অমাবশ্যা ও পূর্ণিমার জোয়ারে লোনা পানি
কুতুবদিয়া দ্বীপের লোকালয়ে ঢুকে ব্যাপক এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এ যেন ধারা
বাঁধা নিয়মে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবোর) এর অধীনে
কুতুবদিয়া দ্বীপ রক্ষার জন্য ৪০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। চলতি বর্ষা
মোসুমে জোয়ারের পানিতে দ্বীপের উত্তর ধুরুং ইউনিয়নের ৪ কিলোমিটার ও আলী
আকবর ডেইল ইউনিয়নে এক কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ভেঙে সম্পূর্ণ বিলিন হয়ে গেছে।
দ্বীপের ৬ ইউনিয়নের ৪০ বর্গকিলোমিাটর বেড়িবাঁেধর মধ্যে ১৭ কিলোমিটার
বেড়িবাঁধ বিধ্বস্থ থাকায় অমাবশ্যা ও পূর্ণিমার সময় উপকূলের লোকালয়ে
জোয়ার-ভাটা বসে। গত আষাঢি পুর্ণিমার জোয়ারের সময় সাগরের নোনা পানি
স্বাভাবিকের চেয়ে ৩/৪ ফুট উচ্চতা বৃদ্ধি পেলে কুতুবদিয়ার উপকূলে ব্যাপক
এলাকা প্লাবিত হয়। ঐ সময় দ্বীপ রক্ষা বাঁধ ভেঙে গিয়ে সাগরের লোনা পানি
লোকালয়ে ঢুকে প্রায় ৩০ গ্রাম ও হাজার হাজার একর ফসলি জমি প্লাবিত হয়।
দ্বীপের
আলী আকবর ডেইল ইউনিয়নের কাহারপাড়া,তাবলরচর, আনিচের ডেইল, বড়ঘোপ ইউনিয়নের
আজম কলোনী, মিয়ার ঘোনা, অমজাখালী, কৈয়ারবিল ইউনিয়নের মতিরবাপেরপাড়া,
বিন্দাপাড়া, মহাজনপাড়া, মফজল ডিলারপাড়া, পরান সিকদারপাড়া, মলমচর, লেমশীখালী
ইউনিয়নের পেয়ারাকাটা,গাইনেকাটা,উত্তরধুরুং ইউনিয়নের ফয়জনিরবাপেরপাড়া,
সতরউদ্দিন,চরধুরুং, আকবরবলীপাড়া, দক্ষিণধুরুং ইউনিয়নের বাতিঘরপাড়া, আলীফকির
ডেইলসহ ৩০ গ্রামের ১৮কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ভাঙা থাকায় এসব এলাকা অরক্ষিত হয়ে
পড়েছে।

গত
১৭ আগস্ট কুতুবদিয়া উপজেলার উত্তর ধূরং ইউনিয়নের কাইছারপাড়া, নয়াকাটা,
চরধুরং, আকবরবলীপাড়া এলাকাসহ বিধ্বস্থ ও ক্ষত-বিক্ষত বেড়িবাঁধের একাধিক
স্থান পরিদর্শন করেছে পানি সম্পদ মন্ত্রী ব্যারিষ্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ,
পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নজরুল ইসলাম (বীর প্রতীক), বেসামরিক বিমান পরিবহন
ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব খোরশেদ আলম চৌধুরী, কুতুবদিয়া-মহেশখালী আসনের
সাংসদ আশেক উল্লাহ রফিক, চকরিয়া-পেকুয়া আসনের সাংসদ মৌলভী মোঃ ইলিয়াছ,
বিশ্বব্যাংকের উপদেষ্টা আছাদুজ্জামান খান। পরিদর্শনকালে মন্ত্রী কুতুবদিয়া
রক্ষার জন্য অতি সত্তর স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হবে বলে আশ্বস্থ করেন।
এ সময় ক্ষতিগ্রস্থ স্থানীয় লোকজন মন্ত্রির সামনে শ্লোগানে শ্লোগানে বলতে
থাকেন “আমরা রিলিফ চাই না, আমরা স্থায়ী বেড়িবাঁধ চাই”।
কুতুবদিয়া
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এটিএম নুরুল বশর চৌধুরী, ইউএনও মোঃ মমিনুর রশিদ,
উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির হায়দার প্লাবিত এলাকা
সরেজমিনে পরিদর্শন করেন। অতিসত্তর ভাঙ্ন বেড়িবাঁধ জরুরী ভিত্তিতে মেরামত
করার জন্য বরাদ্দ চেয়ে সংশ্লিষ্ট পাউবোর কর্তৃপক্ষের নিকট চাহিদাপত্র
প্রেরণ করা হয়েছে বলে কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেন।
এদিকে কৈয়ারবিল ইউনিয়নের
বাসিন্দা প্রবিণ রাজনীতিবিদ শামসুল আলম জানান, কৈয়ারবিল ইউনিয়নে পাউবোর
বেড়িবাঁধের বাইরে (বাঁেধর পশ্চিমে) পরান সিকদারপাড়া, মিজ্জিরপাড়া, মফজল
ডিলারপাড়া, মহাজনপাড়া, মতির বাপেরপাড়াসহ ৫ গ্রামের ৯৭৬ পরিবার বসবাস করে।
৯১’সনের ঘূর্ণিঝড়ের পর থেকে এ পর্যন্ত এসব পরিবারের লোকজন ঝড়-বৃষ্টিকে
মাথায় নিয়ে প্রতিকুল পরিবেশের সাথে যুদ্ধ করে আসছে। বর্তমানে প্লাবিত
এলাকার লোকজন পানীয় জল ও ব্যবহারের পানির সংকটে রয়েছে চরমে।
আলী আকবর
ডেইল ইউপির চেয়ারম্যান ফিরোজ খান চৌধুরী জানান, তাবলরচর গ্রামের এক
কিলোমিটার ভাঙন বেড়িবাঁধ দিয়ে পূর্ণিমা ও অমাবশ্যার জোয়ারের লোনা পানি
এলাকায় ঢুকে শত শত ঘরবাড়ি ফসলি জমি প্লাবিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। সাগরের
জোয়ারের পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়লে এসব প্লাবিত এলাকার লোকজন পাশ্ববর্তী
পশ্চিম তাবরলচর গ্রামের গণস্বাস্থ্য আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়।
পানি
উন্নয়ন বোর্ডের কুতুবদিয়ার উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোফাজ্জল হোসেন জানান,
জোয়ারে যেসব এলাকায় বেড়িবাধ ভেঙে গেছে ঐ এলাকাগুলো জরিপ করে প্রাক্কলন তৈরী
করা হচ্ছে। অতি সত্তর মেরামত কাজ করা হবে। বর্তমানে যেসব এলাকায় বেড়িবাঁধ
ভেঙে জোয়ারের পানি ঢুকছে এসব এলাকায় বালির বস্তা দিয়ে বাধ দেয়া হচ্ছে।
অবশ্য তাবলরচর গ্রাম এলাকার বাধ নির্মানের জন্য ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছে।
অতিসত্তর কাজ শুরু করবে।
Comments[ 0 ]
Post a Comment