Monday, July 28, 2014

পথে বিস্তর ভোগান্তি তবু ঘরে ফেরার আনন্দ

ঈদে সীমাহীন ভোগান্তি ও ঝুঁকির মধ্যে গন্তব্যে গেছেন শেষ সময়ের যাত্রীরা। শিল্প-কারখানা ও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ঈদের আগে শেষ কর্মদিবস শেষে রোববার বাস, ট্রেন ও লঞ্চ টার্মিনালে জনসে াত নামে। কাক্সিক্ষত যানবাহন না পাওয়া, যানজটসহ নানা ভোগান্তির শিকার হন এসব ঘরমুখো মানুষ। ঢাকায় বাস ও ট্রেনের সিডিউলে বিপর্যয় নেমে আসে। একই সঙ্গে দেখা দেয় পরিবহন সংকট। কাক্সিক্ষত যানবাহন পেতে যাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছে। বাধ্য হয়ে অসংখ্য মানুষ বৃষ্টি মৌসুমে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাস, ট্রেন ও লঞ্চের ছাদে চড়ে হাজার হাজার মানুষ ঢাকা ছেড়েছেন। কেউ কেউ বেছে নিয়েছেন বিকল্প পথ। অপরদিকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন নৌপথের যাত্রীদের। পথিমধ্যে যাত্রীবোঝাই একটি লঞ্চের তলা ফেটে গেলেও অল্পের জন্য দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পেয়েছেন প্রায় আড়াই হাজার যাত্রী। অপর এক লঞ্চের ইঞ্জিন মাঝপথে নষ্ট হয়ে ঝুঁকিতে পড়েন যাত্রীরা। ঢাকার বাস, ট্রেন ও লঞ্চ টার্মিনাল ঘুরে জনভোগান্তির নানা চিত্র দেখা গেছে। ঈদে বিপুলসংখ্যক মানুষ বিভিন্ন গন্তব্যে চলে যাওয়ায় ফাঁকা হতে শুরু করেছে ঢাকা।

পরিবহন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, রাতে বৃষ্টির কারণে শ্লথগতিতে বাস চলেছে। অনেক স্থানে দেখা দিয়েছে যানজট। এ কারণে অনেক বাস নির্ধারিত সময়ে ঢাকায় ঢুকতে পারেনি। এসব কারণে গণপরিবহনের সিডিউল ভেঙে পড়েছে। এছাড়া পোশাক ও শিল্প-কারখানা এবং সরকারি-বেসরকারি অফিস রোববার একযোগে বন্ধ হওয়ার পর যাত্রীদের ঢল নামে। এত সংখ্যক যাত্রী একই সঙ্গে সুষ্ঠুভাবে পরিবহনের সামর্থ্য গণপরিবহনের নেই। এ কারণেই ভোগান্তির শিকার যাত্রীরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। ক্ষুব্ধ যাত্রীরা ৫-৭টি লঞ্চে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করেছে। মারধর করেছে বাস শ্রমিকদের।
রাজধানীর বাস, ট্রেন ও লঞ্চ টার্মিনাল ঘুরে দেখা গেছে, ঈদের আনন্দ প্রিয়জনের সঙ্গে উপভোগ করতে শেষ মুহুর্তের বাড়ি ফেরা মানুষের ঢল নেমেছে। সব দুর্ভোগ-বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে শিকড়ের টানে ছুটছেন তারা। হাত-কাঁধে ব্যাগ-লাগেজ নিয়ে কাক্সিক্ষত যানে ওঠার প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছেন তারা। কেউ সফল হয়েছেন, আবার অনেকেই বিফল। ঈদযাত্রীদের পদচারণায় টার্মিনালগুলোর কোথাও যেন একটু ফাঁকা নেই। সর্বত্র টুইটম্বুর। যে যেভাবে সুযোগ পেয়েছেন সেভাবে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে বাস ও লঞ্চের মালিক-শ্রমিকরা বাড়তি ভাড়া নেয়ার প্রতিযোগিতায় নামেন। অতিরিক্ত আয়ের আশায় ঝুঁকি নিয়ে ছাদে যাত্রী বহন করেছেন। যাত্রীদের অভিযোগ, ভিড়ের মাঝে পকেটমার, লাগেজ পার্টির তৎপরতা বেড়ে গেছে। অনেকেই মোবাইল, মানিব্যাগ ও ব্যাগ খুইয়েছেন।
বাসের সিডিউল বিপর্যয় : যাত্রীর চাপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভেঙে পড়ে বাসের নির্ধারিত সিডিউল। রোববার বেশির ভাগ বাস নির্ধারিত সময়ের চেয়ে ১ থেকে ৫ ঘণ্টা পর্যন্ত দেরিতে ছেড়ে গেছে। বাস কাউন্টারগুলোতে শত শত মানুষের দীর্ঘ অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। বিশেষ করে শিশু ও নারীরা বেশি সমস্যায় পড়েন। বাসের সিডিউল ভেঙে পড়ার কারণ জানতে চাইলে পরিবহন শ্রমিকরা জানান, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়ায় ফেরি রুটে শনিবার রাতে বৈরী আবহাওয়ার কারণে ফেরির চলাচলে সমস্যা হয়। বাস পারাপারে অতিরিক্ত সময় লাগছে। এসব কারণ ছাড়াও পথে যানজটের কারণে নির্ধারিত সময়ে ঢাকায় বাস ঢুকতে পারছে না। বরিশালগামী যাত্রী ওহিদুজ্জামান জানান, সাকুরা পরিবহনের বাস ৭টায় ছাড়ার কথা থাকলেও ১০টা পর্যন্ত ওই গাড়ি গাবতলী আসেনি। সিলেটগামী যাত্রী মোঃ হাবিবুর রহমান জানান, সোহাগ পরিবহনের টিকিট আগে সংগ্রহ করেছেন। সকাল ৭টার গাড়ি ১০টা পর্যন্ত কাউন্টারে আসেনি। কখন গাড়িটি ছেড়ে যাবে তা তিনি জানেন না।
বাস-ট্রাকের ছাদে চড়ে বাড়ি ফেরা : রাজধানী থেকে বিভিন্ন দূরপাল্লার রুটে বাসের ছাদ ও ট্রাকে চড়ে গন্তব্যে গেছেন অনেক যাত্রী। আগাম টিকিট সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হওয়া এবং নিু আয়ের মানুষ মূলত এসব যানবাহনে চড়েছেন। ঢাকা থেকে রাজশাহী, সৈয়দপুর, দিনাজপুর, রংপুর, দাউদকান্দি, কিশোরগঞ্জ, জামালপুর, নরসিংদীসহ বিভিন্ন রুটের বাসের ভেতর দাঁড়িয়ে ও ছাদে চড়ে যেতে দেখা গেছে। গাড়ির নির্ধারিত সিটের বাইরে হাঁটার পথে মোড়া ও ইঞ্জিন কভারের ওপর যাত্রী নেয়া হয়েছে। নিু আয়ের মানুষরা জানান, জীবনের ঝুঁকি জেনেও কম ভাড়ায় গন্তব্যে যাচ্ছেন তারা।
এদিকে ঈদে যাত্রীদের চাপ বেড়ে যাওয়ায় বাস মালিকরা ঢাকার ভেতরে চলাচলকারী সিটি সার্ভিস ও দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে চলাচল করে এমন বাস ঢাকা থেকে দূরপাল্লার রুটে যাত্রী নিয়ে গেছে। এসব বাস পথিমধ্যে নষ্ট হয়ে সড়কে যানজটের সৃষ্টি করে- পুলিশের কাছে এমন তথ্য থাকা সত্ত্বেও চলাচলের সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে সায়েদাবাদ থেকে কিশোরগঞ্জ, ভৈরব, দাউদকান্দি, মহাখালী থেকে ময়মনসিংহ, জামালপুর, গাবতলী থেকে পাবনা, রাজশাহীসহ বেশ কিছু রুটে পুরনো ভাঙাচোরা বাস ছেড়ে গেছে।
নৌপথে ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রা : বৃষ্টি মৌসুমে নদী উত্তাল, বেড়েছে পানিপ্রবাহ। এ পরিস্থিতিতে অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে ঢাকা ছেড়েছে ৪১ রুটের লঞ্চ। প্রতিটি লঞ্চের ছাদে বহন করা হয়েছে। নদীর মাঝপথে নৌকা থেকে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় যাত্রী তোলা হয়েছে। রোববার ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া সুন্দরবন, সুরভী, কীর্তনখোলা, দ্বীপরাজ, পারাবতসহ অন্য সবগুলো লঞ্চই ছাদে যাত্রী নিয়ে গেছে। নৌপথে দক্ষিণাঞ্চলগামী যাত্রীদের যাওয়ার অন্যতম স্থান ঢাকা নদীবন্দরে (সদরঘাট) সকাল থেকে মানুষের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। পন্টুনে আসামাত্রই লঞ্চগুলোতে মানুষ হুমড়ি খেয়ে যাত্রীদের উঠতে দেখা যায়। অল্পসংখ্যক লোক কেবিন ও সোফার আগাম টিকিট সংগ্রহ করতে পেরেছেন। এর বাইরে বিশালসংখ্যক যাত্রী লঞ্চের পাটাতনে (ডেকে) আসন পেতে যাওয়ার চেষ্টা করেন। যারা ডেকে জায়গা পাননি তারা লঞ্চের ছাদে চড়েই গন্তব্যে রওনা হন। সদরঘাট ঘুরে দেখা গেছে, দুপুর থেকেই বেশির ভাগ লঞ্চ যাত্রীতে টইটম্বুর। কোথাও যাত্রীদের বসার জায়গা নেই। এমনকি কেবিনের সামনের রাস্তায় মানুষ বসে আছে। রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে অনেকে। তবুও আরও বেশি যাত্রী নেয়ার আশায় এসব লঞ্চ ছাড়েননি মালিকরা। এ নিয়ে অনেক যাত্রী প্রতিবাদ ও হৈচৈ করলে লঞ্চের কর্মচারী ও ঘাট শ্রমিকরা তাদের ভয়ভীতি দেখিয়ে চুপ থাকতে বাধ্য করছে। এসব ঘটনায় ক্ষুব্ধ যাত্রীরা ৫-৭টি লঞ্চে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে। অতিরিক্ত পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। লঞ্চ মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ নৌচলাচল সংস্থার সভাপতি মাহবুব উদ্দিন বীরবিক্রম বলেন, গার্মেন্টের কিছু উৎচ্ছৃখল শ্রমিক তাড়াতাড়ি লঞ্চ ছাড়তে বাধ্য করার কৌশল হিসেবে হামলা চালিয়েছে।
বিকল্প পথে বাড়ি ফেরা : গণপরিবহনের সঙ্কট থাকায় বিকল্প পথে গন্তব্যে গেছেন অনেকে। মাইক্রোবাস, ট্যাক্সিক্যাব ও লোকাল বাস রিজার্ভ করে গেছেন অনেকেই। আবার কেউ কেউ ব্যক্তিগত গাড়িতে বাড়ি গেছেন।

যুদ্ধবিরতি শেষ না হতেই গাজায় ফের হামলা

২৪ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতির সময় শেষ না হতেই আবারও গাজায় ভয়াবহ হামলা শুরু করেছে ইসরাইল। স্থলবাহিনীর ট্যাংকের গোলা নিক্ষেপের পাশাপাশি অব্যাহত আছে বিমান, স্থল ও নৌ হামলা। মানবিক অস্ত্রবিরতি প্রত্যাখ্যান করে হামাস রকেট হামলা চালিয়ে যাচ্ছে অভিযোগ করে রোববার সকালে এক বিবৃতিতে পুনরায় হামলা শুরু করার ঘোষণা দেয় ইসরাইল। এর আগে শনিবার ১২ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতি সফলভাবে শেষ হওয়ার পর জাতিসংঘের অনুরোধে বিরতি আরও ১২ ঘণ্টা বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছিল ইসরাইলি মন্ত্রিসভা। তবে রোববার দুপুরে হামাস ঘোষণা করে ঈদ উপলক্ষে তারা ২৪ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতিতে রাজি। যদিও তাৎক্ষণিকভাবে ইসরাইলের তরফ থেকে এর কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। এদিকে গাজায় লাশের মিছিল ক্রমেই দীর্ঘ হচ্ছে। গত ২০ দিনে নিহত হয়েছেন ১০৫০ জন ফিলিস্তিনি। আহত হয়েছেন প্রায় সাড়ে ছয় হাজার। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা জানিয়েছে, ইতিমধ্যে প্রায় দেড় লাখ গাজাবাসী বাড়িঘর হারিয়েছেন। বিবিসি, আলজাজিরা ও এএফপিসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের পাঠানো খবর।

রোবাবর সকালে ইসরাইলি হামলায় তিন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গাজার জরুরি বিভাগের মুখপাত্র আশরাফ আল কুদার বলেন, সেন্ট্রাল গাজার নিকটবর্তী সীমান্তের কাছে ট্যাংকের গোলার আঘাতে দুজন নিহত হন। এছাড়া খান ইউনিস শহরে বোমা হামলায় অন্যজন নিহত হয়েছেন। পরবর্তীকালে আরও বেশ কয়েকটি হামলায় নিহতের সংখ্যা বাড়তে থাকে। শনিবার ১২ ঘণ্টা যুদ্ধবিরতির পর রোববার রাতে জাতিসংঘের অনুরোধে আরও ১২ ঘণ্টার বিরতিতে সম্মত হয় ইসরাইল। তবে কয়েক ঘণ্টা যেতে না যেতেই ইসরাইলি সেনারা এক বিবৃতিতে জানায়, হামাস যুদ্ধবিরতি প্রত্যাখ্যান করে রকেট হামলা অব্যাহত রাখায় তারাও পুনরায় গাজায় হামলা শুরু করতে যাচ্ছে। রোববার সকালে হামাসের ছোড়া কমপক্ষে ৫টি রকেট ইসরাইলের ভূখণ্ডে আঘাত করেছে বলে অভিযোগ করে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী। গাজার বাসিন্দারা জানান, ঘোষণার কিছুক্ষণ পরই গাজা উপত্যকায় আগের মতো গোলাবর্ষণের শব্দ শোনা গেছে। এএফপির খবরে বলা হয়, বর্ধিত ১২ ঘণ্টার মধ্যে ১০ ঘণ্টা যেতেই গাজায় হামলা শুরু করে ইসরাইল।
অপরদিকে যুদ্ধবিরতির সময়টিকে নতুন হামলা চালানোর প্রস্তুতি হিসেবে ব্যবহার করেছে ইসরাইল- এই অভিযোগ করে ইসরাইলি সেনারা গাজা ছেড়ে না যাওয়া পর্যন্ত নতুন কোনো যুদ্ধবিরতি মানবে না বলে জানিয়েছে হামাস। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ৮ জুলাই থেকে গাজায় শুরু হওয়া ইসরাইলের প্রায় একতরফা বর্বর হামলায় এক হাজার ৫০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন সাড়ে ছয় হাজার। বাস্তুচ্যুত হয়েছেন প্রায় দেড় লাখ মানুষ। হতাহতদের বেশির ভাগই বেসামরিক নাগরিক। তাদের মধ্যে অনেক নারী ও শিশু রয়েছে। বাড়ি-ঘর ছেড়েছেন প্রায় এক লাখ ৮০ হাজার ফিলিস্তিনি। অন্যদিকে ইসরাইল দাবি করেছে, হামাসের হামলায় তাদের তিন বেসামরিক নাগরিক ও ৪৩ সেনা নিহত হয়েছেন।
২৪ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতিতে রাজি হামাস : শনিবার রাতে জাতিসংঘের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে সাড়া না দিলেও রোববার বিকালে হামাস মুখপাত্র সামি আবু জুহরি জানান, পবিত্র ঈদ উপলক্ষে তারা ২৪ ঘণ্টার মানবিক যুদ্ধবিরতিতে রাজি। তিনি জানান, স্থানীয় সময় রোববার বেলা ২টা থেকে যুদ্ধবিরতিতে তারা সম্মত। তবে তাৎক্ষণিকভাবে ইসরাইলের পক্ষ থেকে এর কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। গাজার আলজাজিরার প্রতিবেদক স্টেফানি ডেকার জানিয়েছেন, অস্ত্রবিরতির সময় বাড়ানোর বিষয়ে হামাস ও ইসরাইলের মধ্যে কোনো চুক্তির খবর পাওয়া যায়নি।
যেভাবে হামলার শুরু : ইসরাইলি তিন কিশোরকে অপহরণ ও হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ৮ জুলাই থেকে ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে হামলা চালিয়ে আসছে ইসরাইল। হামাসই ওই ঘটনা ঘটায় বলে দাবি করে ইসরাইল। তবে হামাস তা অস্বীকার করে। পরে ফিলিস্তিনি এক কিশোরকে একইভাবে হত্যা ও অপহরণের পর উত্তেজনা নতুন মাত্রা পায়। এরপর গাজা থেকে রকেট ছোড়া হচ্ছে এমন দাবি তুলে ‘অপারেশন প্রটেক্টিভ এজ’ নামে এ হামলা শুরু করে ইসরাইল। এর আগে ২০১২ সালের নভেম্বরে গাজায় অভিযান চালায় ইসরাইল। তখন আট দিনের মাথায় মিসরের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়। ১৯৪৮ সালে ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে ইহুদিদের জন্য ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর থেকেই স্বাধীন রাষ্ট্রের দাবিতে ফিলিস্তিনিদের সংগ্রামের শুরু। এরপর থেকে নিয়মিত রক্ত ঝরলেও আজও তাদের সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি।

