Sunday, August 24, 2014

অরক্ষিত কুতুবদিয়া : লোকালয়ে চলছে জোয়ার-ভাটা by লিটন কুতুবী

অমাবশ্যা ও পূর্ণিমার জোয়ারে লোনা পানি কুতুবদিয়া দ্বীপের লোকালয়ে ঢুকে ব্যাপক এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এ যেন ধারা বাঁধা নিয়মে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবোর) এর অধীনে কুতুবদিয়া দ্বীপ রক্ষার জন্য ৪০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। চলতি বর্ষা মোসুমে জোয়ারের পানিতে দ্বীপের উত্তর ধুরুং ইউনিয়নের ৪ কিলোমিটার ও আলী আকবর ডেইল ইউনিয়নে এক কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ভেঙে সম্পূর্ণ বিলিন হয়ে গেছে। দ্বীপের ৬ ইউনিয়নের ৪০ বর্গকিলোমিাটর বেড়িবাঁেধর মধ্যে ১৭ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ বিধ্বস্থ থাকায় অমাবশ্যা ও পূর্ণিমার সময় উপকূলের লোকালয়ে জোয়ার-ভাটা বসে। গত আষাঢি পুর্ণিমার জোয়ারের সময় সাগরের নোনা পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৩/৪ ফুট উচ্চতা বৃদ্ধি পেলে কুতুবদিয়ার উপকূলে ব্যাপক এলাকা প্লাবিত হয়। ঐ সময় দ্বীপ রক্ষা বাঁধ ভেঙে গিয়ে সাগরের লোনা পানি লোকালয়ে ঢুকে প্রায় ৩০ গ্রাম ও হাজার হাজার একর ফসলি জমি প্লাবিত হয়।
দ্বীপের আলী আকবর ডেইল ইউনিয়নের কাহারপাড়া,তাবলরচর, আনিচের ডেইল, বড়ঘোপ ইউনিয়নের আজম কলোনী, মিয়ার ঘোনা, অমজাখালী, কৈয়ারবিল ইউনিয়নের মতিরবাপেরপাড়া, বিন্দাপাড়া, মহাজনপাড়া, মফজল ডিলারপাড়া, পরান সিকদারপাড়া, মলমচর, লেমশীখালী ইউনিয়নের পেয়ারাকাটা,গাইনেকাটা,উত্তরধুরুং ইউনিয়নের ফয়জনিরবাপেরপাড়া, সতরউদ্দিন,চরধুরুং, আকবরবলীপাড়া, দক্ষিণধুরুং ইউনিয়নের বাতিঘরপাড়া, আলীফকির ডেইলসহ ৩০ গ্রামের ১৮কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ভাঙা থাকায় এসব এলাকা অরক্ষিত হয়ে পড়েছে।

