Wednesday, October 14, 2015

দলীয় প্রতীকে স্থানীয় নির্বাচন সরকারের নীল নকশারই বাস্তবায়ন : এমাজ উদ্দীন

দলীয় প্রতীকে স্থানীয় নির্বাচন করার মাধ্যমে সরকার নিজেদের নীল নকশারই বাস্তবায়ন বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ড. এমাজ উদ্দীন আহমেদ। মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে স্বাধীনতা ফোরাম আয়োজিত রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক ড: পিয়াস করিমের ১ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে স্মরণ সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
এমাজউদ্দীন বলেন, ‘আমি ভেবে অবাক হই যারা দলীয় প্রতীকে স্থানীয় নির্বাচন করার যে সিদ্ধান্ত গ্রহন করছে তাদের মধ্যে কি এমন কেউ নেই যারা বলবে এটা হয় কি করে ? বাংলাদেশে এটা হওয়ার তো কথা নয়। ’
দেশের গ্রাম অঞ্চলের শান্তিপূর্ণ ভোটকে বিনষ্ট করার জন্যই সরকার এই নীল নকশা বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এমাজউদ্দীন বলেন,দেশের গণতন্ত্র, আইনের শাসন, ব্যক্তি স্বাধীনতা,নিরপত্তাবোধ,এই সরকারের শাসনামলে আমরা হারিয়েছি, আর হারাতে চাই না। তাই সময় এসেছে সরকারের বিরুদ্ধে নতুনভাবে প্রস্তুতি নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার।
তিনি বলেন, শহীদ মিনারের মালিকানাধীন এমন হাতে চলে গেছে যেখানে শুধু কিছু চেনা মানুষ যেতে পারছেন। শহীদ মিনারের স্মূতি তো এমনটি হতে পারে না।সেখানে কারোর অবদান দেখা হচ্ছে না দেখা হচ্ছে কেবল অনুসারী।
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি আবু নাসের মোহাম্মাদ রহমতউল্লাহর সভাপতিত্বে স্মরণ সভায় আরো বক্তব্য রাখেন,বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বিগ্রেডিয়ার জে.(অব:) আ স ম হান্নান শাহ,যুবদলের সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল,অর্থনীতিবিদ মাহবুব উল্লাহ,ব্যারিষ্টার পারভেজ আহমেদ সাবেক কমিশনার ফরিদউদ্দীন আহমেদ প্রমুখ।

নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা শেষ হতেই ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ

ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা শেষ হয়ে যাওয়ার পর ভোলায় জেলেদের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ছে। গত রোববার পর্যন্ত মাঝারি ও ছোট আকারের ইলিশ শিকার করেছেন তাঁরা।
মা ইলিশ শিকারে সরকারি নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে ৯ অক্টোবর। রাত ১২টায় সময়সীমা শেষ হওয়ার পর ওই রাতেই জেলেরা মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে মাছ ধরতে নামেন।
দৌলতখান পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের মাঝি সিরাজুল ইসলাম বলেন, অমাবস্যার প্রভাবে মাছ ভালোই পড়ছে জালে। তবে বড় ইলিশ কম। সবই মাঝারি আকারের। পেটে ডিমও নাই; যেগুলোর আছে, সেগুলো ছোট। এক হালি মাছ এক হাজার টাকা থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
চরফ্যাশন উপজেলার ঢালচর ইউনিয়নের রফিক মাঝি বলেন, নদীতে নেমে দুই জোতে (জোয়ার) ৭৫ হাজার টাকার ইলিশ পেয়েছেন তিনি।
একই ইউনিয়নের আনন্দবাজারের খালেদ মাঝি, তজুমদ্দিন উপজেলার স্লুইসগেট মাছঘাটের আলমগীর মাঝি ও সদর উপজেলার বিশ্বরোডের মাথার সফি মাঝি বলেন, মা ইলিশের প্রজনন মৌসুমের নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার পর থেকে তাঁরা প্রতিদিন ১৫ থেকে ৩৫ হাজার টাকার মাছ পাচ্ছেন।
সদর উপজেলার মাছঘাট চডারমাথা, বিশ্বরোড, তুলাতুলি, ভোলা খাল ঘাটে; দৌলতখান উপজেলার পাতার খাল, চৌকিঘাটা, ভবানীপুর; তজুমদ্দিন উপজেলার স্লুইসগেট, লালমোহনের বাত্তিরখাল ও চরফ্যাশনের সামরাজ ঘাট ঘুরে এবং খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ইলিশের বাজার আবার জমজমাট হয়ে উঠেছে।
পাতারখাল নতুন মাছঘাটের আড়তদার আলমগীর হোসেন বলেন, নিষেধাজ্ঞার মৌসুম শেষ হওয়ার পরের দুই দিন ভালোই মাছ ধরা পড়েছে।
ভোলার দৌলতখানের মৎস্য কর্মকর্তা তুষার মজুমদার ও চরফ্যাশন উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তা আসাদুজ্জামানবলেন, ধরা পড়া মাছের বেশির ভাগ ১১ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা আর ৪০০-৬০০ গ্রাম ওজনের।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা প্রীতিশ কুমার মল্লিক বলেন, তিনি নদীর তীরে গিয়ে দেখেছেন জেলেরা ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাচ্ছেন।