Sunday, July 27, 2014

কুতুবদিয়া দ্বীপ রক্ষায় প্রধানমন্ত্রী সব কিছু করবেন: সাংসদ আশেক উল্লাহ রফিক

কক্সবাজারের কুতুবদিয়ায় বিলীন হয়ে যাওয়া সাড়ে ৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ প্রাথমিক ভাবে সংষ্কার করা হবে আগামি অমাবশ্যার আগে। বর্ষার পরেই স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু হবে। ইতোমধ্যেই কুতুবদিয়ায় স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড ৫১ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। ২৪ জুলাই বৃহস্পতিবার গত পূর্ণিমার জোয়ারে কুতুদিয়ায় বিলীন হয়ে যাওয়া বেড়িবাঁধ পরিদর্শন ও উপজেলার আইন শৃংখলা বিষয়ক সভায় মহেশখালী-কুতুবদিয়ার সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক এ কথা বলেন।

এ সময় কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ রুহুল আমিন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান নির্বাহী এম. শফিকুল হক উপস্থিত ছিলেন। ২৪ জুলাই বৃহস্পতিবার দিনব্যাপী কুতুবদিয়ায় বিভিন্ন কর্মসূচীতে অংশ নেন তিনি। বেড়ীবাঁধ পরিদর্শন শেষে নেতৃবৃন্দ হজরত আবদুল মালেক শাহ (রাঃ) মাজার জিয়ারত করেন। পরে কুতুবদিয়া কলেজের ভবন নির্মাণ কাজ পরিদর্শন শেষে উপজেলার আইন শৃংখলা বিষয়ক সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন এমপি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এম মমিনুর রশিদের সভাপতিত্বে অনুষ্টিত সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, জেলা প্রশাসক মোঃ রুহুল আমিন। আরো বক্তব্য রাখেন, উপজেলা চেয়ারম্যান এটিএম নুরুল বশর চৌধুরী, পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান নির্বাহী, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির হায়দার, ভাইস চেয়ারম্যান মেহেরুন্নেছা ও কুতুবদিয়া থানার ওসি আলতাজ হোসেন। এ সয়ম উপস্থিত ছিলেন,উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছৈয়দ আহমদ কুতুবী, সাধারণ সম্পাদক নুরুচ্ছফা বিকম, চেয়ারম্যান সিরাজদৌল্লাহ, চেয়ারম্যান আজমগীর মাতব্বর,চেয়ারম্যান শাকের উল্লাহ,চেয়ারম্যান ফিরোজ খান ও চেয়ারম্যান আলা উদ্দিন আল আজাদ।

সভায় আশেক উল্লাহ রফিক বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার উন্নয়নে বিশ্বাসী। কুতুবদিয়ায় কাজ করে তা প্রমান করতে চাই। তিনি ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে বলেন, চিন্তার কোন কারণ নাই। আপনাদের পাশে রয়েছেন গণমানুষের নেত্রী শেখ হাসিনা। আগামি ১৫/২০ দিনের মধ্যে বেড়িবাঁধের ভাঙ্গা অংশ দিয়ে জোয়ারের পানি প্রবেশ বন্ধ করতে যা করণীয় তা করার নির্দেশ দিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডকে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোঃ রুহুল আমিন বলেন আপনাদের চিন্তার কোন কারণ নেই। আমরা সব সময় আপনাদের পাশে আছি। কুতুবদিয়ার উন্নয়নের জন্য ইতোমধ্যে মাস্টারপ্লান তৈরী করা হয়েছে। তা আগামিতে বাস্তবায়ন শুরু হবে।

Saturday, July 26, 2014

ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রা হলেও বাড়ির পথে নির্বিঘ্ন যাত্রা

বাড়ি যাওয়ার আনন্দ ছিল সবার চোখেমুখে। পথের শঙ্কা হয়তো ছিল মনের ভেতরে, কিন্তু চেহারায় তার ছাপ দেখা যায়নি। শেষ পর্যন্ত স্বস্তিদায়কই ছিল গতকালের যাত্রা। বাসের যাত্রীদের যানজটে পড়তে হয়নি। বেশির ভাগ ট্রেনই সময়মতো ছেড়েছে। লঞ্চও ছেড়েছে ঠিকঠাক। তবে টিকিটের জন্য হাহাকার ছিল। বাড়তি ভাড়া আর কালোবাজারি কষ্ট ছিল যথারীতি।

>>ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রা হলেও হাসিমুখেই তা মেনে নিয়েছেন ট্রেনের বগিতে জায়গা না পাওয়া এই যাত্রীরা। নিষেধ অমান্য করে ছাদে উঠেছেন তাঁরা। দুর্ঘটনার শঙ্কা থাকলেও নিরাপদেই বাড়ি ফিরবেন—এমন আশা নিয়েই গতকাল রাজধানী ছেড়েছেন তাঁরা। ছবিটি টঙ্গী রেলস্টেশন থেকে তোলা: প্রথম আলো
এবারের ঈদযাত্রা শুরু হয়ে গেছে গত বৃহস্পতিবারই। সে অর্থে গতকাল ছিল ঈদযাত্রার দ্বিতীয় দিন। তবে জুমাতুল বিদা ও শবে কদরের কারণে গতকাল শুক্রবার অনেক যাত্রী হয়তো যাত্রা করেনি। তাই অস্বাভাবিক জনস্রোত ছিল না। বিপণিবিতানকেন্দ্রিক যান-জটলা বাদ দিলে রাজধানীর রাস্তাঘাট ছিল মোটামুটি ফাঁকা। ভিড় ছিল কেবল গাবতলী, মহাখালী ও সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল, কমলাপুর রেলস্টেশন এবং সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে।
মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে উত্তরবঙ্গে চলা শাহ ফতেহ আলী পরিবহনের কর্মী নুরুল ইসলাম বলেন, শবে কদরের রাতের পরের দিন ভিড় বেশি থাকে। এ ছাড়া পোশাক কারখানার কর্মীরাও শনিবার (আজ) থেকে যাত্রা শুরু করবেন। সে হিসেবে শনিবার মানুষের চাপ বেড়ে যাবে।
যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা, পুলিশ ও পরিবহনের মালিকদের সঙ্গে আলাপ করে ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন হওয়ার কয়েকটি কারণের কথা জানা গেছে। এগুলো হচ্ছে: বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) ও পুলিশের বিশেষ দল টার্মিনালগুলোতে সক্রিয় ছিল। তৎপর ছিল হাইওয়ে পুলিশও। আর ছিল ঈদের আগে ও পরে পাঁচ দিন ট্রাক চলাচল নিয়ন্ত্রণের প্রভাব। সড়ক-মহাসড়কের খানাখন্দ মেরামতের কাজ গতকালও চলছিল।
গতকাল বেলা ১১টার দিকে কল্যাণপুর থেকে বগুড়া যাওয়ার জন্য এসআর পরিবহনের একটি বাসে ওঠার সময় কথা হয় যাত্রী রফিকুল ইসলামের সঙ্গে। পরে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, পথে টুকটাক যানজট বাদ দিলে নির্বিঘ্নেই বগুড়ায় পৌঁছান সাড়ে চারটার দিকে।
কমলাপুর স্টেশন থেকে চট্টগ্রাম ও সিলেট পথের যেসব ট্রেন ছেড়ে গেছে সেগুলোতে যাত্রীদের ভিড় থাকলেও তা উপচে পড়া ছিল না। তবে সকালে উত্তরবঙ্গের তিস্তা এক্সপ্রেসে যাত্রীদের ব্যাপক ভিড় দেখা গেছে। রাতে উত্তরবঙ্গের দ্রুতযান ও লালমনি এক্সপ্রেসেও যাত্রীদের দাঁড়িয়ে যেতে দেখা গেছে। এ দুটি ট্রেনে বিমানবন্দর থেকে অনেক যাত্রী ছাদেও চড়ে বসে।
রেলের মহাপরিচালক তাফাজ্জল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল রাত ১০টা পর্যন্ত কমলাপুর স্টেশন থেকে ৫৪টি ট্রেন ছেড়ে যায়। এর মধ্যে খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস ও নোয়াখালীমুখী উপকূল এক্সপ্রেস ট্রেন দুটি এক ঘণ্টা ২০ মিনিট করে দেরিতে যায়। বাকি সবগুলোই সময়মতো ছেড়েছে।
রাত-দিন মিলিয়ে কমলাপুর থেকে ৬৬টি ট্রেন ছেড়ে যাওয়ার কথা। এসব ট্রেনের আসনসংখ্যা আছে প্রায় ৬০ হাজার। ঈদে দাঁড়িয়েও প্রচুর যাত্রী ভ্রমণ করে।
রেলের মহাপরিচালক বলেন, শুক্রবার যাত্রীর চাপ তুলনামূলক কম ছিল। পোশাক কারখানার শ্রমিকদের চাপ বেড়ে যাবে ঈদের আগের দুই দিন। আজ শনিবার থেকে দিনাজপুরের পার্বতীপুর ও খুলনাসহ কয়েকটি পথে বিশেষ ট্রেন চলানো হবে বলে জানান তিনি।
টিকিট না কাটার বিড়ম্বনা: ঢাকায় রাজমিস্ত্রির কাজ করেন সেলিম, ওবায়দুল্লাহ, রাকিবসহ একই এলাকার আটজন। যাবেন নওগাঁর সাপাহার। কিন্তু আগে থেকে টিকিট কাটা নেই বলে পড়েন বিড়ম্বনায়।
এই আট রাজমিস্ত্রির সঙ্গে কল্যাণপুরে এই প্রতিবেদকের কথা হয় গতকাল বেলা তিনটার দিকে, হানিফ পরিবহনের কাউন্টারের সামনে। সবার বয়স ১৮ থেকে ৩০-এর মধ্যে। হাতে ব্যাগ, আছে রাজমিস্ত্রির কাজের কিছু যন্ত্রপাতিও। সেলিম বলেন, পুরো কল্যাণপুর ঘুরে তিন-চারটার বেশি টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু সবাই একসঙ্গে যাবেন বলে ঠিক করেছেন।
এরই মধ্যে রাকিব বলে ওঠেন, ‘চল, সবাই কমলাপুর স্টেশনে যাই। ট্রেনে বাড়ি যাব।’ কিন্তু এতে অন্যরা সায় দেননি। কারণ, ট্রেনের টিকিট পাওয়া আরও কঠিন। এর মধ্যে রাকিব প্রস্তাব করেন মহাখালী বাস টার্মিনালে যাবেন। সেখান থেকে একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে।
এই প্রতিবেদক বিকেল পাঁচটার দিকে মহাখালী টার্মিনালে গেলে সেখানেও এই আট যুবকের সঙ্গে দেখা হয়। টিকিট জোগাড় হয়েছে কি না, জানতে চাইলে শুকনো মুখে সেলিম বলেন, ‘না, তবে রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করব।’
কিছুক্ষণ আলাপ করার পর সেলিম জানান, রাজমিস্ত্রির কাজ করলেও তাঁদের আটজনই কিছুটা পড়ালেখা জানা। পরিবারও একেবারে অসচ্ছল নয়। তাই গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে যাওয়ার মতো মানসিকতা নেই। অপেক্ষা করে হলেও একটু ভালো আসন নিয়ে যেতে চান। কাজের চাপের কারণে আগে এসে টিকিট কাটতে পারেননি।
আগে থেকে টিকিট না কাটা এমন অনেককেই গাবতলী, কল্যাণপুর ও মহাখালীর বিভিন্ন বাস কোম্পানির কাউন্টারে ছোটাছুটি করতে দেখা গেছে। আবার যানজটের আশঙ্কা নিয়ে অনেকে আগেভাগে বাসা থেকে বের হয়ে স্টেশনে এসে বিড়ম্বনায় পড়েন, বসে থাকতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা।
বিকেল চারটার দিকে গাবতলী টার্মিনালের উল্টো দিকে হানিফ পরিবহনের নিজস্ব টার্মিনালে বসে পত্রিকা পড়ছিলেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মাহিদুল ইসলাম। যাবেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ। তিনি জানান, নারায়ণগঞ্জ থেকে বেলা একটায় রওনা দিয়ে গাবতলী পৌঁছে যান সাড়ে তিনটায়। কিন্তু তাঁর বাস ছাড়ার কথা সন্ধ্যা সাতটায়। তাই পত্রিকা পড়ে সময় কাটাচ্ছেন। মুহিত বলেন, অন্যবার যানজটের কারণে সময়মতো টার্মিনালে পৌঁছাতে পারেননি। এ জন্যই আগেভাগে রওনা দিয়েছিলেন। মাহিদুল অভিযোগ করেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে যাওয়ার জন্য তাঁকে ৮৫০ টাকা ভাড়া গুনতে হয়েছে। স্বাভাবিক সময়ে এই পথে ভাড়া ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা।
মাছ ব্যবসায়ী ইয়াকুব আলী আকন্দ ও পোশাক কারখানার কর্মী রাজিয়া বেগম গাবতলী টার্মিনালে বসা দুপুর থেকে। তাঁরা জানান, দুই ছেলেকে বরগুনার বাসে তুলে দিতে এসেছেন। অগ্রিম টিকিট ছিল না। টার্মিনালে এসে সোনার তরী পরিবহনের রাত সাড়ে আটটার বাসে টিকিট পেয়েছেন। প্রতিটির দাম ৬০০ টাকা। অন্য সময় ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকায় যাওয়া যেত। ইয়াকুব আলী ও রাজিয়া বলেন, তাঁরা সাভারের ফুলবাড়িয়ায় থাকেন। ছেলেদের বাসে তুলে দিয়েই বাসায় ফিরবেন।
কল্যাণপুরের শ্যামলী পরিবহনের কাউন্টার থেকে বিকেল সোয়া তিনটায় দুই সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে বাসে রংপুরের গাড়িতে চড়েন ফরিদুল হক। তিনি বলেন, অনেক শঙ্কা ছিল যানজটের। কিন্তু কাউন্টারে এসে জানতে পারেন সময়মতোই বাস ছেড়ে যাবে। রাত ১০টার দিকে মুঠোফোনে ফরিদুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, ততক্ষণে বাড়িতে পৌঁছে গেছেন। যাত্রাটি আনন্দেরই ছিল বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ফেরিতে জট: প্রথম আলোর মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, বৃহস্পতিবার রাত ও ভোরে ছেড়ে যাওয়া দক্ষিণবঙ্গের বাসের অনেকগুলোই মাওয়া ফেরিঘাটে আটকা পড়ে।