গত ১৭ আগস্ট কুতুবদিয়া উপজেলার উত্তর ধূরং ইউনিয়নের কাইছারপাড়া, নয়াকাটা, চরধুরং, আকবরবলীপাড়া এলাকাসহ বিধ্বস্থ ও ক্ষত-বিক্ষত বেড়িবাঁধের একাধিক স্থান পরিদর্শন করেছে পানি সম্পদ মন্ত্রী ব্যারিষ্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নজরুল ইসলাম (বীর প্রতীক), বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব খোরশেদ আলম চৌধুরী, কুতুবদিয়া-মহেশখালী আসনের সাংসদ আশেক উল্লাহ রফিক, চকরিয়া-পেকুয়া আসনের সাংসদ মৌলভী মোঃ ইলিয়াছ, বিশ্বব্যাংকের উপদেষ্টা আছাদুজ্জামান খান। পরিদর্শনকালে মন্ত্রী কুতুবদিয়া রক্ষার জন্য অতি সত্তর স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হবে বলে আশ্বস্থ করেন।  এ সময় ক্ষতিগ্রস্থ স্থানীয় লোকজন মন্ত্রির সামনে শ্লোগানে শ্লে­াগানে বলতে থাকেন “আমরা রিলিফ চাই না, আমরা স্থায়ী বেড়িবাঁধ চাই”।
কুতুবদিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এটিএম নুরুল বশর চৌধুরী, ইউএনও মোঃ মমিনুর রশিদ, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির হায়দার প্লাবিত এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শন করেন। অতিসত্তর ভাঙ্ন বেড়িবাঁধ জরুরী ভিত্তিতে মেরামত করার জন্য বরাদ্দ চেয়ে সংশ্লিষ্ট পাউবোর কর্তৃপক্ষের নিকট চাহিদাপত্র প্রেরণ করা হয়েছে বলে কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেন।
এদিকে কৈয়ারবিল ইউনিয়নের বাসিন্দা প্রবিণ রাজনীতিবিদ শামসুল আলম জানান, কৈয়ারবিল ইউনিয়নে পাউবোর বেড়িবাঁধের বাইরে (বাঁেধর পশ্চিমে) পরান সিকদারপাড়া, মিজ্জিরপাড়া, মফজল ডিলারপাড়া, মহাজনপাড়া, মতির বাপেরপাড়াসহ ৫ গ্রামের ৯৭৬ পরিবার বসবাস করে। ৯১’সনের ঘূর্ণিঝড়ের পর থেকে এ পর্যন্ত এসব পরিবারের লোকজন ঝড়-বৃষ্টিকে মাথায় নিয়ে প্রতিকুল পরিবেশের সাথে যুদ্ধ করে আসছে। বর্তমানে প্লাবিত এলাকার লোকজন পানীয় জল ও ব্যবহারের পানির সংকটে রয়েছে চরমে।
আলী আকবর ডেইল ইউপির চেয়ারম্যান ফিরোজ খান চৌধুরী জানান, তাবলরচর গ্রামের এক কিলোমিটার ভাঙন বেড়িবাঁধ দিয়ে পূর্ণিমা ও অমাবশ্যার জোয়ারের লোনা পানি এলাকায় ঢুকে শত শত ঘরবাড়ি ফসলি জমি প্লাবিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। সাগরের জোয়ারের পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়লে এসব প্লাবিত এলাকার লোকজন পাশ্ববর্তী পশ্চিম তাবরলচর গ্রামের গণস্বাস্থ্য আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের কুতুবদিয়ার উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোফাজ্জল হোসেন জানান,  জোয়ারে যেসব এলাকায় বেড়িবাধ ভেঙে গেছে ঐ এলাকাগুলো জরিপ করে প্রাক্কলন তৈরী করা হচ্ছে। অতি সত্তর মেরামত কাজ করা হবে। বর্তমানে যেসব এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে জোয়ারের পানি ঢুকছে এসব এলাকায় বালির বস্তা দিয়ে বাধ দেয়া হচ্ছে। অবশ্য তাবলরচর গ্রাম এলাকার বাধ নির্মানের জন্য ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছে। অতিসত্তর কাজ শুরু করবে।

Monday, August 18, 2014

সিসিব্লক’র মাধ্যমে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে কক্সবাজারের কুতুবদিয়া ভাঙ্গনের কবল থেকে রক্ষা করা হবে -পানি সম্পদ মন্ত্রী

অবিলম্বে সিসিব্লক’র মাধ্যমে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে কক্সবাজারের কুতুবদিয়া ভাঙ্গনের কবল থেকে রক্ষা করা হবে জানিয়েছেন পানি সম্পদ মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। মন্ত্রীদ্বয় গতকাল রবিবার উপজেলার উত্তর ধূরুংয়ের কাইছার পাড়া, পশ্চিম-পূর্বচরধূরুং ও আকবরবলীর পাড়া ক্ষতিগ্রস্থবাঁধ এলাকা পরিদর্শনকালে এ কথা বলেন। এ সময় হাজার-হাজার ক্ষতিগ্রস্থ মানুষ দূর্যোগপূর্ন আবহাওয়াকে উপেক্ষা করে তাদের চরম দূর্গতির কথা তুলে ধরেন মন্ত্রীকে। মন্ত্রীর সাথে প্রতিমন্ত্রী নজরুল ইসলাম বীর প্রতীক এমপি, স্থানীয় সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক, চকরিয়া-পেকুয়ার এমপি মুহম্মদ ইলিয়াছ, বে-সামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব কুতুবদিয়ার কৃতি সন্তান খোরশেদ আলম চৌধূরী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মুহম্মদ জাফর আলম, উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুল বশর চৌধূরী, ইউএনও মমিনুর রশিদ, আ’লীগ সভাপতি ছৈয়দ আহমদ কুতুবী, সাধারণ সম্পাদক নুরুচ্ছাফা, পাউবো’র তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী কামরুজ্জামান, নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল হক, বিশ্ব ব্যাঙ্কের উপদেষ্টা আসাদুজ্জামান খান, মুজিবুর রহমান, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শাকের উল্লাহ, আজমগীর মাতবর, আলাউদ্দিন আল-আজাদ, সিরাজদৌল্লাহ, বিশিষ্ট রাজনীতিক আ.ন.ম.শহীদ উদ্দিন ছোটন, আ’লীগ’র সাংগঠনিক সম্পাদক আওরঙ্গজেব মাতবর, আ’লীগ নেতা মনোয়ারুল ইসলাম চৌধূরী মুকুল, যুবীগ সাধারণ সম্পাদক মিজবাহ উদ্দিন ইকো, ্কুতুবদিয়া প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক হাছান কুতুবী, উপজেলা জাপা নেতা জাফর আলম, হাজী আবদুল মোনাফসহ সাংবাদিকগণ উপস্থিত ছিলেন।