স্কুল গেটে ছাত্রীকে খুন করলো বখাটে

স্বপ্নপূরণ হলো না কবিতার। লেখাপড়া শিখে দেশের সেবা করার স্বপ্ন ছিল তার। এ কারণেই পিতার বাড়ি ছেড়ে নানার বাড়ি থেকে লেখাপড়া করতো। কিন্তু বখাটের প্রেম প্রত্যাখ্যান করায় তাকে জীবন দিতে হলো। গাজীপুরের কালিয়াকৈর টান সূত্রারপুর উত্তর গজারিয়া এলাকায় গতকাল দুপুরে ১০ম শ্রেণীর ছাত্রী কবিতা রানী দাসকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় ঘাতক যুবককে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছে এলাকাবাসী। নিহত কবিতা রানী দাস ধামরাই থানার রামপুর এলাকার সাগর মনি দাসের কন্যা। সে কালিয়াকৈর উপজেলার  উত্তর গজারিয়া এলাকায় নানাবাড়ি থেকে স্থানীয় বিজয় সরণি উচ্চবিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতো। আটককৃত যুবক রামমনি দাসের ছেলে বিক্রম মণিদাস। সে সাভার গণবিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।
 পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দুপুরে  নানাবাড়ি থেকে  উপজেলার সূত্রাপুর এলাকার  বিজয় সরণি উচ্চ বিদ্যালয়ে  টেস্ট পরীক্ষা দিতে আসে কবিতা। এ সময় বিদ্যালয় গেটের কাছাকাছি পৌঁছলে বখাটে বিজয় অতর্কিতে হামলা চালিয়ে কবিতাকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে। বিষয়টি দেখতে পেয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ছাত্ররা তাকে ধরে গণধোলাই দেয়। খবর পেয়ে কালিয়াকৈর থানা পুলিশ এসে ওই বখাটেকে আটক করে। এ সময় মারাত্মক আহত কবিতাকে কালিয়াকৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়ার পথেই মৃত্যু হয়। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেলক্সের কর্তব্যরত ডা. আল-ইমরান মাহমুদ জানান, নিহত কবিতার দেহের বুক, হাত, পেট ও গলার কাছে ছুরিকাঘাত করা হযেছে।  অতিরিক্ত  রক্তক্ষরণের কারণে তার মৃত্যু হয়েছে।
নিহতের বাবা সাগর মনিদাস কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি জানান, তার মেয়ের স্বপ্ন ছিল  লেখাপড়া করে অনেক বড় হবে। নিহতের নানা ননী গোপাল দাস বলেন, আমার নাতনীর স্বপ্ন ছিল সে লেখাপড়া করে অনেক বড় হবে। কিন্তু ওই ঘাতক সব স্বপ্ন কেড়ে নিল। এসএসসি পরীক্ষাই দিতে পারলো না। বিজয় সরণি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দেওয়ান মো. কামরুজ্জামান জানান, কবিতা খুব মেধাবী ছাত্রী ছিল । এ ঘটনার নিন্দা জানানোর কোন ভাষা জানা নেই। তিনি কবিতার ঘাতক বিজয় চন্দ্র সরকারের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। এ ব্যাপারে কালিয়াকৈর থানার অফিসার ইনচার্জ ওমর ফারুক জানান, ঘাতক বিজয়কে আটক করা হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তবে প্রেম সংক্রান্ত বিষয়ে এই ঘটনা ঘটতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