>>প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ উদ্‌যাপন করতে রাজধানী ছাড়ছে মানুষ। গতকাল সকাল থেকে ঘরমুখী মানুষের স্রোত দেখা গেছে বাস, ট্রেন ও লঞ্চ টার্মিনালে। লঞ্চে করে মানুষের রাজধানী ছেড়ে যাওয়ার এই দৃশ্য পোস্তগোলা ব্রিজের ওপর থেকে তোলা l ছবি: সাজিদ হোসেন
মাওয়া ঘাট সূত্রে জানা যায়, মাওয়া-কাওড়াকান্দি নৌরুটে উজানের তীব্র স্রোত ও ঘাট এলাকার উল্টো পানির স্রোতের কারণে কয়েক দিন ধরেই ফেরি চলাচল কিছুটা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এর মধ্যে শুক্রবার সকালে ব্যক্তিগত গাড়িসহ যাত্রীবাহী বাসের চাপ বেড়ে গেলে জট লেগে যায় ঘাটে। অবশ্য বেলা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে জট কমতে থাকে। সন্ধ্যার দিকে আবারও যানবাহনের চাপ বেড়ে যায়।
মাওয়া-কাওড়াকান্দি নৌরুটে লঞ্চেও যাত্রীদের ভিড় দেখা গেছে। অনেক লঞ্চে ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী নিতে দেখা যায়। এ পথের লঞ্চগুলোর ধারণক্ষমতা ৮৫ থেকে সর্বোচ্চ ১৯৮ হলেও ২০০-৩০০ পর্যন্ত যাত্রী বহন করে। সিবোটে বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘাটে পিরোজপুরের সোলেমান দেওয়ান বলেন, সরাসরি যাওয়ার বাসের টিকিট না পেয়ে ভেঙে ভেঙে মাওয়ায় এসেছেন। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল কর্তৃপক্ষের মাওয়া ঘাটের ব্যবস্থাপক সিরাজুল হক বলেন, সোমবার আরও ভিড় বাড়তে পারে। এটা সামাল দেওয়ার জন্য তাঁদের প্রস্তুতি আছে।
লঞ্চযাত্রীদের ভিড়: দক্ষিণের জেলাগুলোর মানুষ রাতের লঞ্চে ওঠার জন্য গতকাল সকাল থেকেই সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে জড়ো হতে শুরু করে। সেখানে পটুয়াখালীর আমিন হোসেন বলেন, সকাল ১০টায় এসে ডেকের টিকিট পেয়েছেন। তবে বসার ভালো জায়গা হয়নি। ব্যাংক কর্মকর্তা জালাল মোল্লা ক্ষোভ প্রকাশ করেন টার্মিনাল এলাকায় হকারদের উৎপাতের বিষয়ে। তিনি বলেন, অন্তত ঈদ মৌসুমে টার্মিনাল থেকে হকার উচ্ছেদ করার দরকার ছিল। নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের যুগ্ম পরিচালক সাইফুল হক খান বলেন, যাত্রীদের হয়রানি ও লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী এবং মালামাল বহন রোধে ভ্রাম্যমাণ আদালত সদরঘাট টার্মিনাল এলাকায় অভিযান চালাচ্ছেন।

Tuesday, July 22, 2014

প্রাণভয়ে ভারতে কলকাতায় পালিয়ে আসি : নূর হোসেন

নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেন দাবি করেছেন, তার জীবনের সংশয় থাকায় তিনি বাংলাদেশ থেকে কলকাতায় চলে এসেছেন। সোমবার পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বারাসাতের মুখ্য বিচার বিভাগীয় হাকিমের আদালত প্রাঙ্গণে প্রিজন ভ্যান থেকে নামার পর সাংবাদিকদের কাছে নূর হোসেন এমনটাই দাবি করেন। আজ স্থানীয় সময় বেলা দুইটায় নূর হোসেন ও তার দুই সঙ্গী ওহিদুর রহমান ও খান জামানকে ফের আদালতে তোলার কথা রয়েছে।

নূর হোসেন বলেন, “আমি পালিয়ে না এলে যারা এই ধরনের হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে তারা আমাকে প্রাণে মেরে ফেলত। সেই কারণেই আমি বাংলাদেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছি।”
কারা এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত তা বলতে অস্বীকার করেন নূর হোসেন। তিনি বলেন, “আমি জানি না কারা এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। তদন্তকারী সংস্থা খতিয়ে দেখছে, আপনারাও তাদের সহযোগিতা করুন।”
ছয় কোটি টাকা লেনদেন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট তদন্ত করুক তাহলেই আসল সত্য প্রকাশ পাবে।”
তিনি আরো বলেন, “আগামী সপ্তাহেই বাংলাদেশ থেকে তার পরিবারের লোকজনেরা আসছে। তারপর তাদের সঙ্গে কথা বলেই আইনজীবী যা করার করবেন।”
প্রসঙ্গত, গত ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম ও আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজনের অপহরণ ও খুনের ঘটনায় প্রধান আসামি নূর হোসেন ও তার দুই সহযোগীকেও গত ১৪ জুন কলকাতার নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসংলগ্ন এলাকা কৈখালির একটি বহুতল আবাসন থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে অধৈভাবে ভারতে অনুপ্রবেশের দায়ে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৪ বিদেশি নাগরিক আইন (ফরেনারস অ্যাক্ট) লঙ্ঘনের অভিযোগ দায়ের করা হয়। পরদিন ১৫ জুন নূর হোসেন ও তার দুই সহযোগী ওহিদুর জামান ও খান সুমনকে বারাসাতের আদালতে তোলা হয়। তাদের প্রত্যেকের আট দিনের পুলিশ রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। রিমান্ড শেষে গত ২৩ জুন তাদের ফের আদালতে তোলা হয়। মুখ্য বিচার বিভাগীয় হাকিম মধুমিতা রায় ওই তিনজনকে ১৪ দিনের জেল হেফাজতে দিয়ে দমদম কেন্দ্রয় কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। ৭ জুলাই তাদের আদালতে তোলা হলে আদালত তাদের ফের ১৪ দিনের জেল হেফাজত দিয়ে দমদম কারাগারে পাঠান।
গত ২৭ এপ্রিল দুপুরে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড থেকে অপহৃত হন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র ও কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজন। এর তিন দিন পর ৩০ এপ্রিল শীতলক্ষ্যায় একে একে ভেসে ওঠে সাতজনের মরদেহ। এই সাতজন হলেন এক গাড়িতে থাকা কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, তার সঙ্গী তাজুল ইসলাম, মনিরুজ্জামান স্বপন, লিটন ও তাঁর গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম এবং আরেকটি গাড়িতে থাকা আইনজীবী চন্দন সরকার ও তার গাড়িচালক ইব্রাহিম। এ ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ৪ নম্বর ওয়াডের্র কাউন্সিলর নূর হোসেনকে প্রধান আসামি করে মামলা করেছে নজরুলের পরিবার।

লন্ডন পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী by তানজির আহমেদ রাসেল

যুক্তরাজ্য ও ইউনিসেফের যৌথ উদ্যোগে ড়২২শে জুলাই অনুষ্ঠেয় ‘গার্ল সামিট-২০১৪’তে যোগ দিতে লন্ডন পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার স্থানীয় সময় দুপর সাড়ে ৩টায় বাংলাদেশ বিমানের বিজি-০০৫ ফ্লাইটে হিথ্রো বিমানবন্দর পৌঁছেন তিনি। এসময় তাকে স্বাগত জানান লন্ডনস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনার মিজারুল কায়েস। বিমানবন্দর থেকে প্রধানমন্ত্রী সেন্ট্রাল লন্ডনের অভিজাত এলাকা পার্ক লেনের হিলটন হোটেলে পৌঁছলে সেখানে তাকে অভ্যর্থনা জানান যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান শরীফ, সিনিয়র সহ-সভাপতি জালাল উদ্দিন, উপদেষ্টামন্ডলীর সভাপতি শামসুদ্দিন খান মাস্টার, ইউরোপিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি অনিল দাস গুপ্ত, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নঈম উদ্দিন রিয়াজ, মারুফ চৌধুরী, আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান, বাণিজ্য সম্পাদক আ স ম মিছবাহ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক মিসবাহুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল আহাদ চৌধুরী, সভাপতি ফখরুল ইসলাম মধু, সাধারণ সম্পাদক সেলিম খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জামাল খান, ছাত্রলীগ সভাপতি তামিম আহমদসহ আওয়ামী লীগ ও বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের বিপুল সংখ্যক  নেতৃবৃন্দ। এদিকে যুক্তরাজ্য বিএনপি সূত্র জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর লন্ডন সফরের প্রতিবাদে আজ  গার্ল সামিট চলাকালে সেন্ট্রাল লন্ডনের ওয়েস্ট মিনিস্টার কুইন এলিজাবেথ কনফারেন্স সেন্টারের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করবে দলটির নেতাকর্মীরা। একই সঙ্গে কালো পতাকাও প্রদর্শনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। তবে অতীতের বিভিন্ন সময়ে বিরোধী নেতাকর্মীরা বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে কালো পতাকা প্রদর্শন করলেও গতকাল তেমন কোন কর্মসূচি কাউকে পালন করতে দেখা যায়নি।

আজকের কর্মসূচি: প্রধানমন্ত্রীর সফরের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম আজ থেকে শুরু হবে। দিনের শুরুতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে মিলিত হবেন। বৈঠকে বাংলাদেশের গত ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন ও পরবর্তী রাজনৈতিক পরিস্থিতি, দ্বিপক্ষীয় ব্যবসা বাণিজ্য, বাংলাদেশে ব্রিটিশ সাহায্যের বর্তমান পরিস্থিতি, ব্রিটেনে বসবাসরত বাংলাদেশীদের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধাসহ দু’দেশের মধ্যে পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ও বিরাজমান আন্তর্জাতিক বিষয় স্থান পাবে।  এই দিন সকাল ১০টা ২০ মিনিটে গার্ল সামিটে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী। গার্ল সামিটে তিনি কন্যা শিশুর অধিকার রক্ষা ও সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিত করার বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরবেন। এছাড়া কন্যা শিশুদের বাল্যবিবাহে বাধ্য করার প্রবণতা নিয়েও কথা বলবেন। গার্ল সামিট শেষে বিকাল ৪টা থেকে ৪টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত তিনি ব্রিটিশ শ্যাডো সেক্রেটারি অব স্টেট ফরেন এফেয়ার্স ডগলাস আলেক সান্ডারের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এই দিনই হিলটন হোটেলে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক ইফতার মাহফিলেও যোগ দেবেন তিনি। কাল বিকালে বিমানের বিজি-০০৫ ফ্লাইটে লন্ডন ত্যাগ করবেন প্রধানমন্ত্রী।

অসহায় ফিলিস্তিনিদের পাশে নেই কোনো আরব রাষ্ট্র

তিন বছর আগে ফিলিস্তিনিদের মধ্যে একটা আশা ছিল যে আরব জাহানে ক্রমবিকাশমান গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ফলে তারা হয়তো আরব দেশগুলোর সমর্থন আদায় করতে পারবে।
এরপর দেশটিতে হামাস ও ফাতাহ একটা ঐকমত্যের সরকার গঠন করে এবং এই সরকার জনগণের অধিকার ও দাবিগুলোর ব্যাপারে আরো বেশি দায়িত্বশীল। তাই ফিলিস্তিনি নেতারা আশা করেছিল যে তারা এবার আরব নেতাদের সমর্থন পাবে।

কিন্তু ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের সামপ্রতিক বিমান হামলা ও নির্বিচার হত্যাযজ্ঞ তাদের মন একটুও টলাতে পারেনি। বরং এর বিপরীতটাই ঘটছে। কার্যত আরব দেশগুলোর সরকার ইসরাইলের সামরিক অভিযানকে সমর্থন দিচ্ছে।
ফিলিস্তিনের সমর্থকদের মতে ইসরাইলের অবৈধ বিমান হামলা আর নির্বিচার হত্যাযজ্ঞে আরব দেশগুলোর সরকারের প্রতিক্রিয়া বেশ অসংলগ্ন এবং মোটেই আশানুরূপ নয়।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গাজায় ইসরাইলি হত্যাযজ্ঞের নিন্দা করে ব্যাপক বিক্ষোভ চলছে। কিন্তু আরব দেশগুলোর সরকার এ ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন।
মুনদার মুয়াম্মার নামে একজন তিউনিশীয় বিক্ষোভকারী যিনি তার দেশের রাজধানীতে ফিলিস্তিনের সমর্থনে মিছিলে যোগ দেন তিনি অভিযোগ করে বলেন, কোনো আরব দেশই ফিলিস্তিনকে সমর্থন দিচ্ছে না।
দিয়ানা বুতু নামে একজন ফিলিস্তিনি আইনজীবী এবং বিশ্লেষক বলেন, গাজায় অন্য সব আগ্রাসন ও আক্রমণের বেলায় কয়েকটা সরকার ছিল যারা প্রতিবাদ করত যে ইসরাইল যা করছে, যেভাবে করছে তা বেআইনি-অবৈধ এবং ফিলিস্তিনিদের প্রতি কিছু সমর্থন দিত। কিন্তু এবার সে রকম কিছু ঘটছে না। সবাই চুপচাপ বসে আছে।

আবু তারেক সাদেক নামে একজন ফিলিস্তিনি যিনি বৈরুতের শাতিলা শরণার্থী শিবিরে থাকেন। তিনি বলেন, মনে হচ্ছে ফিলিস্তিনিরা পিছু হটছে। আগের আমলের সরকারগুলো ফিলিস্তিনের ব্যাপারে কমপক্ষে কিছু কথা বলত, যদিও তারা মিথ্যা বলত। কিন্তু আজ আমরা তাদের কাছে অপাঙক্তেয়। যেখানে আমরা ১ নম্বর আলোচ্য বিষয় হওয়ার কথা, সেখানে আজ আমরা ২৪ নম্বরে।
মারওয়া বেটলিলি নামে তিউনিশিয়ার একজন ছাত্রী শুক্রবার রাজধানী তিউনিসে এক ইসরাইল বিরোধী বিক্ষোভ র্যালিতে অংশ নিয়ে বলেন, আরব বসন্ত শুরু হয়েছে এই তিউনিশিয়ায়। আমরাই প্রথম বিপ্লব করেছি। আর আমাদেরকেই প্রথম অন্যায়ের নিন্দা করতে হবে এবং স্বাধীনতা ও মুক্তির ব্যাপারে অনুপ্রেরণা দিতে হবে।
বামপন্থী ইসরাইলি পত্রিকা হারেেজর একজন লেখক আনসেল পেফার টুইটারে লিখেছেন, এটা অবিশ্বাস্য যে ইসরাইল যখন গাজা উপত্যকা এবং সমগ্র আরব রাষ্ট্রের ওপর খবরদারি করছে, তখন মিসর তাদের সমালোচনা করে একটি কথাও বলছে না। শুধু হামাসের ওপর দোষারোপ করছে।
ফিলিস্তিনি-মিসরীয় মানবাধিকার কর্মী এবং সংগঠক রামি সাথ বলেন, মিসরের সরকার আগুন নিয়ে খেলছে। তারা গাজা নিকটবর্তী মিসরীয় সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে যাতে গাজাবাসীর জন্য কোনো সাহায্য ও ত্রাণসামগ্রী না আসতে পারে। এটা শুধু অমানবিকই নয়; বরং সংকীর্ণ মানসিকতার পরিচয়।

