কক্সবাজারের সাগরদ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়া
ধুরুংবাজারে এলাকায় পুলিশ ও ১৮ দলের নেতা কমীদের মাঝে ব্যাপক সংঘর্ষে ৪ জন
নিহত হয়েছে। এসময় আহত হয়েছে পুলিশ সহ আরো অন্তত ২৩ জন।
মঙ্গলবার
সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ধুরুংবাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে। দু’পুলিশ নিখোঁজ
হলেও পরে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। কুতুবদিয়া ও চকরিয়া হত্যা কান্ডের
প্রতিবাদে জেলায় আগামী বৃহস্পতিবার সকাল সন্ধ্যা হরতালের ডাক দিয়েছে।
স্থানীয়
প্রত্যক্ষদর্শী সুত্রে জানা গেছে, ৬০ ঘন্টার হরতাল শেষে মঙ্গলবার সন্ধ্যায়
স্থানীয় বিএনপি ও জামায়াত ধুরুংবাজারে প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে।
মাগরিবের নামাজের পরপরই কুতুবদিয়া থানার একদল পুলিশ এসে সভা করতে বাধা দিয়ে
ওই মঞ্চ দখলে নেন। এতে পুলিশ ও জামায়াত শিবিরের মধ্যে সংঘর্ষ লেগে যায়।
জামায়াত শিবিরের কর্মীরা পুলিশের উপর হামলা চালালে পুলিশ ব্যাপক গুলি বর্ষণ
করে। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে উত্তর ধুরুং ইউনিয়নের আবু আহম্মদ (৫৫) ও
লেমশিখালী ইউনিয়নের আজিজুর রহমান (২০) মারা যান । সাড়ে ৭টার দিকে মারা যান
গুলিবিদ্ধ মোঃ পারভেজ (২৪) । এ ছাড়া রাত ৯টার দিকে তাজুল ইসলাম (২৯) নামের
আরো একজন মারা যায়। এ পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা দাড়ালো ৪ জনে। নিহত ৪ জনের
মধ্যে একজন জামায়াত ও ২ জন শিবির কর্মী বলে দাবী করেছেন উপজেলা জামায়াত
সেক্রেটারী শাহরিয়ার চৌধুরী।
ধুরুং ইউপি চেয়ারম্যান মো. আজাদ সত্যতা
স্বীকার করে বলেন, এ পর্যন্ত ৩ জন নিহত ও আরো ৬ জন গুলিবিদ্ধ সহ ২৪ জন আহত
হয়েছে। আহতদের মধ্যে বেশীর ভাগকে চট্টগ্রাম ুমেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে
যাওয়া হয়েছে। পুরো এলাকায় থেমে থেমে গুলি বর্ষণ হচ্ছে। বিরাজ করছে চরম
উত্তেজনা।
এদিকে,
সংঘর্ষ চলাকালে দু’পুলিশ নিখোঁজ হওয়ার খবর পাওয়া গেলেও এর সত্যতা নিশ্চিত
হওয়া যায়নি। কক্সবাজার পুলিশ সুপার মো.আজাদ মিয়ার মোবাইলে বার বার ফোন করার
পরেও তিনি রিসিভ করেননি।
কুতুবদিয়া ধুরুংবাজারে এলাকায় পুলিশ ও ১৮ দলের
নেতা কমীদের মাঝে সংঘর্ষ চলাকালে নিখোঁজ হওয়া ২ পুলিশ কনষ্টেবলকে রাত ৮
টায় উদ্ধার করা হয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টায় কুতুবদিয়া থানার ২
পুলিশ নিখোঁজ হয়েছিল। কুতুবদিয়ায় পুলিশের গুলিতে ৪ জন এবং গত রবিবার
চকরিয়ায় ২ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় ১৮ দল কক্সবাজার জেলায় বৃহস্পতিবার সকাল
সন্ধ্যা হরতালের ডাক দিয়েছে।
জেলা বিনেপির দপ্তর সম্পাদক ইউছুপ বদরী জানান, বৃহস্পতিবার ডাকা হরতাল কুতুবদিয়া, চকরিয়া সহ পুরো জেলা আওতায় থাকবে।
কুতুবদিয়া থানার ওসি জানিয়েছেন, নিখোঁজ ২ পুলিশ সদস্যকে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে।
এদিকে,
কুতুবদিয়ায় পুলিশের সাথে সংঘর্ষে জামায়াত শিবিরে সংঘর্ষে ৪ জন নিহত হওয়ার
ঘটনার জের ধরে মঙ্গলবার রাত ৯ টায় কক্সবাজার শহরেও ব্যাপক বিক্ষোভ করেছে
জামায়াত শিবির। জামায়াত শিবির কর্মীরা কক্সবাজার শহরের লালদীঘির পাড়, কৃষি
অফিস রোড, ফায়ার সার্ভিস এলাকা ও বাজার ঘাটায় বেশ কিছু যান বাহন ভাংচুর করা
হয়েছে। এসময় চলে পুলিশের সাথে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া। তবে হতাহতের খবর পাওয়া
যায়নি। । শহরের সব ধরনের দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়।
সংসদ সদস্য এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ এমপির বিবৃতি>>
কক্সবাজার জেলার কুতুবদিয়া
উপজেলার ধুরং বাজারে হরতাল পরবর্তী সমাবেশ পুলিশের হামলা ও গুলীবর্ষণে ৪
জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীসহ ৫ জনকে হত্যা, ২০ জন গুলীবিদ্ধসহ অর্ধশতাধিক আহত
হওয়ার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর
কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও কক্সবাজার-২ ( মহেশখালী-কুতুবদিয়া) আসনের
সংসদ সদস্য এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ এমপি।