দূরে বাতিঘর... by মোহাম্মদ বদরুজ্জামান

কুতুবদিয়ার বাতিঘর
এখানে শরতের সকালে যেন অন্য রকম এক আয়োজন চলছে। নদীর বুকে ঠিকরে পড়ছে কোমল আলো। যাত্রীরা পড়িমরি করে উঠছে সমুদ্রগামী ট্রলারে। খুব ভোরে চট্টগ্রামের ফিরিঙ্গি ঘাটে পৌঁছালাম তড়িঘড়ি। চলেছি সমুদ্রভ্রমণে। ট্রলারের লোকজনের হাঁকডাক দেখে বুঝলাম, ঘাট চিনতে ভুল হয়নি আমাদের। হাঁসফাঁস করে আমরাও উঠলাম সেই ট্রলারের ছাদে।
কর্ণফুলীর বুকে নোঙর করা অসংখ্য জাহাজ, ট্রলার আর কার্গো দৃষ্টি কেড়ে নিল আমাদের। বাস্তবে এত দৈত্যাকৃতির নৌযান তো দেখিনি আগে। কর্ণফুলীর মোহনায় যেতে না যেতেই কোস্টগার্ডের একটি স্পিডবোট এসে থামিয়ে দিল আমাদের ট্রলার। কোস্টগার্ডের কর্মকর্তারা ট্রলারের মাঝিমাল্লাদের শাসিয়ে দিলেন এবং চোখ রাঙিয়ে বুঝিয়ে দিলেন যে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করা অন্যায়। যা হোক, ক্রমেই বঙ্গোপসাগরের অসীম জলরাশির মধ্যে ঢুকে পড়ল আমাদের ট্রলার। আর বাতিঘরের কুতুবদিয়া আমার মধ্যে কৌতূহলও বাড়িয়ে দিল সেই সঙ্গে।
কুতুবদিয়ার বাতিঘর সেই প্রাইমারি স্কুলে পড়ার সময়েই আমাকে রোমাঞ্চিত করেছিল। নাবিকেরা রাতের বেলায় বাতি দেখে জাহাজের গতিপথ নিয়ন্ত্রণ করেন। প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূর থেকে নাবিকেরা কুতুবদিয়ার ঘূর্ণমান বাতি দেখতে পান। ব্যাপারটা কী দারুণ! কিন্তু পাহাড়-পর্বত ভ্রমণে ঝোঁক বেশি থাকায় কুতুবদিয়ার কথা হয়তো ভুলেই বসেছিলাম। এবার ঈদের পর বেড়াতে যাওয়ার বায়না ধরে বসলেন বন্ধু এহসান। সমুদ্রপথে কুতুবদিয়া ভ্রমণের কথা শুনে এহসান নিজের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে ছাড়লেন না।
বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্ষুধায় পেট চোঁ চোঁ করে উঠল। ট্রলারে খাবারের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় পড়লাম বিপদে। উপকূল ধরে চলছে আমাদের নৌযান। কোথাও বড় বড় ঢেউয়ের সঙ্গে চলে উথাল-পাতাল খেলা। একেক করে কেটে গেল কয়েক ঘণ্টা। এদিকে প্রচণ্ড তাপে অস্থির হয়ে উঠল যাত্রীরা। আনোয়ারা-বাঁশখালীর উপকূল ছেড়ে গভীরে চলে গেলাম ক্রমে। অপেক্ষার যেন শেষ নেই, কুতুবদিয়ারও কূলকিনারা নেই। অবশেষে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা পর বঙ্গোপসাগরের মাঝে যেন জেগে উঠল অচেনা এক দ্বীপ। বেলা একটার সময় নামলাম দরবার ঘাটে। তারপর জিপে চেপে বড় ঘোপ বাজার।
উত্তর-দক্ষিণে লম্বা কুতুবদিয়া দ্বীপের যোগাযোগব্যবস্থা একেবারে খারাপ না। তবে নিম্নাঞ্চল ও উপকূলের অনেক জায়গায় কাঠ ও বাঁশের সেতু দিয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছে। পার্বত্যাঞ্চলের চাঁদের গাড়ির আদলে চলাচলের জন্য এখানে আছে ফোর হুইল ড্রাইভ গাড়ি (জিপ নামেই বেশি পরিচিত)। টেম্পো আর রিকশাও আছে পর্যাপ্ত। হাতিয়া দ্বীপেও দেখেছিলাম এ রকম যাত্রীবাহী জিপ। মহেশখালী আর সোনাদিয়ার মতো এ দ্বীপেও চলার পথে চোখে পড়ল বড় বড় লবণখেত। নাবিকদের পথ দেখানোর সুবিধার্থে ১৮৪৬ সালে ব্রিটিশ সরকার কুতুবদিয়ায় নির্মাণ করে বাতিঘরটি। দ্বীপটির মধ্যাঞ্চলীয় দক্ষিণ ধুরমং এলাকার পশ্চিম উপকূলে এটি অবস্থিত। দেশের সবচেয়ে প্রাচীন এ বাতিঘর ১৯৬০ সালের ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে হারিয়ে যায় সমুদ্রগর্ভে। ষাটের দশকেই পুনরায় আরেকটি বাতিঘর নির্মাণ করা হয় বেড়িবাঁধের ভেতরে। তবে ভাটার সময় পুরোনো বাতিঘরের ধ্বংসাবশেষের কিছু অংশ এখনো দেখা যায়।