নাগরিক ঐক্যের মতবিনিময় নিজেদের ব্যর্থতাই সরকারের বড় শত্রু

বর্তমান সরকারের ব্যর্থতাই তাদের বড় শত্রু। তাদের আর কোন শত্রুর প্রয়োজন নেই। তারা জনগণকে ভোটের অধিকার দিতে ব্যর্থ হয়েছে। ভোটারবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার স্বাধীনতাকে অর্থহীন করেছে, মুক্তিযুদ্ধকে অর্থহীন করেছে। এই সরকারের কাছে কোন দাবি আদায়ের ভিত্তি নেই। বাংলাদেশে রাস্তায় আন্দোলন করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়- এটা প্রমাণ হয়েছে। কারণ মুক্তিযুদ্ধ করেও এদেশে ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়নি। সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর সেগুনবাগিচায় একটি রেস্টুরেন্টে সাংবাদিকদের সম্মানে নাগরিক ঐক্য আয়োজিত মতবিনিময় ও ইফতার মাহফিলে বক্তারা এসব কথা বলেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে বলেন, দেশের মানুষ যেখানে দীর্ঘদিন গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছে সেখানে গণতন্ত্র আজ অনুপস্থিত। ভোটারবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে এই সরকার যে নজির স্থাপন করেছে তা পাকিস্তান আমলেও সম্ভব হয়নি। জনগণের ভোটাধিকার হরণ করে বলছে তারা নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছে। যারা শাসনতন্ত্র সম্পর্কে ন্যূনতম জ্ঞান রাখে না তারা আজ শাসনতন্ত্র সম্পর্কে বক্তব্য দিয়ে বেড়াচ্ছে। নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ভোটছাড়া ঘোষিত এমপিদের দাপটে এখন সবার দিশাহারা অবস্থা। তাদের অবৈধ কাজের বিরোধিতা করলেই হামলা-মামলা, গুম-খুনের শিকার হতে হচ্ছে মানুষকে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার নিন্দিত ও জনবিচ্ছিন্ন, এটা অস্বীকার করা যায় না। এই সরকার কতটা জনবিচ্ছিন্ন সেটা প্রমাণে ঘটনার অভাব নেই। র‌্যাব-পুলিশ ও আমলাদের ওপর নির্ভর করে দেশ চালাতে গিয়ে সর্বত্র নির্যাতন, গুম ও খুনের রাজত্ব কায়েম হয়েছে। বক্তব্য চলাকালে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মান্না বলেন, বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর একক ক্ষমতা সব সীমা ছাড়িয়ে গেছে। দলীয় প্রধান হিসেবে তিনি সংসদ ও প্রশাসনিক ক্ষমতাও নিয়ন্ত্রণ করছেন। সাংবিধানিকভাবেই দেশে এখন রাশিয়ার জার বা মোগল সম্রাটের মতো এক ব্যক্তির শাসন কায়েম হয়েছে। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। তাই আমরা সবার অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চাই। আমরা নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন চাই। তিনি বলেন, ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের প্রহসনে আওয়ামী লীগ যেভাবে নিজেদের জয়ী ঘোষণা করেছে তা নজিরবিহীন। ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৩ জনই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। অন্য আসনগুলোতে ভোটই হয়নি। বর্তমান সরকারকে তাই নির্বাচিত বলার সুযোগ নেই। এজন্য অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন সময়ের দাবি। তিনি বলেন, গণফোরাম, সিপিবি-বাসদের সঙ্গে আমরা যুগপৎ আন্দোলন করতে আগ্রহী। বি. চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন এনডিএফের সঙ্গে আমরা কথা বললেও তাদের সঙ্গে কিছু বিষয়ে মতপার্থক্য রয়েছে। এসময় মান্না নির্বাচন কমিশনকে অকার্যকর দাবি করে এই নির্বাচন কমিশনের পুনর্গঠনও দাবি করেন। নাগরিক ঐক্যের উপদেষ্টা এসএম আকরাম বলেন, প্রধানমন্ত্রী একটি বিশেষ পরিবারের পাশে থাকার ঘোষণা দিয়ে নারায়ণগঞ্জের উপনির্বাচনকে প্রভাবিত করেছেন। আওয়ামী লীগকে প্রচলিত নির্বাচন ব্যবস্থার মাধ্যমে ক্ষমতা থেকে সরানো সম্ভব নয়। এই সরকার পরিবর্তন করতে হলে নির্বাচন ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন করতে হবে। ইফতার অনুষ্ঠানে মানবজমিন-এর প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, নিউএজ সম্পাদক নূরুল কবির, নিউ নেশনের সাবেক সম্পাদক মোস্তফা কামাল মজুমদার, এনটিভির হেড অব নিউজ খায়রুল আলম বকুল, প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক মিজানুর রহমান খান, সোহরাব হাসানসহ প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকগণ অংশ নেন।

ব্যস্ত ৩০০০০ কারিগর

ঈদকে সামনে রেখে সুঁই-সুতা দিয়ে কাপড়ে বাহারী আলপনা তুলতে ব্যস্ত মানিকগঞ্জের প্রায় ৩০ হাজার নকশির কারিগর। এসব কারিগররা কাপড়ে আর্কষণীয় ডিজাইন আর নকশা বসিয়ে তৈরি করছে পাঞ্জাবি, থ্রিপিস, শাড়ি, ফতুয়া, বেবী ড্রেসসহ নানান পোশাক। আর এই কাজের বেশির ভাগ কারিগর হচ্ছেন  গ্রামীণ নারী। তাদের  নিখুঁত হাতে তৈরি এসব পোশাকে  লাগানো হচ্ছে নামীদামি ব্যান্ডের স্টিকার। তা শোভা পাচ্ছে  রাজধানীর বড় বড় মার্কেটের শোরুমে। দেখা গেছে, বেশ কয়েক বছর ধরে মানিকগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে বেশ কিছু নকশি প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ব্র্যাকের আয়েশা আবেদ ফাউন্ডেশন, মনামি, নকশি, ইউসুফ ইব্রাহীম হ্যান্ডিক্রাপ্ট, জননী ক্র্যাফট অ্যান্ড ফ্যাশন উল্লেখযোগ্য। এসব প্রতিষ্ঠানের শতাধিক কেন্দ্রে প্রায় ৩০ হাজার  নকশি কারিগর সারা বছরই তৈরি করে পাঞ্জাবি, শাড়ি, থ্রিপিস ও বেবী ড্রেস। কিন্তু ঈদ এলে এসব পোশাকের চাহিদা বাড়ে বহু গুণ। প্রত্যেক বছর ঈদের সময় নকশি কারিগররা ব্যস্ত সময় পার করেন। এই ঈদেও  একই অবস্থা। পাঞ্জাবি-ফতুয়া শাড়িতে এখন সুঁই-সুতার নকশি আঁকতে দিন-রাত ব্যস্ত এইসব কারিগররা। জেলার বিভিন্ন উপজেলার প্রায় প্রতিটি গ্রামেই এখন বাড়ির উঠানে উঠানে চেখে পড়বে কারিগরদের ব্যস্ততার এই দৃশ্য। আর সুঁই-সুতার বেশিরভাগ কাজ করেন গ্রামীণ নারীরা। তাদের নিপুণ হাতের এই কাজের কদর জেলার গ-ি পেরিয়ে রয়েছে সারা দেশেই। অভিজাত বিপণি বিতান আড়ং, বুনন, অঞ্জনস, কো-ক্রাফট, বাংলার মেলা, গ্রামীণ চেক, রং, আবর্তনসহ দেশের নামীদামি সব প্রতিষ্ঠানে চলে যায় মানিকগঞ্জের তৈরি এসব বাহারী পোশাক। এবার ঈদ উপলক্ষে সবচেয়ে বেশি  যাচ্ছে পাঞ্জাবি, শাড়ি, ফতুয়া, থ্রিপিস ও বেবী ড্রেসের লক্ষাধিক পোশাক। শুধুমাত্র মানিকগঞ্জ আয়েশা আবেদ ফাউন্ডেশন থেকে আড়ংয়ে যাচ্ছে প্রায় ৬০ হাজার নকশির কাজের পোশাক। এর মধ্যে রয়েছে প্রায় ২৩ হাজার পাঞ্জাবি, ৮ হাজার ফতুয়া, ১০ হাজার স্যালোয়ার-কামিজ, ৮ হাজার শাড়ি, ৬ হাজার বেবী ড্রেস ও ৪ হাজার হাউজ হোল্ড। এছাড়া জননী ক্র্যাফট অ্যান্ড ফ্যাশন প্রতিষ্ঠান থেকেও ৩০ হাজারের বেশি পোশাক ঢাকার নামীদামি বিপণি বিতানে যাচ্ছে এবার ঈদ উপলক্ষে। মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার গড়পাড়া গ্রামের নকশা কারিগর সালমা বেগম জানালেন, সারা বছর নকশা তোলার কাজ করলেও প্রতি বছর ঈদের আগে কাজের চাপ বেড়ে যায় কয়েক গুণ।  রোজা শুরু হওয়ার আগে থেকে  দিন-রাত পরিশ্রম করতে হয়। কিন্তু সেই তুলনায় মজুরি অনেক কম। তারপরও সংসার চালানো ও ছেলেমেয়েদের পড়ার খরচ করা হয় এই আয় দিয়ে।  আরেক কারিগর হোসনেআরা জানালেন, আমাদের হাতে তৈরি পোশাকের কদর আমরা তেমন বুঝি না। যখন মানুষজন এই পোশাকগুলো বড় বড় শোরুম থেকে কিনে ব্যবহার করেন তখন আমরাই বুঝতে পারি না এগুলো আমাদের হাতে তৈরি। মানিকগঞ্জ ব্র্যাক আয়েশা আবেদ ফাউন্ডেশনের  ম্যানেজার আশরাফ উজ্জামান বলেন, কাস্টমারের চাহিদা অনুযায়ী  কোয়ালিটি ঠিক রেখে এসব পোশাক তৈরি করা হয়। ভাল  কোয়ালিটির কারণেই মানিকগঞ্জের নকশি করা পোশাকের চাহিদা বেশি। ঈদের সময় এসব পোশাকের কদর বেশি থাকে। এবার প্রায় ৬০ হাজার পোশাক আমরা মানিকগঞ্জ থেকেই শুধুমাত্র আড়ংয়েই দিচ্ছি।

সুচিকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ ইউনূসের

মিয়ানমারে জন-কেন্দ্রিক অর্থনীতি নিয়ে আলোচনা করলেন শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও অং সান সু চি। ড. ইউনূস তিন দিনের সফরে শনিবার মিয়ানমারের ইয়াঙ্গনে পৌঁছেন। স্থানীয় বৃটিশ কাউন্সিল তাকে আমন্ত্রণ করেছিল। সেখানে সরকারের প্রতিনিধি, সুশীল সমাজ ও ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের সামনে সামাজিক বাণিজ্য ও দেশের উন্নয়নে ব্যবসার ভূমিকা নিয়ে তার বক্তব্য দেয়ার কথা। এ সফরে গিয়ে ইয়াঙ্গনে অং সান সু চি’র সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ড. ইউনূস। এ দু’ নোবেল বিজয়ীর মধ্যে এটাই প্রথম সাক্ষাৎ। এ সময় ক্ষুদ্রঋণ, স্বাস্থ্য সেবা, শিক্ষা, ভোকেশনাল প্রশিক্ষণ সহ বাংলাদেশে সামাজিক ব্যবসায় কর্মকা- নিয়ে সু চি’র সঙ্গে আলোচনা করেন তিনি। ১৯৯৭ সালে মিয়ানমারে ডেল্টা জোনে গ্রামীণ ট্রাস্ট কর্মসূচি চালু করার বিষয়ে সমর্থন দেয়ায় সু চি-কে তিনি ধন্যবাদ জানান। সু চি এ সময় প্রফেসর ইউনূস বিশ্বব্যাপী যে পদক্ষেপ নিয়েছেন সে বিষয়ে আগ্রহ দেখান। ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে তিনি তার নিজ নির্বাচনী আসনে গ্রামীণ উন্নয়নে গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কে বর্ণনা করেন। প্রফেসর ইউনূস দু’দেশের মধ্যে যে সম্পর্ক, দু’দেশকে আরও কাছাকাছি নিয়ে আসতে পারে এমন সব ইস্যু সমাধান করার আহ্বান জানান। বলেন, সার্কভুক্ত দেশগুলোর কাছে তিনি আহ্বান জানিয়েছেন মিয়ানমারকে এর সদস্য করতে। তার এ প্রস্তাবকে তার দলের পক্ষ থেকে সমর্থনের আহ্বান জানান ড. ইউনূস। এ সাক্ষাতের সময় অং সান সু চি-কে সামাজিক বাণিজ্য পরিদর্শনের জন্য বাংলাদেশ সফরের আহ্বান জানান তিনি। সু চি শিগগিরই বাংলাদেশ সফরের আগ্রহ দেখিয়েছেন। এর মধ্যে তিনি একটি প্রতিনিধি দল পাঠাবেন বাংলাদেশে। এ বছরের নভেম্বরে মেক্সিকো সিটিতে হওয়ার কথা রয়েছে সামাজিক বাণিজ্য সম্মেলন। তাতেও সু চি প্রতিনিধি পাঠাবেন। আগামী বছর নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টায় হবে নোবেল পিস লরিয়েটস সামিট। সেখানে যোগ দিতে সু চিকে আমন্ত্রণ জানান তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের পাশাপাশি কো-চেয়ার হিসেবে সম্মেলনে উপস্থিত থাকবেন প্রফেসর ইউনূস।

প্লাজা ট্র্যাজেডি -এখনও আঁতকে ওঠেন রোজিনা

রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির কথা স্মরণ করে এখনও আঁতকে ওঠেন রোজিনা বেগম, রেবেকারা। সেই কথাই তারা পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তাদের স্মৃতিচারণ নিয়ে নির্মিত হয়েছে প্রামাণ্যচিত্র ‘ক্লোথস টু ডাই ফর’। এটি বিবিসিতে প্রচারিত হওয়ার কথা রয়েছে। এ খবর দিয়েছে লন্ডনের প্রভাবশালী দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট পত্রিকা। ওই প্রামাণ্যচিত্রে রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি থেকে বেঁচে যাওয়া রোজিনা বেগম বলেছেন সেদিনের কথা। শুধু তিনিই নন, তার মতো আরও অনেকে সেদিনের স্মৃতি তুলে ধরেছেন। রোজিনা বলেছেন, ঘটনার দিন দেখলাম গুজবই সত্যি হলো। ভবনের ভিতরে গিয়ে দেখতে পাই পিলারে ফাটল ধরেছে। রড বেরিয়ে রয়েছে। সিলিংয়েও ফাটল ধরেছে। যে কোন সময় তা ধসে পড়তে পারে। আমার বোনকে বললাম, এ ভবনে প্রবেশ করে আমরা ভুল করেছি। চল আমরা চলে যাই। কিন্তু রোজিনা সেই সুযোগ পান নি। তিনি বলেন, অকস্মাৎ আমার চারদিক অন্ধকার হয়ে গেল। শুধু আর্তনাদ শুনতে পাচ্ছি। আমার বোনের নাম ধরে ডাকলাম। কিন্তু কোন শব্দ পেলাম না। শুধুই আর্তনাদের শব্দ পাচ্ছি। আমি খুঁজে পেলাম না বোনকে। যখন আমার চেতনা ফিরে এল দেখতে পেলাম ধ্বংসস্তূপের মাছে চাপা পড়ে আছি। আমার হাত রড, বিম, মেশিন ও টেবিলে চাপা পড়ে আছে। আমার মাথায় আঘাত লেগেছে। কান দিয়ে রক্ত ঝরছে। আমার চারপাশে পড়ে আছে মৃতদেহ। আমার গায়ের ওপর দিয়ে রক্তের স্রোত বেয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থা থেকে নিজেই তিনি আটকা পড়া হাতটি কেটে ফেলেন। এ সম্পর্কে তিনি বেেলন, কখনও ভাবিনি নিজেই নিজের হাত কেটে ফেলতে পারবো। কিন্তু ওই অবস্থায় তা করতে বাধ্য হয়েছিলাম। চিকিৎসকরা প্রথমে আমার ওই হাতটি কেটে ফেলার চেষ্টা করেন। তবে তারা আমার কাছে পৌঁছতে পারছিলেন না। এক পর্যায়ে তারা বলেন, আমরা তোমাকে একটি করাত দিচ্ছি। তা দিয়ে তুমিই তোমার হাত কেটে ফেলো। প্রথমে আমি বললাম, আমি তা করতে পারবো না। আমার গায়ে শক্তি নেই। তৃতীয় দিনের শুরুতে তারা আমাকে বললেন, তুমি একটু চেষ্টা করে দেখো। আমি বললাম, ঠিক আছে। আমাকে দিন। আমি চেষ্টা করি। আমার মাথায় তখন বোনকে খুঁজে পাওয়ার নেশা। তাই আমি যে কোন মূল্যে নিজেকে মুক্ত করার চেষ্টা করি। ওই ট্র্যাজেডি থেকে আরও বেঁচে যান রেবেকা। তিনি বলেন, আমি যেখানে আটকা পড়ি সেখানে অন্য মানুষ কাটা পড়ে ছিল। আমার চারপাশে শুধু মৃতদেহ। সেখানে আরও মানুষ ছিল। ছিল লাশ আর লাশ। আমি সে কথা ব্যাখ্যা করতে পারবে না। অনেক মানুষকে দেখেছি নিজের মাংস নিজে খাচ্ছে। পান করছে রক্ত। কোন কোন মানুষ পান করেছেন নিজের মূত্র। তারা চেষ্টা করেছেন যে কোন মূল্যে বেঁচে থাকতে।

