সূর্য তখনো ওঠেনি। আমাদের বাস পৌঁছে গেছে
চকরিয়ার হারবাংয়ে। ২০ মিনিটের যাত্রাবিরতি। আমি আরো এক কিলোমিটার পরে
বড়ইতলী মোড়ে নামব। চারদিকে ঘন কুয়াশা। পূর্বাকাশ আলো মেলতে শুরু করেছে
ধীরে।
বড়ইতলা নেমে দেখি এক বেবিট্যাক্সিচালক পেছনের সিটে
কাঁথা জড়িয়ে ঘুমাচ্ছেন। একটু বিরক্ত হলেও যেতে রাজি হলেন। তবে ঘুম
ভাঙানোর জরিমানা হিসেবে ২০০ টাকার ভাড়া গুনতে হলো ২৫০ টাকা।

মগনামা ঘাটের জেটির ওপরেই নামাল। সামনের চ্যানেলটা পার হলেই কুতুবদিয়া
দ্বীপ। উঠে পড়লাম ইঞ্জিনচালিত নৌকায়। শিশিরে ভেজা নৌকার পাটাতনে পেপার
বিছিয়ে বসে পড়লাম। বেশিক্ষণ বসে থাকতে হলো না। আরো কয়েকজন লোক এলে মাঝি
বদর বদর করে নৌকা ছেড়ে দিলেন।
কুতুবদিয়া চ্যানেলটি বেশ প্রশস্ত। এই শীতেও সামান্য ঢেউ আছে। সময় লাগল ২০
মিনিট। ২১৬ বর্গকিলোমিটার আয়তনের ছোট্ট দ্বীপ কুতুবদিয়া। গুগল আর্থে
দেখতে লাউ আকৃতির। ঝাউবনে ঘেরা সমুদ্রসৈকত আছে। বাড়তি পাওনা জেলে-জীবন,
বাতিঘর, কুতুব আউলিয়ার মাজার, দেশের সবচেয়ে বড় বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্র
ইত্যাদি। বন্ধু আলীম অপেক্ষায় ছিল। দ্বীপেই ওর বাড়ি। মোটরসাইকেল নিয়ে
এসেছে। বাড়িতে যাওয়ার জন্য জোরাজুরি করল; কিন্তু আমি হোটেলেই থাকতে
চাইলাম। 'সমুদ্রবিলাস' সাগরের দিকে মুখ করা। বারান্দায় বসে সমুদ্রের ঢেউ
দেখা যায়। হোটেলে ব্যাগ রেখেই ক্যামেরা নিয়ে চলে গেলাম সৈকতে।
সৈকতটি নির্জন আর পরিচ্ছন্ন। মাঝেমধ্যে শুধু জেলেদের শুঁটকি তৈরির
ব্যস্ততা। উত্তর থেকে দক্ষিণে প্রায় ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ সমুদ্রসৈকত এখানে।
সৈকতের কোথাও কোথাও সবুজ দেয়াল তৈরি করেছে ঘন ঝাউবন। কোথাও দলে দলে
সি-গাল। সমুদ্রসৈকতটি দ্বীপের পশ্চিম পাশ বরাবর। মধ্যখানে এর প্রধান ব্যবসা
কেন্দ্র বরঘোপ বাজার। দক্ষিণ দিকের জায়গাটির নাম দক্ষিণ ধুরং। এখানেই
বাতিঘর। সমুদ্রপথে চলাচলকারী জাহাজের নাবিকদের পথ দেখাতে বহুকাল আগে এখানে
তৈরি করা হয়েছিল এই বাতিঘর। পুরনোটি ভাঙনে বিলীন হয়েছে। তবে এখনো ভাটার
সময় ধ্বংসাবশেষ উঁকি মারে। নতুন একটি তৈরি হয়েছে অবশ্য। বাতিঘর দেখে
বায়ুবিদ্যুৎকেন্দ্রের পথ ধরলাম, দ্বীপের একেবারে উত্তরে, আলী আকবরের ডেল
এলাকায়। প্রায় এক হাজার কিলোওয়াট বিদ্যুৎ তৈরি করতে পারে এটি। কেন্দ্রের
পাশেই বড় জায়গাজুড়ে কৃষকরা লবণ তৈরিতে ব্যস্ত। এর মধ্যে দুপুর গড়াতে
চলেছে। থাকার নিমন্ত্রণ না রাখলেও আলীমের খাবার নিমন্ত্রণ ছাড়তে পারিনি।
টাটকা সামুদ্রিক মাছের অনেক পদ ছিল সেদিন। ঢাকা পর্যন্ত সে স্বাদ নিয়ে
আসতে পেরেছিলাম।
কিভাবে যাবেন, কোথায় থাকবেন
কুতুবদিয়া যেতে হলে চড়তে হবে কক্সবাজারগামী বাসে। ঢাকা থেকে এস আলম,
সৌদিয়া, শ্যামলী বা ইউনিক পরিবহনের বাসে ভাড়া ৫৫০ থেকে ৬৫০ টাকা। বড়ইতলী
থেকে বেবিট্যাক্সি মেগনামা ঘাট যেতে জনপ্রতি ভাড়া ৩৫ টাকা। কুতুবদিয়া
চ্যানেল পার হতে হবে ইঞ্জিন নৌকায়, ভাড়া ২০ টাকা। কুতুবদিয়া ট্রলার ঘাট
থেকে বড়ঘোপ বাজারে রিকশা ভাড়া ২৫ টাকা।
থাকার জন্য আছে হোটেল সমুদ্রবিলাস। দুজনের একটি নন-এসি কক্ষের ভাড়া ৮০০
টাকা, তিনজনেরটি ১০০০ টাকা। যোগাযোগ : ০১৮১৯৬৪৭৩৫৫, ০১৭২২০৮৬৮৪৭
Comments[ 0 ]
Post a Comment