হোটেলের বারান্দা থেকে সাগরের অসীম জলরাশি চোখে লাগাল ভেলকি। কুতুবদিয়া দ্বীপের পশ্চিম কূলজুড়ে সমুদ্রতট। তবে মূল সৈকত বড় ঘোপ আর ধুরুং এলাকাজুড়ে। কোথাও কোথাও ঝাউবন ঘেরা সৌন্দর্যের হাতছানি। সুন্দর তটে ফুটবল আর ক্রিকেট খেলায় মেতে ওঠেন এখানকার তরুণেরা। সূর্যাস্তের আগেই নেমে পড়লাম সৈকতে। বালুহীন সমুদ্রতটে পা ছোঁয়াতেই ভিন্ন রকম এক অনুভূতি। সূর্যাস্তের পর গোধূলির আলো স্মিত হওয়ার আগেই বহির্নোঙরে অপেক্ষমাণ জাহাজের আলো ছড়িয়ে পড়ল পানিতে। সে এক অসাধারণ দৃশ্য!
রাতের সৈকত অন্য রকম রূপ নিয়ে হাজির। পূর্ণিমার জোছনাস্নাত তটে বসে জোয়ারের গর্জন রোমাঞ্চিত করল আমাদের। সাগরের বুকে নোঙর করা আলোকময় জাহাজে ভাসতে ইচ্ছে করল। দক্ষিণ ধুরুংয়ের বাতিঘরের আলো উদ্দীপনা জাগাল বেশ। যার আলোয় নাবিকদের দুচোখ চিকচিক করে ওঠে।
সকালে আবার গেলাম সৈকতে। একেবারে নির্জন ও শান্ত-কোমল সাগর পাড়। ভেজা তটে হাঁটলাম ঘণ্টা খানেক। লাল কাঁকড়ার খেলা দেখে মুগ্ধ না হয়ে পারলাম না। সোনাদিয়া সৈকতের মতো এখানেও প্রচুর লাল কাঁকড়ার বিচরণ। সোনাদিয়ায় দেখা যায় এদের দলবদ্ধভাবে চলতে। এখানে বিচ্ছিন্নভাবে।
বড় ঘোপ স্টিমার ঘাটে মানুষের ভিড়। ফেরার অপেক্ষায় আছি, এমন সময় গোঁ গোঁ শব্দ করে একটি স্পিডবোট ঘাটে এসে ভিড়ল। দ্রুতগামী সে যানে চেপে পাড়ি দিলাম কুতুবদিয়া চ্যানেল। মগনামা ঘাটে এসে মনে হলো, ওপারের বিচ্ছিন্ন দ্বীপটি কীভাবে যেন গড়ে দিল মনের মধ্যে এক সেতু।
সূর্য নেমে যায় যেন সমুদ্রে। ছবি: সোলাইমান হোসেন
যেভাবে যাবেন
কয়েকটি রুটে যাওয়া যায় দ্বীপ কুতুবদিয়ায়। দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে চট্টগ্রামে এসে ফিরিঙ্গি ঘাটে কুতুবদিয়াগামী ট্রলার ধরতে হবে। সকাল ছয়টা থেকে সাতটার মধ্যে দুটি ট্রলার ছেড়ে যায় কুতুবদিয়ার উদ্দেশ্যে। কুতুবদিয়ার বড় ঘোপ স্টিমার ঘাটে নেমে উপজেলা সদরে যেতে পারবেন রিকশায় চেপে।
চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার মগনামা ঘাট পর্যন্ত এস আলম পরিবহনের মিনি বাস যাতায়াত করে। বহদ্দারহাট কিংবা শাহ আমানত সেতুর কাছ থেকে উঠতে পারবেন বাসে। মগনামা ঘাট থেকে স্পিডবোট কিংবা ট্রলারে চেপে পার হবেন কুতুবদিয়া চ্যানেল।
ঢাকা থেকে কক্সবাজারগামী বাসে চেপে নামতে পারেন চকরিয়া বাজারে। চকরিয়া থেকে মগনামা ঘাট যাওয়া যায় জিপ কিংবা সিএনজিচালিত অটোরিকশায়। এটাই অপেক্ষাকৃত সহজ পথ। তবে যাদের পানিভীতি কম, ট্রলারে সমুদ্র ভ্রমণের সুযোগ হাতছাড়া করা ঠিক হবে না।
প্রয়োজনীয় তথ্য
কুতুবদিয়া দ্বীপ ভ্রমণের জন্য শীতকাল বেছে নিন। কারণ, এ দ্বীপে শীতকালে লবণ চাষ হয়। শুঁটকির প্রক্রিয়াকরণও চলে শীত মৌসুমে। আর মাছও পাওয়া যায় পর্যাপ্ত। এ ছাড়া তাপ কম থাকায় সমুদ্রপথে ট্রলার ভ্রমণটাও হবে আরামদায়ক। ট্রলারে যাওয়ার সময় সকালের নাশতা সঙ্গে নিতে ভুলবেন না। কুতুবদিয়ার সৈকত পরীক্ষিত না। তাই জোয়ার ছাড়া অন্য সময়ে পানিতে নামা নিরাপদ নয়। বড় ঘোপ বাজারে থাকা ও খাওয়ার হোটেল আছে।
দ্বীপ কুতুবদিয়া