কুতুবদিয়া কি বিলীন হয়ে যাবে by মুহাম্মদ হোছাইন কুতুবী

একসময়ে বাতিঘরের জন্য বিখ্যাত কুতুবদিয়া দ্বীপ, পূর্বদিকে আঁকাবাঁকা নদী সারি সারি প্যারাবন। উত্তরে একমাত্র খরস্রোতা নদী- কর্ণফুলী, পশ্চিমে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি সমুদ্র সৈকত, শামুক ঝিনুক, এবং ঝাঁকে ঝাঁকে লাল কাকড়া। দক্ষিণে সীমানাহীন লবণের মাঠ, উত্তর-পশ্চিম, পূর্ব দক্ষিণ যে দিকেই তাকাই মাঝি মাল্লার দেখা মিলে, চারিদিকে বঙ্গোপসাগরে ঘেরা ২১৫ বর্গ কিলোমিটারের এই দ্বীপটি প্রাকৃতিক খনিজ সম্পদে ভরপুর। শাহ আব্দুল মালেক কুতুব আউলিয়ার পূণ্যভূমি, পর্যটন সমৃদ্ধ এলাকা, ক’দিন আগের কথা, গ্রাম বাংলার চিরচেনা সব ঐতিহ্য বিরাজমান ছিল। কুতুবদিয়াবাসীর ছিল গোলাভরা ধান, পুকুর ভরা মাছ, গোয়াল ভর্তি গরু, মহিষ, ছাগল, মাঠে ঘাটে সোনালী ফসল, নদী খালে সোনালী রুপালী নানা প্রজাতির মাছ। কিন্তু এসব আজ হারিয়ে যাচ্ছে আগ্রাসণী সমুদ্রের কবলে। শিক্ষা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য কোন অংশে পিছিয়ে নেই এই এলাকা। শিক্ষার হার বিবেচনায় কক্সবাজার জেলায় শীর্ষে অবস্থান। এই ছোট্ট জনপদের লোকজন মানব সম্পদে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের সচিবালয় থেকে শুরু করে নানা পদে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছেন এই এলাকার কৃতি সন্তানেরা।
ZoooooM
এই অঞ্চলের লোকজন পেশায় সামুদ্রিক মাছ আহরণ ও লবণ চাষাবাদে জড়িত। কিন্তু প্রাকৃতিক প্রতিকুলতা, মানবসৃষ্ট ধুম্রজালে তালবেতাল হয়ে পড়েছে। এই এলাকার জনজীবন, হারিয়ে ফেলেছে জীবনযাত্রার ছন্দ। মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর আগেই প্রকৃতি তাদের জীবনযাত্রার অগ্রগতিকে থামিয়ে দেয়। হাজারো স্বপ্ন নিয়ে প্রতিকুলতার মাঝে সমুদ্র উপকন্ঠে বসবাস করে আসছে লাখো জনতা। শিক্ষা, সংস্কৃতি ঐতিহ্য নিয়ে অগ্রসর হতে চাইলেও বাধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত, বর্ষা এলেই আতংক বিরাজ করে দ্বীপবাসীর মাঝে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, নদী ভাঙ্গন, জলোচ্ছ্বাস লন্ডভন্ড করে দেয় তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী জলবায়ু বিপদাপন্ন দেশ হিসেবে স্বীকৃত যা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রকট হচ্ছে। বিশেষ করে ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে দেশটিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন হতে হয় বেশি।
ঐসব দুর্যোগের কারণে সহায় সম্পত্তি, বসতবাড়ি জমিজমা হারিয়ে নিঃস্ব হতে হচ্ছে সহস্র মানুষকে।  জলবায়ুবিদগণ ভবিষ্যৎ বাণী করে বলেন- একবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে দেশের দক্ষিণাঞ্চল পানির নিচে তলিয়ে যাবে। জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশের ভূমিকা নগন্য হলেও বৈশ্বিক উষ্ণতায় জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের ফলে এ দেশের দক্ষিণাঞ্চল সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে তার মাঝে কুতুবদিয়া অন্যতম।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে, অনাবৃষ্টি, বন্যা, খরা, অতিবৃষ্টি, ঋতুবৈচিত্র পাল্টে যাবে। সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস, মাটির লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা এবং ক্ষতির পরিমাণ বাড়বে। ক্ষতিগ্রস্ত হবে হাজার হাজার মানুষ এবং প্রভাব পড়বে মানুষের জীবন জীবিকার উপর।
জার্মান ওয়াচের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- বাংলাদেশের উপর প্রভাবও ক্ষয়ক্ষতির যে আশংকার কথা বলা হয়েছে তা হলে বাংলাদেশের বন্যা এলাকা বাড়বে ২৯ শতাংশ তার মধ্যে কুতুবদিয়া শীর্ষে।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ইতোমধ্যে দ্বীপবাসীর মাঝে চরমভাবে লক্ষণীয়, প্রতিনিয়ত পানির স্বাভাবিক উচ্চতা বাড়ছে। নিম্নাঞ্চল জোয়ারের পানিতে ভাসছে। যার ফলে উদ্বাস্তু মানুষের সংখ্যা বাড়ছে, ভাসমান পরিবার বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ এক বিভীষিকাময় জীবন, নিয়তীর কাছে হার মানতে হচ্ছে দ্বীপবাসীর। একবার ঘূর্ণিঝড়ে সব হারায় আবার নদী ভাঙ্গনে বিলুপ্ত করে তাদের অস্তিত্বকে, তবুও মারায় টানে ঠাঁই নেয় আগ্রাসনী সমুদ্রের তীর।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে জলবায়ু উদ্বাস্তু মানুষের পুনর্বাসনে আর্থিক ফান্ড আছে, ব্যয়ও হচ্ছে কিন্তু ক্ষতিগ্রস্তরা এই সুবিধার আওতায় পড়ছে না। এছাড়া জলবায়ু স্থানচ্যুত মানুষের জন্য কার্যকর প্রত্যাবর্তন, স্থানান্তর ও পুনবার্সন কর্মসূচী চালু নেই। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও মানবিক আইনানুযায়ী বাংলাদেশ সরকারের প্রাথমিক ও প্রধান কর্তব্য ও দায়িত্ব হচ্ছে জলবায়ু স্থানচ্যুত মানুষদের দেশের অভ্যন্তরে স্থানান্তর ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা।
কুতুবদিয়া বাস্তুহারা মানুষের সমস্যার শেষ নেই, অনেকেই বেড়ি বাধের উপর ব্যাঙের ছাতার মতো অস্থায়ী টঙ বেধে জীবনযাপন করছে। আবার অনেকেই সুখের সংসার গড়তে অর্থকড়ি জমিয়ে পাকা অথবা সেমিপাকা ঘরবাড়ি নির্মাণ করার সাহস পায়না। বিশেজ্ঞদের মতে, বর্তমানে ২০০৭ সালের সিডরের ন্যায় দুর্যোগ সৃষ্টি হলে ’৯১ এ ঘূর্ণিঝড়ের চেয়ে আরো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং দ্বিগুণ প্রাণহানি হওয়ার আশংকা রয়েছে।
১৯৯১ সালের তান্ডবে উপকুলীয় এলাকায় প্রায় ১ লাখ ৩৮ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। এর সিংহভাগ ছিল কুতুবদিয়া এবং তার আশ-পাশ এলাকার। বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট এর তথ্য অনুযায়ী ৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে কুতুবদিয়ার ৬টি ইউনিয়নে প্রাণহানি ঘটে ৯ হাজার ১৫ জনের। সরকারি তথ্য অনুযায়ী ১৫ হাজার ও বেসরকারি তথ্য অনুযায়ী ৪০ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটে। দীর্ঘ ২৩ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পরও মানুষের জানমালের ক্ষয়-ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারেনি। বর্তমানে কুতুবদিয়ার লোক সংখ্যা রয়েছে প্রায় দুই লাখেরও কাছাকাছি। ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র রয়েছে মাত্র ৭১টি। জনসংখ্যা অনুপাতে আশ্রয় কেন্দ্রের সংখ্যা অতি নগণ্য। নির্মাণ ত্র“টি এবং অযতেœর কারণে আশ্রয় কেন্দ্রগুলোকে ময়লা-আবর্জনার স্তুপে পরিণত হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে অনেক আশ্রয়কেন্দ্র স্থানীয় প্রভাবশালী লোকদের গুদামঘরে পরিণত হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে কুতুবদিয়ার চার পার্শ্বের প্যারাবন, ঝাউবন এখন উজাড় প্রায়। কুতুবদিয়া এখন জোয়ারের পানিতে ভাসছে। কুতুবদিয়াকে রক্ষা করতে চাইলে অবশ্যই কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। প্রবল সামুদ্রিক জোয়ারের কারণে পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে, সহস্রাধিক ঘর বাড়ি, ক্ষেত-খামার, বিশেষ করে আলী আকবর ডেইলের তাবালের চর গ্রামটি বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই এলাকায় রয়েছে দেশের একমাত্র বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্প। বর্তমানে প্রকল্পটি ধ্বংসাবশেষে পরিণত হয়েছে। আলী আকবর ইউনিয়নটি উপজেলার একমাত্র জনবহুল ইউনিয়ন। এর দক্ষিণে ছিল খুদিয়ার টেক নামক একটা বিশাল ইউনিয়ন। আজ ইউনিয়নটি বিলিন হয়ে গেছে। এবার আলী আকবর ডেইল বিলীন হওয়ার পালা। এছাড়াও ধুরুং আকবর বলীর পাড়া, চর ধরুং, কৈয়ালবিল, কাইছারপাড়া, জালিয়া পাড়া ইত্যাদি গ্রামে জোয়ার ভাটার পানি আনাগোনা অব্যাহত আছে।
প্রাকৃতিক নৈসর্গপূর্ণ এলাকা, যেখানে- লবণ শিল্প, মৎস শিল্প, চিংড়ি ঘের প্রতিনিয়ত সফলতার হাতছানি দিচ্ছে। আমাদের লবণ শিল্পে বিশ্বের দরবারে প্রশংসার দাবীদার। আরো আছেÑ সোনালী রূপালী হাজার প্রজাতের কাঁচা মাছ, শুটকি, উন্নত প্রজাতির কাকড়া, দেশে বিদেশে রপ্তানি হয়ে জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেই চলছে। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, এ দ্বীপবাসী বৈষম্যের স্বীকার হচ্ছে, রাজনৈতিক বিবেচনায় অনেক ক্ষেত্রে মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এই জনপদ।
কুতুবদিয়া ৬টি ইউনিয়নের প্রতিটি ইউনিয়ন মারাত্মক ভাবে ভাঙ্গনে আক্রান্ত হচ্ছে। দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে এই দ্বীপের অস্তিত্ব টিকে রাখা মুশকিল হয়ে দাঁড়াবে। সাম্প্রতিক কুতুবদিয়া বাসির জীবন যাত্রার মান চরম ভাবে বিপর্যস্ত হচ্ছে। টানা কয়েকদিনের পূর্ণিমায় জোয়ারের পানিতে ফুলে উঠেছে বঙ্গোপসাগর। কুতুবদিয়ার চারপার্শ্বের এলাকাগুলো প্লাবিত হয়েছে। পূর্ণিমার জোয়ারের কারণে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ অপরিমেয়। কুতুবদিয়ার প্রায় ২৭টি গ্রাম আংশিক বা পূর্ণাঙ্গভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। আলী আকবর ডেইল ইউনিয়নের তাবালের চর গ্রামটি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে, যে কোন মুহুর্তে তলিয়ে যাওয়ার আংশকা রয়েছে। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, প্রতি বছর জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেয়েছে ২৮ সেন্টিমিটার। যার ফলে বেড়ি বাধ ভেঙ্গে গিয়ে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়া, নদী ভাঙ্গন বেড়ে যাওয়া নতুন কোন খবর নয় দ্বীপবাসীর কাছে।
এত দূর্যোগ থাকা সত্ত্বেও কুতুবদিয়া বাসীকে প্রকৃতির সাথে সংগ্রাম করে নতুন করে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখতে হয়। প্রকৃতপক্ষে এসব দূর্যোগের জন্য স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিরাই দায়ী। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতারা ক্ষমতার অপব্যবহার করে, সরকারের ছত্রছাঁয়ায় লবণমাঠ, চিংড়ি ঘের ইত্যাদি নির্মাণের জন্য উপকুলীয় প্যারাবনের শত শত গাছ যেমন- বাইন, কেউড়া, ঝাউবন ইত্যাদি রাতারাতি উজাড় করে দিয়েছে। অনেক স্থানীয় প্রতিনিধি রক্ষক সেজে ভক্ষক হয়েছে, বেড়িবাধ  উন্নয়নের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে এখনও জনপ্রতিনিধির উচ্চাসন দখল করে আছেন।
প্রতি অর্থ বছরে সরকারের পক্ষ থেকে যে বরাদ্দ দেয় হয় তার সুষ্ঠ ব্যবহার হয়না, বেড়িবাধ সহ অন্যান্য উন্নয়নমূলক কাজে ঠিকাদারদের প্রভাবিত করে স্থানীয় প্রভাবশালী রাজণৈতিক ব্যক্তিগণ, তাদের কাজে ভাগ ভাটোয়ারা বসিয়ে হাত করে নেয় এমন অভিযোগ করেন এলাকাবাসী। অনেক রাজণৈতিক নেতার প্রতিহিংসার কারণে কুতুবদিয়া আজ বিদ্যুৎহীন অন্ধকারে ডুবে আছে তা কারো আজানা নয়। স্থানীয় লোকজন অভিযোগ করে বলেন- নেতারা গাড়ি বাড়ি করে শহরে নগরে পাড়ি জমিয়েছেন আমরা কিভাবে দিন কাটাচ্ছি তা তাদের নিকট স্পষ্ট নয়, দু:খী মেহনতী মানুষের দু:খ দুদর্শা লাঘবে তাদের কোন প্রচেষ্টা লক্ষ্য করা যায়না, নির্বাচন ঘনিয়ে আসলে হাত পা ধরে ভোট ভিক্ষা করতে আসে, পরে আর কোন খোঁজ থাকে না।
চারিদিকে হাহাকার, দুর্বীসহ এক কঠিন জীবনযাত্রা, মাথা গুজার ঠাই নেই অনেকের- তিন বেলা খাবার জুটেনা অধিকাংশ লোকের, দিক বিদিক ছুটাছুটি করছে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য। জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের মাঝে সরকারী, বেসরকারী উদ্যোগে ত্রাণ বিতরণের কার্যক্রম ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা কাগজে কলমে থাকলেও তার সত্যতা ও বাস্তবতা নেই।  সরকারের সামাজিক নিরাপত্তামূলক কার্যক্রম শুধু শুনা যায়, বাস্তবে তার প্রমাণ খুবই বিরল।সাম্প্রতিক প্রকাশিত বেসরকারী তথ্যানুযায়ী কুতুবদিয়া অধিকাংশ লোক মধ্যবিত্ত থেকে দারিদ্রের নিম্ন সীমায় বসবাস করছে। ব্যক্তিগত পেশায় ভাটা নেমে এসেছে অনেকের। জেলে পরিবার অভাব অনটনের মধ্যদিয়ে জীবন যাপন করছে। লবন ব্যবসায়ীরা ন্যায্য মূল্য না পেয়ে বেকায়দায় পড়ে আছে, তাদের দাবী রাজনৈতিক বিবেচনায় তাদের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে দেখা গেছে সরকারী, বেসরকারী কোন সাহায্য সহযোগিতা না থাকায় তাদের মাঝে বিরূপ প্রভাব লক্ষ্য করা গেছে। দেখা গেছে প্রতি বছর শত শত একর জমি চাষাবাদ অনোপযোগী হয়ে পড়ছে, জেলেরা মাছ আহরণ ঝুঁকিপূর্ণ মনে করে উক্ত পেশা থেকে সরে দাঁড়াচ্ছে।
এই বিশাল জনগোষ্ঠিকে টিকিয়ে রাখতে হলে, তাদের জন্য- অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা নিশ্চিত করা সময়ের দাবী। সরকারী বেসরকারী এনজিও গুলোর তৎপরতা একান্তভাবে কাম্য। দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, মৎস্য এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় এর পক্ষ থেকে নেয়া দরকার বিশেষ উন্নয়ন মূলক পরিকল্পনা এবং তার সুষ্ঠ বাস্তবায়ন। প্রতিটি উন্নয়ন মূলক কাজের সুষ্ঠ তদারকি এবং জবাবদিতিহা নিশ্চিত করা দরকার অন্যথায় খুব অচিরেই বাংলাদেশের মানচিত্র থেকে ছোট্ট দ্বীপটি হারিয়ে যাবে।
এখনিই সময় দ্বীপ বাসীর ন্যায্য দাবী সমূহ পূরণ করার তাদের দাবী সমূহের মধ্যে রয়েছে
কুতুবদিয়ার জলবায়ু স্থানচ্যুত সমস্যা অভ্যন্তরীণভাবে সমাধানে, বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়কে দায়িত্ব নিতে হবে।
জলদস্যুদের তান্ডব মোকাবেলায় কোষ্ট গার্ডের তৎপরতা বৃদ্ধি করতে হবে।
খাস জমি নিয়ে বিরোধ, দাঙ্গা হাঙ্গামা চিরতরে বন্ধ করতে হবে।
ক্ষতিগ্রস্ত জেলে পরিবারকে সাহায্য সহযোগিতা করতে হবে।
বাস্তুহারা লোকদের পূনর্বাসন নিশ্চিত করতে হবে।
kutubi.jkkniu@gmail.com