এক বিবৃতিতে হামিদ আযাদ এমপি বলেন, সরকার গণআন্দোলনে ভীত হয়ে হত্যা,
সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের পথ বেছে নিয়েছে। টানা ৬০ ঘন্টার হরতালে পুলিশের
গুলীতে সারা দেশে ১৩ জন প্রাণ হারিয়েছে। শত শত মানুষকে আহত করা হয়েছে।
গ্রেফতার করা হয়েছে হাজার হাজার মানুষকে। সে ধারাবাহিকতায় আজ কুতুবদিয়া
উপজেলার ধুরং বাজারে জামায়াত-শিবিরের হরতাল পরবর্তী সমাবেশে পুলিশ বিনা
উস্কানীতে গুলীবর্ষণ করে আবু আহমদ, আজিজুর রহমান, তাজুল ইসলাম ও পারভেজসহ ৫
জনকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। পুলিশের উপর্যুপরি হামলা ও গুলীবর্ষণে ২০ জন
গুলীবিদ্ধ হয়ে গুরতর আহতসহ অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীকে আহত করেছ। কিন্তু
জুলুম-নির্যাতন চালিয়ে, গুলীবর্ষণ ও হত্যা করে গণআন্দোলন দমন করা যাবে না
বরং শহীদের রক্তের পথ ধরেই গণআন্দোন বিজয় লাভ করবে।
তিনি ধুরং বাজার হত্যাকান্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান এবং দায়ী
পুলিশ সদস্যদের বিচারের আওতায় জোর দাবী জানান। অন্যথায় গণআন্দোলনকে বিজয়ী
করে শহীদের রক্তের বদলা নেয়া হবে।
কুতুবদিয়ায় হত্যার প্রতিবাদে বুধবার বিক্ষোভ বৃহষ্পতিবার কক্সবাজারে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল
জামায়াত প্রেরিত প্রেস রিলিজ :
কুতুবদিয়ায় ১৮দলীয় জোটের শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালিয়ে ৩
জামায়াত-শিবির কর্মীকে নৃশংসভাবে হত্যা এবং অসংখ্য নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধ
হওয়ায় তীব্র নিন্দা প্রতিবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কেন্দ্রীয়
কর্মপরিষদ সদস্য ও কক্সবাজার জেলা আমীর মুহাম্মদ শাহজাহান, নায়েবে আমীর
মাওলানা মোস্তাফিজুর রহমান, সেক্রেটারি জিএম রহীমুল্লাহ। ২৫ অক্টোবর
চকরিয়ায় বিজিবির গুলিতে ৩ বিএনপি কর্মী এবং আজ (২৯ অক্টোবর) কুতুবদিয়ায় ৩
জামায়াত -শিবির কর্মী হত্যার প্রতিবাদে ১৮দলীয় জোটের আহবানে আগামীকাল
বুধবার বিক্ষোভ এবং ৩১ অক্টোবর বৃহষ্পতিবার কক্্সবাজারে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল
পালিত হবে। জেলাবাসীকে ১৮দল ঘোষিত কর্মসূচী স্বত:স্ফূর্তভাবে পালন করার
জন্য ১৮দলীয় জোটের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়েছে।
১৮ দলীয় জোটের বিবৃতি : চকরিয়ায়-কুতুবদিয়া হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার জেলাব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা সর্বাত্বক হরতাল
বাংলাদেশ
জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি কক্সবাজার জেলা শাখার সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য
শাহজাহান চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক এড. শামীম আরা স্বপ্না, বাংলাদেশ জামায়াত
ইসলামী কক্সবাজার জেলা শাখার আমীর মোহাম্মদ শাহজাহান, সেক্রেটারী জেনারেল
জি.এম রহিম উল্লাহ, বাংলাদেশ নেজামে ইসলামী সভাপতি হাফেজ ছালামত উল¬াহ,
সাধারণ সম্পাদক মৌলানা ইয়ছিন হাবিব, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস সভাপতি মৌলানা
নূরুল আলম আল-মামুন, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক সরওয়ার কামাল মঞ্জু, লিবারেল
ডেমোক্রেটিক পার্টি- এল.ডি.পির সভাপতি ছালামত উল্লাহ খাঁন, সাধারণ সম্পাদক
গোলাম কিবরিয়া, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির সভাপতি আর. এ. এম. ইসমাঈল ফারুক,
সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ তৌহিদুল¬াহ চৌধুরী, ন্যাশনাল পিপলস
পার্টি-এন.পি.পি সভাপতি মোহাম্মদ ইফতেকার উদ্দিন শিবলী, সাধারণ সম্পাদক
জাহেদুল আলম এক যৌথ বিবৃতিতে আওয়ামী সন্ত্রাসী কর্তৃক চকরিয়ায় ২ (দুই) জন
এবং কুতুবদিয়ায় ৪ (চার) জন হত্যাকান্ড সহ অসংখ্য নেতাকর্মীদের আহত করার
প্রতিবাদে ১৮ দলীয় জোটের ডাকে কক্সবাজার জেলাব্যাপী বৃহস্পতিবার (৩১
অক্টোবর) সকাল-সন্ধ্যা সর্বাত্মক হরতাল আহবান করা হয়েছে। নেতৃবৃন্দ
স্বতঃস্ফুর্তভাবে হরতাল পালনে জেলাবাসীর প্রতি আহবান জানিয়েছেন। জেলা
বিএনপির দপ্তর সম্পাদক ইউসুফ বদরী স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে
এই তথ্য জানা
Comments[ 0 ]
Post a Comment