রিভিউ আবেদন নিয়ে মুজাহিদের দুই প্রশ্ন by হাবিবুর রহমান

সুপ্রিম কোর্টের আপিল রায় রায় পর্যালোচনা করে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ রিভিউ আবেদন দায়ের করার জন্য আইনজীবীদেরকে তার সুনির্দিষ্ট মতামত দিয়েছেন। তিনি রিভিউ আবেদনে গুরুত্বপূর্ণ দুটি প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন।
প্রশ্ন দুটি হলো
প্রথম প্রশ্ন : মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জেরায় স্পষ্টভাবে স্বীকার করেছেন যে, রাজাকার, আলবদর, শান্তি কমিটি কোন তালিকায় মুজাহিদের নাম নেই। হঠাৎ করে ৪২ বছর পর কিভাবে তিনি আলবদরের কমান্ডার হয়ে গেলেন? তিনি আলবদর কমান্ডার হলেন কি করে?
দ্বিতীয় প্রশ্ন : ১৯৭১ সালে তিনি ২৩ বছর বয়সের একজন ছাত্র ছিলেন। একজন ছাত্র কিভাবে আধা-সামরিক বাহিনীর কমান্ডার হতে পারেন? কে কখন কোথায় তাকে এই পদে নিয়োগ দিলেন এই মর্মে রাষ্ট্রপক্ষ কোনো মৌখিক বা দালিলিক সাক্ষ্য উপস্থাপন করতে পারেনি।
আজ মঙ্গলবার বিকাল ৩ টায় আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের সাথে তার পাঁচ আইনজীবীর সাক্ষাতে রিভিউ আবেদনে এই দুটি প্রশ্ন রাখার পরামর্শ দেন।
মুজাহিদের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো: শিশির মনির বলেন, তার এই মতামতগুলো পুনর্বিবেচনার আবেদনে (রিভিউ পিটিশন) অন্তর্ভুক্ত করা হবে এবং আগামীকাল সকালে মহামান্য আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিভিউ পিটিশনটি দায়ের করা হবে।
তিনি বলেন, মুজাহিদ আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তিনি মনে করেন মহামান্য আপিল বিভাগ তার পুনর্বিবেচনার আবেদনটি মঞ্জুর করবেন এবং দন্ড মওকুফ করে বেকসুর খালাস প্রদান করবেন।
তিনি দেশবাসীকে সালাম জানিয়েছেন, সবার দোয়া চেয়েছেন।