Saturday, July 19, 2014

গাজায় নিহতের সংখ্যা ৩০০ পেরিয়েছে

ফিলিস্তিন-শাসিত গাজায় আজ শনিবার ইসরায়েলের নতুন করে শুরু হওয়া বিমান হামলায় ১১ জন নিহত হয়েছে। এই নিয়ে গত ১২ দিনে গাজায় নিহতের সংখ্যা ৩০০ পেরিয়েছে।
বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে জানানো হয়, যুদ্ধবিরতিতে উভয় পক্ষকে রাজি করাতে আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে আজ ওই অঞ্চলে সফরে যাচ্ছেন জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন।
গাজায় ইসরায়েলের প্রায় একতরফা হামলা আজ দ্বাদশ দিনে গড়িয়েছে। ভোরে খান ইউনিস শহরে একটি মসজিদের বাইরে বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। এতে সাতজন নিহত হয়। এরপর গাজায় আরও হামলা হয়। এতে চারজন নিহত হয়।
আজকের ঘটনা নিয়ে গত ১২ দিনে গাজায় নিহতের সংখ্যা ৩০৭ জনে পৌঁছেছে। আহত হয়েছে দুই সহস্রাধিক ফিলিস্তিনি। হতাহত ব্যক্তিদের অধিকাংশ বেসামরিক নাগরিক। তাদের মধ্যে অনেক নারী ও শিশু রয়েছে।
অপর দিকে চলমান সংঘাতে এ পর্যন্ত দুজন ইসরায়েলি নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে কয়েকজন।
জাতিসংঘের পক্ষ থেকে গতকাল শুক্রবার বলা হয়েছে, চলমান সহিংসতা বন্ধে উভয় পক্ষকে একটি সমঝোতায় আনার লক্ষ্যে সংস্থাটির মহাসচিব বান কি মুন আজ ওই অঞ্চল সফরে যাচ্ছেন।
নিজেকে রক্ষার ব্যাপারে ইসরায়েলের অধিকারের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। তবে বেসামরিক মানুষের প্রাণহানি এড়াতে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

গাজা উপত্যকায় গতকাল আবার স্থল অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। যুদ্ধবিমান ও সামরিক হেলিকপ্টারের সহায়তা নিয়ে স্থলবাহিনীর ওই অভিযানে গতকালও হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। প্রাণ বাঁচাতে গাজার বাসিন্দারা বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটছেন।

এর আগে ১৩ জুলাই দিবাগত রাত থেকে প্রথম গাজায় স্থল অভিযান শুরু করেছিল ইসরায়েলি নৌ কমান্ডোরা। এক দিন পরই ওই স্থল হামলা স্থগিত করা হয়েছিল।

হামাস হুঁশিয়ারি করে বলেছে, এ আগ্রাসনের জন্য ইসরায়েলকে চড়া মূল্য দিতে হবে। ইসরায়েলি হামলার জবাবে তারা গাজা থেকে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে রকেট ছুড়ছে।

ইসরায়েল বলছে, গতকাল এক ইসরায়েলি সেনা নিহত হয়েছেন। তবে কোথায় ও কীভাবে নিহত হয়েছেন, তা সুনির্দিষ্ট করে জানানো হয়নি।

৮ জুলাই থেকে ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে ইসরায়েলের সর্বশেষ হামলার সূত্রপাত ইসরায়েলি তিন কিশোরকে সম্প্রতি অপহরণ ও হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে। হামাসই ওই ঘটনা ঘটায় বলে মনে করে ইসরায়েল। তবে হামাস তা অস্বীকার করে। পরে ফিলিস্তিনি এক কিশোরকে একইভাবে হত্যা ও অপহরণের পর উত্তেজনা নতুন মাত্রা পায়। এরপর গাজা থেকে রকেট ছোড়া হচ্ছে—এমন দাবি তুলে ‘অপারেশন প্রটেক্টিভ এজ’ শুরু করে ইসরায়েল।

এর আগে ২০১২ সালের নভেম্বরে গাজায় অভিযান চালায় ইসরায়েল। তখন আট দিনের মাথায় মিসরের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়।

ক্ষমতার ভাগাভাগি নিয়ে দ্বন্দ্বের জের ধরে ফিলিস্তিনের দুই অংশ পশ্চিম তীর ও গাজা ২০০৭ সালের আগস্টে চলে যায় দুটি দলের নিয়ন্ত্রণে। সেই থেকে মাহমুদ আব্বাসের নেতৃত্বে ফাতাহ পশ্চিম তীরে ও খালেদ মেশালের নেতৃত্বে হামাস গাজা শাসন করছিল। এই অবস্থায় গত এপ্রিলে দুই দলের মধ্যে একটি চুক্তি হয়। সে অনুযায়ী নতুন করে নির্বাচনের পর চলতি বছরের শেষ নাগাদ একটি জাতীয় সরকার গঠনের কথা। কিন্তু হামাস-ফাতাহর চুক্তিকে ভালোভাবে নেয়নি ইসরায়েল। তাদের মতে, হামাস একটি জঙ্গি সংগঠন। হামাস-ফাতাহ জাতীয় ঐক্যের সরকার হলে সেই সরকারের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় যাবে না বলে জানিয়ে দেয় ইসরায়েল।

১৯৪৮ সালে ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে ইহুদিদের জন্য ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর থেকেই স্বাধীন রাষ্ট্রের দাবিতে ফিলিস্তিনিদের সংগ্রামের শুরু। এর পর থেকে নিয়মিত রক্ত ঝরলেও আজও তাদের সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি। রাষ্ট্র হিসেবে ফিলিস্তিনের স্বাধীন সত্তা মেনে নিতে রাজি নয় ইসরায়েল।

এপাশে মৃত্যু, ওপাশে বিয়ে

ইসরায়েলের প্রায় একতরফা হামলায় ফিলিস্তিন-শাসিত গাজা উপত্যকা মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ হচ্ছে। সেখানকার বাতাসে বারুদের গন্ধ, চারদিকে শোকের মাতম। আর ওপাশেই ইসরায়েলের একটি শহরে আনন্দ-ফুর্তির মধ্য দিয়ে বিয়ের একটি অনুষ্ঠান হয়েছে।
এএফপির খবরে জানানো হয়, ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলীয় সেডেরত শহরের গত ১৬ মে বিয়ের ওই অনুষ্ঠানটি হয়।
শহরটির একটি ধর্মীয় স্কুলের ভেতরে সুরক্ষিত স্থানে ঘটা করে বিয়ে করেন জিভা মোরদেচাই ও হেইম জোহান।

>>গাজায় ইসরায়েলি হামলায় এই মা তাঁর সন্তান হারিয়েছেন। তাঁর মতো আরও অনেকেই গত ১২ দিনে তাঁদের প্রিয়জন হারিয়েছেন। ছবি: রয়টার্স
বিয়েতে আনন্দ-ফুর্তির কমতি ছিল না। কয়েক শ অতিথির উপস্থিতিতে ঐতিহ্য মেনে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়। পরিবেশিত হয় ঐতিহ্যবাহী নৃত্য।
গাজায় ইসরায়েলি হামলা আজ শনিবার দ্বাদশ দিনে গড়িয়েছে। আজ ভোরে খান ইউনিস শহরে একটি মসজিদের বাইরে বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। এতে সাতজন নিহত হয়। এরপর গাজায় আরও হামলা হয়। এতে চারজন নিহত হয়। আজকের ঘটনা নিয়ে গত ১২ দিনে গাজায় নিহতের সংখ্যা ৩০৭ জনে পৌঁছেছে। আহত হয়েছে দুই সহস্রাধিক ফিলিস্তিনি। হতাহত ব্যক্তিদের অধিকাংশ বেসামরিক নাগরিক। তাদের মধ্যে অনেক নারী ও শিশু রয়েছে।
অপর দিকে চলমান সংঘাতে এ পর্যন্ত দুজন ইসরায়েলি নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে কয়েকজন।

>>গাজা যখন মৃত্যুপুরী, ইসরায়েলে তখন বসে বিয়ের আসর। ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলীয় একটি শহরে গত ১৬ জুলাই বিয়ের একটি অনুষ্ঠান হয়। ছবি: এএফপি
নিজেকে রক্ষার ব্যাপারে ইসরায়েলের অধিকারের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। তবে বেসামরিক মানুষের প্রাণহানি এড়াতে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
যুদ্ধবিরতিতে উভয় পক্ষকে রাজি করাতে আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে আজ ওই অঞ্চলে সফরে যাচ্ছেন জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন।
গাজা উপত্যকায় গতকাল আবার স্থল অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। যুদ্ধবিমান ও সামরিক হেলিকপ্টারের সহায়তা নিয়ে স্থলবাহিনীর ওই অভিযানে গতকালও হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। প্রাণ বাঁচাতে গাজার বাসিন্দারা বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটছেন। এর আগে ১৩ জুলাই দিবাগত রাত থেকে প্রথম গাজায় স্থল অভিযান শুরু করেছিল ইসরায়েলি নৌ কমান্ডোরা। এক দিন পরই ওই স্থল হামলা স্থগিত করা হয়েছিল।
৮ জুলাই থেকে ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে ইসরায়েলের সর্বশেষ হামলার সূত্রপাত ইসরায়েলি তিন কিশোরকে সম্প্রতি অপহরণ ও হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে। হামাসই ওই ঘটনা ঘটায় বলে মনে করে ইসরায়েল। তবে হামাস তা অস্বীকার করে। পরে ফিলিস্তিনি এক কিশোরকে একইভাবে হত্যা ও অপহরণের পর উত্তেজনা নতুন মাত্রা পায়। এরপর গাজা থেকে রকেট ছোড়া হচ্ছে—এমন দাবি তুলে ‘অপারেশন প্রটেক্টিভ এজ’ শুরু করে ইসরায়েল।

গাজায় আবার স্থল অভিযান, আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটছে মানুষ

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় গতকাল শুক্রবার আবার স্থল অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। যুদ্ধবিমান ও সামরিক হেলিকপ্টারের সহায়তা নিয়ে স্থলবাহিনীর ওই অভিযানে গতকাল নিহত হয়েছে অন্তত ২৪ জন। আহত হয়েছে ২০০ জন। প্রাণ বাঁচাতে গাজার বাসিন্দারা বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটছে। খবর এএফপি, বিবিসি ও রয়টার্সের।
হামাস হুঁশিয়ারি করে বলেছে, এ আগ্রাসনের জন্য ইসরায়েলকে চড়া মূল্য দিতে হবে। ইসরায়েলি হামলার জবাবে তারা গাজা থেকে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে রকেট ছুড়ছে। ইসরায়েল বলছে, গতকাল এক ইসরায়েলি সেনা নিহত হয়েছেন। তবে কোথায় ও কীভাবে নিহত হয়েছেন, তা সুনির্দিষ্ট করে জানানো হয়নি।
এর আগে ১৩ জুলাই দিবাগত রাত থেকে প্রথম গাজায় স্থল অভিযান শুরু করেছিল ইসরায়েলি নৌ কমান্ডোরা। তবে এক দিন পরই ওই স্থল হামলা স্থগিত করা হয়েছিল। ৭ জুলাই থেকে গতকাল পর্যন্ত গাজায় ইসরায়েলি অভিযানে নিহত ব্যক্তির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৬১। এই সময়ে আহত হয়েছে এক হাজার ৯২০ জন।

>>গাজার একটি হাসপাতালে যন্ত্রণায় কাঁদছে ইসরায়েলি হামলায় আঘাত পাওয়া এক শিশু। ওই হামলায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে তাদের বাড়িটি l ছবি: এএফপি
গাজায় স্থল অভিযানের ঘোষণা দিয়ে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানায়, ‘হামাস ১০ দিন ধরে জল, স্থল ও আকাশপথে ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতি অবসানের জন্য বারবার প্রস্তাব দিলেও হামাস তা নাকচ করেছে। তাই গাজায় আবারও স্থল অভিযানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)।’ ওই ঘোষণায় আরও বলা হয়, ইসরায়েলি জনগণকে বেপরোয়া সন্ত্রাসের হাত থেকে রক্ষা করতে হামাসের ‘সন্ত্রাসী অবকাঠামো’ ধ্বংস করাই এই অভিযানের লক্ষ্য।
এদিকে গাজায় ইসরায়েল হামাসের বিরুদ্ধে স্থল অভিযান আরও বাড়াতে প্রস্তুত। দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গতকাল এ কথা বলেছেন। তিনি বলেন, সেনাবাহিনী হামাসের সুড়ঙ্গগুলো লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে। কিন্তু এ কাজ কেবল বিমান হামলা চালিয়ে করা সম্ভব নয়। নেতানিয়াহু বলেন, ‘আমি আরও ব্যাপক পরিসরে স্থল অভিযান চালানোর প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি। সেনাবাহিনী সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নিচ্ছে।’
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র মেজর আরি সালিকার বলেন, গাজায় হামাসের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনার কেন্দ্র, বিভিন্ন স্থাপনা ও সুড়ঙ্গগুলো ধ্বংস করতেই স্থল অভিযানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
গাজার সেজাইয়া এলাকার বাসিন্দা বাসিল আরিয়ার বলেন, সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত থেমে থেমে হামলা হয়েছে। বাড়িতে পানি নেই, বিদ্যুৎ নেই। কোনো রকমে জীবন নিয়ে জাতিসংঘ শিবিরে আশ্রয় পেয়েছেন তিনি।
গাজার জরুরি সার্ভিসের মুখপাত্র আশরাফ আল-কুদরা গতকাল জানান, শুক্রবার সকালে গাজার দক্ষিণাঞ্চলে হামলায় নিহত একজনকে উদ্ধার করা হয়। তার আগে দক্ষিণাঞ্চলের খান ইউনিস এলাকায় হামলায় দুই ব্যক্তি নিহত হন। খান ইউনিসেই পৃথক হামলায় একই পরিবারের চার সদস্য নিহত হন। ট্যাংকের গোলায় নিহত হন অপর তিনজন। হতাহতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।
কাতারে নির্বাসিত হামাসের প্রধান খালেদ মিশেল বলেছেন, দখলদার ইসরায়েল জল ও আকাশপথে হামলা চালিয়ে লক্ষ্য অর্জন করতে না পেরে স্থল অভিযানের ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু এই অভিযানও ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে। ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস হামলা বন্ধের দাবি জানিয়ে বলেছেন, এই অভিযান আরও রক্তপাত বৃদ্ধি করবে।
নেতানিয়াহুকে কেরির ফোন: ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে টেলিফোন করে গাজা অভিযানে পরোক্ষ ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনার আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি। পাশাপাশি যত দ্রুত সম্ভব যুদ্ধবিরতিতে যাওয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এ তথ্য জানানো হয়।

কুতুবদিয়ায় ঘরহারা মানুষের চরম দুর্গতি জোয়ারের পানিতে ক্ষতি ৫ কোটি টাকা by এম.এ মান্নান

কুতুবদিয়ায় গত এক সপ্তাহে ভরা পূর্ণিমার জোয়ারের পানি উঠে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ কোটি টাকার বেশি। উত্তর ধুরুং ইউনিয়নে,কাইছার পাড়া, পূর্ব চর ধুরুং বেড়িবাধঁ ভেঙে এবং উপজেলার  আলী আকবর ডেইল,তাবোরের চর, কুমিড়া ঘোনা, বড়ঘোপ দক্ষিণ অমজাখালী,কেয়ারবিল মলম চর, পশ্চিম ঘিলা ছড়ি প্রভৃতি স্থানের ভাঙা বেড়িবাধঁ দিয়ে অবাধে পূর্ণিমার ফুঁসে ওঠা পানি প্রবেশ করে লোকালয়ে। এতে ঘরহারা মানুষের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে।

