছেড়েছেন প্রায় এক লাখ ৮০ হাজার ফিলিস্তিনি। অন্যদিকে ইসরাইল দাবি করেছে,
হামাসের হামলায় তাদের তিন বেসামরিক নাগরিক ও ৪৩ সেনা নিহত হয়েছেন।
২৪
ঘণ্টার যুদ্ধবিরতিতে রাজি হামাস : শনিবার রাতে জাতিসংঘের যুদ্ধবিরতির
প্রস্তাবে সাড়া না দিলেও রোববার বিকালে হামাস মুখপাত্র সামি আবু জুহরি
জানান, পবিত্র ঈদ উপলক্ষে তারা ২৪ ঘণ্টার মানবিক যুদ্ধবিরতিতে রাজি। তিনি
জানান, স্থানীয় সময় রোববার বেলা ২টা থেকে যুদ্ধবিরতিতে তারা সম্মত। তবে
তাৎক্ষণিকভাবে ইসরাইলের পক্ষ থেকে এর কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। গাজার
আলজাজিরার প্রতিবেদক স্টেফানি ডেকার জানিয়েছেন, অস্ত্রবিরতির সময় বাড়ানোর
বিষয়ে হামাস ও ইসরাইলের মধ্যে কোনো চুক্তির খবর পাওয়া যায়নি।
যেভাবে
হামলার শুরু : ইসরাইলি তিন কিশোরকে অপহরণ ও হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ৮
জুলাই থেকে ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে হামলা চালিয়ে আসছে ইসরাইল। হামাসই ওই ঘটনা
ঘটায় বলে দাবি করে ইসরাইল। তবে হামাস তা অস্বীকার করে। পরে ফিলিস্তিনি এক
কিশোরকে একইভাবে হত্যা ও অপহরণের পর উত্তেজনা নতুন মাত্রা পায়। এরপর গাজা
থেকে রকেট ছোড়া হচ্ছে এমন দাবি তুলে ‘অপারেশন প্রটেক্টিভ এজ’ নামে এ হামলা
শুরু করে ইসরাইল। এর আগে ২০১২ সালের নভেম্বরে গাজায় অভিযান চালায় ইসরাইল।
তখন আট দিনের মাথায় মিসরের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়। ১৯৪৮ সালে
ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে ইহুদিদের জন্য ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর থেকেই
স্বাধীন রাষ্ট্রের দাবিতে ফিলিস্তিনিদের সংগ্রামের শুরু। এরপর থেকে নিয়মিত
রক্ত ঝরলেও আজও তাদের সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি।
Comments[ 0 ]
Post a Comment