কঠোর গোপনীয়তায় কুনিও হোশির লাশ দাফন

রংপুরে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত জাপানি নাগরিক কুনিও হোশির লাশ স্থানীয় মুন্সিপাড়া কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। গতরাত আড়াইটার পর কোনো এক সময় কঠোর গোপনীয়তার মধ্যে তাকে দাফন করা হয়। জেলা প্রশাসক রাহাত আনোয়ার খান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে কবরস্থানের রেজিস্ট্রারে এখনো পর্যন্ত কুনিও হোশির নাম অন্তর্ভুক্ত হয়নি।
এর আগে সকালে রংপুরের মেয়র শরফুদ্দিন ঝন্টু রাত আড়াইটার দিকে তার কাছ লাশ দাফনের অনুমতি নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছিলেন। কিন্তু কোথায় তাকে দাফন করা হয়েছে তা জানাননি তিনি।
সূত্র জানিয়েছে, রাত দেড়টায় রংপুর মেডিক্যালের হিমঘর থেকে লাশ নেয় প্রশাসন। এরপর রাত আড়াইটায় সিটি মেয়রেরর কাছে দাফনের অনুমতি চায়। তিনি অনুমতি দেয়ার পর রাতেই তাকে কঠোর গোপনীয়তায় দাফন করা হয়।
এদিকে আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের পর কুনিও হোশির লাশ এত কঠোর গোপনীয়তায় দাফন করায় জনমনে বিস্ময়ের সৃষ্টি হয়েছে।
গত ৩ অক্টোবর নগরের উপকণ্ঠে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন কুনিও হোশি। এরপর থেকে তার লাশ রংপুর মেডিক্যাল কলেজের হিমঘরে রাখা হয়। কিন্তু কুনিও হোশির স্বজনদের পক্ষ থেকেও তার লাশ নেয়ার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করা হয়নি। আবার বাংলাদেশে দাফন করার ব্যাপারে জাপান সরকারের কোনো আপত্তি নেই বলে জানানো হয়। তাই রংপুরের স্থানীয় প্রশাসনকে জাপান দূতাবাসের সাথে কথা বলে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। গতকাল সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এ-সংক্রান্ত চিঠি রংপুরের বিভাগীয় কমিশনারকে পাঠানো হয়।

দামেস্কের রুশ দূতাবাসে রকেট হামলা

সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে রুশ দূতাবাসে মঙ্গলবার দুটি রকেট আঘাত হেনেছে। প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের প্রতি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সমর্থন ঘোষণা করার প্রেক্ষাপটে এই হামলা হলো। হামলার পর ব্যাপক আতঙ্কের সৃষ্টি হয়।
কোন পক্ষ হামলাটি চালিয়েছে তা জানা যায়নি। আসাদবিরোধী গ্রুপগুলো অতীতে রুশ দূতাবাসকে টার্গেট করেছিল। কিন্তু এবার তারাই তা করেছে কি না তা তারা দাবি করেনি।
হামলায় কেউ হতাহত হয়েছে কি না তা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। দামেস্কের পূর্ব প্রান্ত থেকে রকেট দুটি নিক্ষেপ করা হয়েছে বলে সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে।
এছাড়া শত শত সিরিয়ান দূতাবাসের কাছে গিয়ে আসাদের প্রতি রুশ সমর্থনের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করে।

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রধান দুই কারারক্ষী বরখাস্ত

প্রিজন সেলে বন্দীর সাথে স্বজনদের কথা বলানো এবং শীর্ষ সন্ত্রাসী জোসেফের সাথে কথা বলার অভিযোগে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের দুই প্রধান কারারক্ষীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার প্রিজন সেলে ঘটনাটি ঘটে। পরে আইজি প্রিজনের নির্দেশে তাদের দুজনকে বরখাস্ত করা হয়েছে বলে কারাগারের একাধিক সুত্র জানিয়েছে।
মঙ্গলবার রাতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার নেছার উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, প্রধান কারারক্ষীরা দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন না করায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
খোজ নিয়ে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার প্রধান কারারক্ষী নজরুল ইসলামের ডিউটি ছিল বারডেম হাসপাতালে। আরেক কারারক্ষী জসিম হাবিলদারের ডিউটি ছিল প্রিজন সেলে। কিন্তু প্রধান কারারক্ষী নজরুল বারডেমের বন্দীদের দায়িত্ব পালন না করে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিজন সেলে এসে দেখা করেন তালিকার্ভূক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী জোফেসের সাথে। ওই সময় প্রিজন সেল ভিজিট করতে যান ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের একজন ডেপুটি জেলার। তিনি জোসেফের সাথে প্রধান কারারক্ষী নজরুলকে কথা বলতে দেখেন। পরে তিনি কারা কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট করেন। এরই প্রেক্ষিতে প্রধান কারারক্ষী নজরুল ও হাবিলদার জসিমকে কৈফিয়ত তলব করা হয়। কিন্তু এরই মধ্যে আইজি প্রিজন ঘটনটি জানতে পেরে দুজনকে সাময়িক বরখাস্তের নির্দেশ দেন।