গত ৭ দিনে সব চেয়ে ক্ষতি হয়েছে উত্তর ধুরুং ইউনিয়নে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বে জোয়ারের মাত্র দু‘দিন আগে পূর্ব চর ধুরুং ৩০০ মিটার ভাঙা বেরিবাধঁ জরুরী মেরামত শেষ করেন হারুন ও গিয়াস নামের দু‘জন ঠিকাদার। জমানো  বস্তার পরিবর্তে সেখানে কাচা মাটি দিয়ে সংস্কার করায় জোয়ারের পানির ধাক্কায় দ্রুত ভেঙে যায় বলে স্থানীয় বাসিন্দা মিজবাহ উদ্দিন অভিযোগ করেন। সেখানে শক্ত ভাবে কাজ না হওয়ায় পুরো ইউনিয়নে ৭ দিন চলে লোনা পানির তান্ডব।
তলিয়ে যায় প্রায় ৫‘শ কাচা ঘর-বাড়ি সহ ৫‘শ হেক্টর  সদ্য রোপিত আউশ জমিতে।  মাটির দেয়াল সহ অন্তত: ৩০০ বাড়ি দেবে গেছে দু‘দিনের মধেই। হাঁস-মুরগী,গরু.ছাগল,পুকুর মাছ কিছুই বাদ যায়নি ক্ষতির কবল থেকে।  অনেকে বাড়ির  আসবাব-পত্র বের করার সুযোগও পাননি। আশ্রয় নিয়েছে আজম সড়কে। ওই ইউনিয়নে প্রায় ৫০০ হেক্টর জমিতে  আউশ চাষ করা হয়েছিল। লোনা পানিতে ধান মরে যাওয়ার আশংকায় দিন কাটছে চাষিদের। নয়াকাটা,জইজ্যার পাড়া,মনছুর হাজীর পাড়া, চাইন্দার পাড়া,কাইছার পাড়া প্রভৃতি গ্রামে চলছে শোকের ছায়া।এখন পর্যন্ত সরকারি কোন সাহায্য মেলেনি দূর্ভোগী-গৃহহারাদের। প্রশিক্ষন গ্রহণের জন্য উপজেলা চেয়ারম্যান,ভাইস চেয়ারম্যান,মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান,নির্বাহি অফিসার সবাই দ্বীপের বাইরে রয়েছেন।এমনকি দূর্যোগপূর্ণএলাকা উত্তর ধুরুং ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজউদ্দৌলাহ  তিনিও মামলার দরুণ লাপাত্তা। পাশে নেই কেউ। দক্ষিন ধুরুংইউপি চেয়ারম্যান নিজ উদ্যোগে ১২১ পরিবারে চাল,চিড়া,নগদ অর্থ প্রদান করলেও তা যথেষ্ট নয় বলে জানান ইউপি সদস্য ওমর ফারুক।উপজেলায় জোয়ারে প্রায় ৫ কোটি টাকার ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করছে  ভূক্তভোগীরা জানান।
এ দিকে আলী আকবর ডেইল, তাবারের চর, খুদিয়ার টেক, জেলে পাড়া, অমজাখালী, নাছিয়ার পাড়া,কিরণ পাড়া, কৈয়ারবিল, লেমশীখালীর উপকুল এলাকায় অন্তত: দেড় হাজার হেক্টর রোপিত আউশ দু‘দফায় বিনষ্ট হয়ে পড়েছে। নাছিয়ার পাড়ার চাষি মৌং জয়নাল আবেদীন বলেন, তার ৩ একর রোপিত আউশ বিনষ্ট হয়ে গেছে। আবার রোপন করার চারা নেই তার।উপজেলা উদ্বিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা গিয়াস উদ্দিন বলেন,উত্তর ধুরুংইউনিয়নে আউশ চাষের ৭০০ হেক্টর জমি রয়েছে। বেশ কয়েকজন  চাষীদের মতে দেড়‘শ হেক্টর জমির চারা বিনষ্ট  হতে পারে বলে জানান। তবে বৃষ্টি হলে ক্ষতির পরিমাণ কমে যাবে বলে তিনি মনে করেন।
জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যাওয়া ক্ষতি- গ্রস্ত পরিবারের সাহায্যে সরকারি ত্রাণ পৌছেনি। খোলা আকাশের নীচে বসবাস করছে শত শত গৃহহারা মানুষ। গতকাল বৃহ:বার জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য  মুহাম্মদ শফিউল আলম কুতুবী বৃহস্পতিবার দূর্গত এলাকা পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্থদের খোঁজ-খবর নেন। বেড়িবাঁধের জরুরী নির্মাণসহ প্রয়োজনীয় ত্রাণসামগ্রী পোঁছানোর জন্য সরকারের প্রতি জোরালো দাবী জানিয়েছেন তিনি।  মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাটির জরুরী বাঁধ সংস্কারের টেন্ডার হলেও পানি উন্নয়ন বোর্ডের অসাধু কর্তা ব্যক্তি ও সংষ্ট­ দুর্নিতিবাজ টিকাদারের অবহেলায় এই মানবিক বিপর্যয়সহ খাদ্য নরাপত্তার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন কুতুবদিয়া বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আ.স.ম.শাহরিয়ার চৌধূরীসহ আরো অনেকে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় উত্তর ধূরুংয়ের চরধূরুং এলাকা দিয়ে  আসা পানি পশ্চিম চরধূরুং, জমির বাপের পাড়া, কাইছার পাড়া, পিল্লার পাড়া, কালারমার পাড়া, ফুড়ার পাড়া ও হায়দার পাড়া তলিয়ে গিয়েছে। পরে আজম রোড ভেঙ্গে দক্ষিণে মনছুর আলী হাজী পাড়া, নয়া পাড়া, আইক্কার পাড়া, চাইন্দার পাড়া, জহির আলী সিকদার পাড়া, নাপিত পাড়া, চাটি পাড়া, ফরিজ্যার পাড়া, আজিম উদ্দিন সিকদার পাড়া, ছাদের ঘোনা, বাঁকখালী, মনু সিকদার পাড়া, আকবরবলী পাড়া, নজুমিয়া বাপের পাড়া, ফয়জানি বাপের পাড়া ধ্বসে গিয়ে ব্যাপক ফসলহানি হয়েছে। দক্ষিণ ধূরুংয়ের মদন্যা পাড়া, অলি পাড়া, বাতিঘর পাড়া, লেমশীখালীর পেয়ারাকাটা, কৈয়ারবিলের মলমচর, বিন্দাপাড়া, বড়ঘোপের দক্ষিণ মুরালিয়া, আলী আকবর ডেইলের তাবালেরচর এলাকায় ভাঙ্গা বেড়িবাঁধ দিয়ে অনবরত সমুদ্রের পানিতে জোয়ারভাটা চলছে। এতে করে এলাকার পুকুর-জলাশয় লবণ পানিতে টইটম্বুর। নলকূপ বিকল হয়ে সুপেয় পানীয় জলের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। গেল ‘জো-র’ পানি নেমে গেলে সংশ্লিষ্ট কাজের টিকাদারের নিয়োগকৃত সাব টিকাদার নামমাত্র মাটির কাজ করে বরাদ্ধের সমুদয় টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ করেন এলাকার ক্ষতিগ্রস্থ লোকজন। হাজার হাজার হেক্টর জমিতে ফসল উৎপাদন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এদিকে বেড়িবাধের বাইরে থাকা প্রায় ৯শ’পরিবারের জরুরী পুনর্বাসন দাবী করেন কৈয়ারবিলর ইউপি চেয়ারম্যান আজমগীর মাতবর। দ্বীপটির ৪০কি.মি. বেড়িবাঁধের মধ্যে প্রায় ১৫ কি.মি. অধিক ঝুঁকিপূর্ণ বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনিসহ উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা  কুমিল্লার বার্ডে প্রশিক্ষণে থাকার কথা জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুমিনুর রশিদ।

Friday, July 18, 2014

কুতুবদিয়ায় দু’টি সড়কের বেহাল দশা ধুরুং জেটিতে ৫ বছর ধরে পণ্য ওঠা-নামা বন্ধ by এম.এ মান্নান

কুতুবদিয়া ধুরুং জেটি ঘাটে পণ্য ওঠা-নামা হয়না ৫ বছর ধরে। জেটিতে যাত্রী ওঠা-নামা করলেও চট্টগ্রাম কিংবা কক্সবাজার থেকে বোট যোগে ব্যবসায়িরা মালামাল এনেও খালাস করেন না এই ঘাটে।ফলে জেটি মূলত: অকেজো হয়ে পড়ছে দিন দিন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ধুরুং জেটিঘাটে শুধু যাতায়াত ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় মালবাহি ট্রলি কিংবা যানবাহন যেতে পারেনা এইঘাটে। ধুরুংবাজার টু সতরুদ্দীন রোডে য্নাবাহন চলেনা কয়েক বছর যাবত। ৫ কিলোমিটার দূরত্বের এই সড়কটি সংস্কারের অভাবে রিকসা পর্যন্ত চলেনা এখন। একই ভাবে ধুরুংবাজার টু মিরাখালী সড়কে পেয়ারাকাটা পর্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চলাচল করলেও সেখান থেকে বেড়িবাধঁ হয়ে ধুরুংঘাট পর্যন্ত যানবাহন চলেনা। মাত্র আধা কিলোমিটার কাচাঁরাস্তা  যানবাহন চলাচলের অন্তরায় হয়ে আছে।
ধুরুং জেটিঘাটে যাতায়াতের দু‘টি সড়কের বেহাল দশায় মালবাহি ট্রলি চলাচল করছেনা। যে কারণে জেটি থাকলেও পন্য খালাস সম্ভব হচ্ছেনা। প্রতিদিন ধুরুংবাজারের অন্তত: চার‘শ ছোট-বড় ব্যবসায়িদের চট্টগ্রাম থেকে বোট যোগে মালামাল দরবার জেটিঘাটে খালাস করে ৭ কিলোমিটার ঘুরে ধুরুংবাজারে নিয়ে আসতে হচ্ছে। ঘাটের মালামাল পরিবহনে ট্রলি শ্রমিক বলেন,ধুরুং জেটি ঘাটে ব্যবসায়িদের পণ্য খালাস হয়না ৫ বছর ধরে। ফলে দরবার জেটিতে মাল খালাস করে ৭ কি.মিটার ঘুরে বাজারে পণ্য নেয়া হচ্ছে।
মালামাল পরিবহনের মাঝি বধির চন্দ্র দাস বলেন, ধুরুং জেটিতে পণ্য খালাস হয়না প্রায় ৪/৫ বছর। মালবাহি ট্রলি চলেনা। এ ছাড়া দরবার জেটি ঘাটে পণ্যের অতিরিক্ত টাকা নেয়া হয়। প্রতি বস্তাকাচা মারিচ ১৫ টাকা,ঔষধের কার্টন ১০০ থেকে ২০০ টাকা। আটা,ময়দা, চাউল সব পণ্যের জেটি মাশুল বেশি দিতে হয়।প্রতি দিন গড়ে শুধু ধুরুং বাজারের ব্যবসায়িদের ২০-২৫ টি ট্রলি মালামাল যাচ্ছে। ধুরুং জেটির চেয়ে কয়েকগুণ খরচ বেশি পড়ে দরবার জেটি দিয়ে পরিবহন করলে।ধুরুং বাজারে যমুনা অয়েল কোম্পানীর ডিলার এস.এম মন্জুর আলম,হার্ডওয়ার ও আরএফএল ডিলার এম.শওকত আলম,মুদি ব্যবসায়ি বাবু চিত্ত রঞ্জন বিশ্বাস,কসমেটিক্স ব্যবসায়ি নেজাম উদ্দিন বলেন,ধুরুং জেটিঘাট সড়কে পরিবহন সুবিধা না থাকায় ৭ কিলোমিটার অদূরে দরবার জেটিতে তাদের পন্য খালাস করে মালামাল নিয়ে আসতে হচ্ছে। এতে সময় ও পরিবহন খরচ উভয়ই বেশি যাচ্ছে ।পেয়ারাকাটা থেকে ধুরুং জেটি পর্যন্ত মাত্র আধা কিলোমিটার রাস্তা ইটসলিন করার দাবি জানান তারা।
ধুরুং জেটি ঘাটের ইজারাদার বদি আলম বলেন, বর্তমানে জেটিতে শুধু যাত্রী ওঠা-নামা করে থাকে। পণ্য খালাস হয়না ৫ বছর যাবত। গত পাঁচ বছরে জেটি ইজারায় তার প্রায় ৭ লক্ষ টাকা লোকসান গুণতে হয়েছে। বছরে ৪/৫ লক্ষ টাকা ইজারা নিয়ে লাভের মুখ দেয়া যায়না।  পণ্য পরিবহনে ট্রলি বা ট্রাক যাতায়াত করতে পারেনা সড়কের বেহাল দশা- সংস্কারের অভাবে।বছরের পর বছর এ ভাবেই চলছে সংস্কার বিহীন গুরুত্ব পূর্ণ রাস্তা দু‘টি। যে কারণে জেটি ইজারা নিয়েও তাকে প্রতিবছর  লোকসান গুনতে হচ্ছে।তিনিও পেয়ারাকাটা থেকে ধুরুং জেটি পর্যন্ত অন্তত: ইটসলিন করার দাবি জানান।

Wednesday, July 16, 2014

‘প্রস্তুত হচ্ছে মৃত্যুফাঁদ’ by আল আমিন

ঢাকার সদর ঘাটের ওপারে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের চরখেজুরবাগ থেকে পোস্তগোলা ব্রিজ পর্যন্ত ডক ইয়ার্ডগুলোর আশপাশে বিকট শব্দের জন্য কানপাতা দায়। চলছে পুরনো লঞ্চ মেরামতের কাজ। আসন্ন ঈদ উপলক্ষে প্রায় ৩৫টি ডকে ৫০টি লঞ্চের মেরামতের কাজ চলছে। মেরামত শেষে ওই লঞ্চগুলো যাত্রী পরিবহনের জন্য নদীতে নামানো হবে। ওই এলাকা ঘুরে জানা গেছে মেরামতের জন্য নেয়া লঞ্চগুলোর বেশির ভাগই ছিল ত্রুটিপূর্ণ বা অকেজো। ঈদকে সামনে রেখে এগুলো মেরামতের তোড়জোড় শুরু করেছেন মালিকরা। যাত্রীদের চাপের সময় এসব লঞ্চ দিয়ে স্বল্প ও দূরযাত্রার যাত্রী বহন করা হবে এসব লঞ্চে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিপার্টমেন্ট অব শিপিং সার্ভের ঢাকা জোনের পরিচালক মির্জা সাইফুর রহমান বলেন, ‘ঈদ এলে যেমন আমরা সবাই নতুন জামা কাপড় কিনি তেমন করে   জরাজীর্ণ লঞ্চগুলো রং করা হয়। মেরামত করা হয় না। ফিটনেসবিহীন লঞ্চ যেন যাত্রীবহন না করতে পারে এজন্য কর্তৃপক্ষ সতর্ক রয়েছে। যদিও এ পর্যন্ত বিভিন্ন দুর্ঘটনায় পড়া লঞ্চের মধ্যে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নিয়ম লঙ্ঘনের অভিযোগ ওঠে।

রাজধানীর সদর ঘাটের ওপারে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের চর খেজুরবাগ থেকে পোস্তগোলা ব্রিজ পর্যন্ত নদীর ধারে প্রায় ২ কিলোমিটার ব্যাপী গড়ে উঠেছে ডক ইয়ার্ড। এখানে প্রায় ৩৫টি ডক ইয়ার্ড আছে। ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন ডক ইয়ার্ড এর শ্রমিকরা ক্ষতিগ্রস্ত লঞ্চগুলো মেরামতে ব্যস্ত রয়েছেন। অনেক প্রতিষ্ঠান শ্রমিকদের ওভার টাইম কাজ করাচ্ছেন। বিনিময়ে অতিরিক্ত টাকা দিচ্ছেন। ডকইয়ার্ডে দেখা গেছে, অনেক লঞ্চের নিচের অংশ মেরামত করা হচ্ছে যেখান দিয়ে পানি প্রবেশ করে।
সূত্র জানায়, লঞ্চের ফিটনেস পরীক্ষা করে থাকে ডিপার্টমেন্ট অব শিপিং সার্ভে ঢাকা জোন। কোন লঞ্চ নদীতে যাত্রী নিয়ে চলাচল করার আগে এই প্রতিষ্ঠান থেকে প্রথম ফিটনেস সার্টিফিকেট নিতে হয়। নইলে তারা যাত্রী পরিবহন করতে পারে না। অভিযোগ পাওয়া গেছে, যেসব ফিটনেসবিহীন লঞ্চ নদীতে চলাচলে অনুপযোগী ওই লঞ্চের মালিকদের কাছে ঘুষ নিয়ে সার্ভে কর্মকর্তারা ফিটনেস সার্টিফিকেট দিয়ে থাকেন।
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের চরখেজুর বাগান এলাকায় রহমান ডকে গিয়ে দেখা গেছে, প্রিন্স আওলাদ-১ নামে তিনতলা একটি লঞ্চকে সম্পূর্ণ উল্টোভাবে রাখা হয়েছে। তিন তলায় কেবিনের কাঠগুলো শুকিয়ে চৌচির হয়ে গেছে। সূত্র জানায়, এটি প্রায় এক মাস আগে থেকে মেরামত শুরু হয়েছে। লঞ্চটির মূল কাঠামো দুর্বল হয়ে যাওয়ায় এটি মেরামত করতে আর কিছু দিন সময় লাগবে। রমজানের পরেই ঈদে ওই লঞ্চ যাত্রী পরিবহনের জন্য নামানো হবে বলে তারা জানান।
রহমান ডক ইয়ার্ডের লঞ্চ মেরামতকারী বয়োজ্যেষ্ঠ শ্রমিক আবদুল ওদুদ বিশ্বাস জানান, যেসব লঞ্চ মেরামত করা হয় তা সেগুলোর বেশির ভাগই লক্কড় ঝক্কর। পুরনো অথবা জরাজীর্ণ হয়ে গেছে। একটি লঞ্চ সাধারণত প্রায় ৭-৮ বছর ভালভাবে সার্ভিস দিয়ে থাকে। তারপর এটির বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। যেমন, লঞ্চের নিচ ফেটে যাওয়া, ইঞ্জিন ও যান্ত্রিক সমস্যা, আশপাশে ফাটল, রঙ উঠে যাওয়া, ভারসাম্য হারিয়ে ফেলা, ঝাঁকি দেয়া, বেইজমেন্টে পানি ঢুকে যাওয়া ইত্যাদি।
তিনি বলেন, যেসব লঞ্চ অধিক ক্ষতিগ্রস্ত ওসব লঞ্চ মেরামত করতে প্রায় ২ মাস লেগে যায়। রহমান ডকে দু’টো লঞ্চ ঈদ উপলক্ষে মেরামত করা হচ্ছে।
অগ্রগতি ডক ইয়ার্ডের শ্রমিক আবদুর রহিম জানান, তাদের এই ডকে দু’টো লঞ্চ মেরামত করা হচ্ছে। একটি এজাজুল-১ এবং অপরটি এমভি বোগদাদিয়া। এই দু’টি লঞ্চে প্রায় তিন মাস আগে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, অনেক লঞ্চ নষ্ট হয়ে ডকে মাসের পর মাস পড়ে থাকে। ঈদ এলেই তারা মেরামত করার উদ্যোগ নেয়। ঈদ এলেই লঞ্চ কেন মেরামতের করা হয় প্রশ্ন করা হলে, ঈদ এলেই রাজধানীবাসী গ্রামের বাড়িতে ছুটে যান। তাছাড়া উপকূল এলাকায় যাতায়াতের অন্যতম সহজলভ্য পথ হচ্ছে লঞ্চ। তাই অনেক যাত্রী লঞ্চে করে গ্রামের বাড়িতে ঈদ করতে যান। আর এতে অধিক মুনাফা লাভ করেন লঞ্চ মালিকরা।
বেবি সাহেবের ডকের শ্রমিক সামসুল আরেফিন সুমন জানান, ঈদ এলেই আমাদের ব্যস্ততা বেড়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত লঞ্চগুলো দিনরাত পরিশ্রম করে মেরামত করছি। যে সব লঞ্চ এখন ভাল করা হচ্ছে ওই সব লঞ্চ কয়েকদিন আগে পড়ে ছিল।
মেসার্স শিপ বিল্ডার্সর অন্যতম সুপারভাইজার হাসানুল মবিন দাবি করে বলেন, যেসব লঞ্চে  কিছু ত্রুটি থাকে সেগুলো যাত্রীর নিরাপত্তার স্বার্থে মেরামত করা হয়ে থাকে। চাকচিক্য ও সৌন্দর্য প্রকাশের জন্য কোন কোন লঞ্চ এমনিতেই রঙ করা হয়ে থাকে। অধিক ক্ষতিগ্রস্ত লঞ্চগুলো মেরামত করে শুধু কেন ঈদে নামানো হয় প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘এ প্রশ্ন মালিক পক্ষকে করেন।’ মাদারীপুর ডকের প্রধান কর্মকর্তা হারুন জামিল স্বীকার করেন, একটি লঞ্চ যখন চলাচলে অনুপযোগী হয় তখন মালিক পক্ষকে অনেক টাকা খরচ করতে হয়। ঈদের আগা মুহূর্তে অনেক লঞ্চ মালিক তাদের লঞ্চ মেরামত করে। পরে ঈদে অধিক যাত্রী বহন করে মেরামতের খরচ তুলে নেন।
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের অগ্রগতি ডকের পাশের স্থানীয় বাসিন্দা ও রাইহান মিলের মালিক রিয়াদুল ইসলাম রিয়াদ জানান, ‘লঞ্চের কেবিন তৈরির জন্য বিভিন্ন ডকের মালিক আমার কাছ থেকে কাঠ সংগ্রহ করে থাকে। ঈদ এলে এই ডক পাড়ায় শ্রমিকরা ব্যস্ত হয়ে পড়েন। অন্য সময় তেমনটা তাদের ব্যস্ততা চোখে পড়ে না। নদীর পাশে লঞ্চ মেরামতের কারখানা গড়ে ওঠায় এ এলাকার পরিবেশের অনেক ক্ষতি হচ্ছে। তিনি এসব ডক অন্য কোথাও সরিয়ে নেয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান।
ডিপার্টমেন্ট অব শিপিং সার্ভের ঢাকা জোনের পরিচালক মির্জা সাইফুর রহমান বলেন, পুরনো লঞ্চগুলো রং করার পাশাপাশি কেবিনে নতুন কাঠ লাগানো হয়ে থাকে। কিছুদিন আগে ওই এলাকা পরিদর্শন করে এসেছি। আমার জানা মতে লঞ্চের নিচের অংশ কেউ মেরামত করছেন না। তবে যদি কোন প্রতিষ্ঠান এ কাজ করে থাকেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। টাকার বিনিময়ে ফিটনেস সার্টিফিকেট দেয়া হয় কিনা এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সার্ভে প্রতিষ্ঠানের নামে কোন দুর্নীতির কোন অভিযোগ নেই।
যোগাযোগ করা হলে ঢাকা নদী বন্দর সদর ঘাটের যুগ্ম পরিচালক সাইফুল ইসলাম জানান, প্রায় লঞ্চগুলো সদর ঘাটের টার্মিনাল থেকে ছেড়ে যায়। এছাড়াও ঈদে প্রচ- চাপ থাকায় সদর ঘাটের আশপাশের এলাকা থেকে ছেড়ে যায়। এ টার্মিনাল থেকে যেন ঝুঁকিপূর্ণ কোন লঞ্চ ছেড়ে না যায় এজন্য এবার ঈদে কঠোর নজরদারি করা হবে।

Friday, July 11, 2014

খাটের ওপর বসে কি কেউ আত্মহত্যা করে?

খাটের ওপর বসে আত্মহত্যা বিরল ঘটনা। প্যাথটিক দৃশ্যটি দেখে এটি আত্মহত্যা ? না পরিকল্পিত খুন! এনিয়ে মানুষের মাঝে যথেষ্ট জল্পনা-কল্পনার জন্ম দিয়েছে। কুতুবদিয়া ভূমি অফিসের শান্ত-শিষ্ট স্বভাবের কর্মচারি কৈয়ারবিলের হাজী নজির আহমদ প্রকাশ ডবল হাজী’র পুত্র ফরিদুল আলম’ ঝুলন্ত লাশ। গত ১৮জুন এ ঘটনা ঘটে  নিউজটি Kutubi Hasan এর fb>hasankutubi থেকে নেয়া

পুলিশি হয়রানির অভিযোগ- বড়ঘোপে খুনের শিকার ফরিদুল আলম’র বৃদ্ধা মা নুরুজ্জাহানের সংবাদ সম্মেলন by হাছান কুতুবী

উপজেলার ৮০ বছরের বৃদ্ধ মহিলা নুরুজ্জাহান তার পুত্র ফরিদুল আলম খুনের সাথে জড়িত ঘাতকদের বাঁচাতে বিশাল অঙ্কের মিশন নিয়ে কুতুবদিয়া থানা পুলিশ তাকেসহ তার পরিবারের ওপর অমানুষিক নির্যাতনের অভিযোগ করেন। গতকাল শুক্রবার কুতুবদিয়া প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন। এ সময় পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা তার সাথে উপস্থিত ছিলেন। বড়ঘোপের মৃত হাজী নজির আহমদ প্রকাশ ডবল হাজীর স্ত্রী অভিযোগ করেন আমার নিহত পুত্র ফরিদুল আলম’র সাথে তার স্ত্রী রোকেয়া বেগম ডেজির দাম্পত্য কলহ ছিল। প্রায় সময় তার স্ত্রী ও পুত্র ওয়াহিদুল আলম রিয়াদ আমার পুত্রকে নির্মমভাবে নির্যাতন করত। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৮জুন তারা আমার পুত্রকে পরিকল্পিতভাবে খুন করে গলায় রশি বেঁধে তার শয়ন কক্ষের জানালার সাথে ঝুলিয়ে রেখে আত্মহত্যার প্ররোচনা সৃষ্টির অপপ্রয়াস চালায়। ওইদিন থানা পুলিশ আমার পুত্রকে উদ্ধারকালে উপস্থিত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা চেয়ারম্যান ও গন্যমান্যরা এটি আত্মহত্যা নয়, পরিকল্পিত খুন বলে মন্তব্য করেন। এ ঘটনায় তিনি পুত্র খুনের দায়ে তার স্ত্রী রোকেয়া বেগম ডেজি ও তার পুত্র ওয়াহিদুল আলম রিয়াদকে আসামী করে থানায় এজাহার দায়ের করেন। কিন্তু থানা পুলিশ তার এ এজারটি গ্রহন না করে তার অপর নাতী তৌহিদুল আলম’র দায়েরকরা সম্পূর্ণ মিথ্যা এজাহারটি মামলা হিসেবে রেকর্ড করেন বলে অভিযোগ করেন। যে মামলায় তাকেসহ তার নিরাপরাধ ব্যবসায়ি পুত্র মাহবুবুল আলম, তার স্ত্রী আয়েশা আখতার, আলমগীর, ইসকান্দার মির্জাকে আসামী করা হয়েছে বলে দাবী করেন। অনতিবিলম্বে ওই জঘন্য মিথ্যা মামলাটি বাতিল করে তার এজাহারটি মামলা হিবেবে রেকর্ড করে আসল খুনিদের বিচারের কাটগড়ায় হাজির করার জন্য পুলিশ প্রশাসনের প্রতি জোর দাবী জানান নুরুজ্জাহান।

Saturday, July 5, 2014

'দুর্বৃত্তদের দ্রুত গ্রেফতার করুন' -শনিবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সিএইচটির নেতারা এ দাবি জানান

পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক আর্ন্তজাতিক কমিশনের (সিএইচটি) গাড়িবহরে হামলায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছে সংগঠনটির নেতারা।

>>সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন কমিশনের কো-চেয়ারম্যান সুলতানা কামাল-সমকাল
শনিবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, 'কেন গাড়ি বহরে হামলা করা হয়েছে তা আমাদের কাছে বোধগম্য নয়। কারা হামলা করেছে সে ব্যাপারেও আমরা নিশ্চিত নই। বিষয়টি আমরা পুলিশকে অবহিত করবো। আমরা চাই দ্রুত দুর্বৃত্তদের গ্রেফতার করে শাস্তির আওতায় আনা হোক।'

শনিবার বিকেলে রাঙ্গামাটিতে হামলার শিকার হয় পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক আন্তর্জাতিক কমিশন (সিএইচটি)।

এ হামলায় রাঙ্গামাটি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনু সোহেল ইমতিয়াজ ও ইলোরা দেওয়ান নামে প্রতিনিধি দলের এক সদস্য আহত হন। এ কারণে পার্বত্য চট্টগ্রাম সফর বাতিল করে চট্টগ্রাম ফিরে এসে সন্ধ্যায় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে।

কমিশনের কো-চেয়ারম্যান সুলতানা কামাল বলেন, 'হামলা করে কেউ আমাদের প্রতিহত করতে পারবে না। সশস্ত্র সন্ত্রাসী, জঙ্গীগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আমরা যেভাবে সতর্ক থাকি, ভবিষ্যতে একইভাবে সাবধান থাকবো। কিন্তু আমরা আমাদের কাজ চালিয়ে যাবো।'

হামলার বর্ণনা দিয়ে তিনি জানান, সমঅধিকার আন্দোলন নামে একটি সংগঠনের নেত্রী নূরজাহান তাদের ওপর হামলায় নেতৃত্ব দিয়েছেন। নূরজাহান শুরু থেকেই পার্বত্য চট্টগ্রাম আর্ন্তজাতিক কমিশনের সদস্যদের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক কথাবার্তা বলে লোকজন জড়ো করেন। পরবর্তীতে তার নেতৃত্বে হামলা শুরু হয়।

কেন, কি উদ্দেশ্যে তাদের ওপর হামলা হয়েছে?- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'এ বিষয়ে আমাদের কোনো ধারণা নেই। যারা আমাদের প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছিল তারাই বিষয়টি বলতে পারবে।'

পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন অঞ্চল পর্যবেক্ষণের জন্য বান্দরবান, খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি এই তিন পার্বত্য জেলা সফরের অংশ হিসেবে কমিশনের কো-চেয়ারপার্সন সুলতানা কামাল, সদস্য স্বপন আদনান, খুশী কবীর, অ্যাডভোকেট সারা হোসেন, হানা শামস ও সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামানসহ ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ৫ জুলাই থেকে ৮ জুলাই বান্দরবান জেলার বিভিন্ন এলাকায় মতবিনিময় করার কথা ছিল।

এরই অংশ হিসেবে তারা শনিবার রাঙামাটি যায়। কিন্তু আগে থেকেই কমিশনের এ সফরকে প্রতিহত করার ঘোষণা দেয় পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদ, পার্বত্য নাগরিক পরিষদসহ ছয়টি বাঙালি সংগঠন। তারা সফরকালে সড়ক ও নৌ পথ অবরোধের ঘোষণা দেয়। এ নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। তারপরও শনিবার কমিশনের সদস্যরা রাঙামাটি পৌঁছলে তাদের গাড়িবহরে হামলা করা হয়। এরপর কমিশনের সদস্যরা পুলিশের নিরাপত্তায় চট্টগ্রাম ফিরে আসে।

এদিকে শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদ, পার্বত্য নাগরিক পরিষদসহ বাঙালি সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা বান্দরবানের কে›ন্দ্রীয় জামে মসজিদ এলাকায় এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে সড়ক ও নৌপথের অবরোধ প্রত্যাহারের  ঘোষণা দেয়।

পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদের বান্দরবান জেলা সভাপতি আবদুল কাইয়ুম অবরোধ প্রত্যাহারের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, 'পার্বত্য অঞ্চলে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বিরুদ্ধে উস্কানিদাতা তথাকথিত পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক আন্তর্জাতিক কমিশনের (সিএইচটি) সদস্যদের বান্দরবান সফর বাতিল করায় আপাতত অবরোধ প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। তাদের সফর প্রতিহত করতেই আমরা অবরোধের ডাক দিয়েছিলাম।'