কুতুবদিয়ায় ক্ষতিগ্রস্থবাঁধ পরিদর্শনে পানি সম্পদ মন্ত্রী

১৭-আগষ্ট উত্তর ধূরুংয়ের কাইছার পাড়া, পশ্চিম-পূর্বচরধূরুং ও আকবরবলীর পাড়া ক্ষতিগ্রস্থবাঁধ এলাকা পরিদর্শনে পানি সম্পদ মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। এ সময় হাজার-হাজার ক্ষতিগ্রস্থ মানুষ দূর্যোগপূর্ন আবহাওয়াকে উপেক্ষা করে তাদের চরম দূর্গতির কথা তুলে ধরেন মন্ত্রীকে। মন্ত্রীর সাথে প্রতিমন্ত্রী নজরুল ইসলাম বীর প্রতীক এমপি, স্থানীয় সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক, চকরিয়া-পেকুয়ার এমপি মুহম্মদ ইলিয়াছ, বে-সামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব কুতুবদিয়ার কৃতি সন্তান খোরশেদ আলম চৌধূরী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মুহম্মদ জাফর আলম, উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুল বশর চৌধূরী, ইউএনও মমিনুর রশিদ, আ’লীগ সভাপতি ছৈয়দ আহমদ কুতুবী, সাধারণ সম্পাদক নুরুচ্ছাফা, পাউবো’র তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী কামরুজ্জামান, নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল হক, বিশ্ব ব্যাঙ্কের উপদেষ্টা আসাদুজ্জামান খান, মুজিবুর রহমান, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শাকের উল্লাহ, আজমগীর মাতবর, আলাউদ্দিন আল-আজাদ, সিরাজদৌল্লাহ, বিশিষ্ট রাজনীতিক আ.ন.ম.শহীদ উদ্দিন ছোটন, আ’লীগ’র সাংগঠনিক সম্পাদক আওরঙ্গজেব মাতবর, আ’লীগ নেতা মনোয়ারুল ইসলাম চৌধূরী মুকুল, যুবীগ সাধারণ সম্পাদক মিজবাহ উদ্দিন ইকো, ্কুতুবদিয়া প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক হাছান কুতুবী, উপজেলা জাপা নেতা জাফর আলম, হাজী আবদুল মোনাফসহ সাংবাদিকগণ উপস্থিত ছিলেন।

দুর্গতদেতর মাঝে ত্রাণ বিতরণ করছেন পানি সম্পদ মন্ত্রী

১৭-আগষ্ট ২০১৪ কুতুবদিয়ার ক্ষতিগ্রস্থ বেড়িবাঁধ শেষে দুর্গতদেতর মাঝে ত্রাণ বিতরণ করছেন পানি সম্পদ মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ

ক্ষতিগ্রস্থ বেড়িবাঁধ পরিদর্শন ও ত্রাণ বিতরণ শেষে ধূরুং হাইস্কুল ময়দানে মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন পানি সম্পদ মন্ত্রী

কুতুবদিয়ার ক্ষতিগ্রস্থ বেড়িবাঁধ পরিদর্শন ও উত্তর ধূরুং ইউপিতে দুর্গতদেতর মাঝে ত্রাণ বিতরণ শেষে ধূরুং হাইস্কুল ময়দানে এক মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন পানি সম্পদ মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ

টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে কুতুবদিয়া রক্ষা করা হবে -ক্ষতিগ্রস্থ বেড়িবাঁধ পরিদর্শন করেন পানি সম্পদ মন্ত্রী by হাছান কুতুবী


পানি সম্পদ মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেছেন অবিলম্বে সিসিব্লক’র মাধ্যমে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে কক্সবাজারের কুতুবদিয়া ভাঙ্গনের কবল থেকে রক্ষা করা হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে নির্মাণাধীন কাজ যথাসময়ে শেষ না করায় তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি। এ জন্য তদারককারী কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের দায়িত্ব অবহেলাকে দায়ী করেন মন্ত্রী।
মন্ত্রীদ্বয় গতকাল রবিবার উপজেলার উত্তর ধূরুংয়ের কাইছার পাড়া, পশ্চিম-পূর্বচরধূরুং ও আকবরবলীর পাড়া ক্ষতিগ্রস্থবাঁধ এলাকা পরিদর্শনকালে এ কথা বলেন।

এ সময় হাজার-হাজার ক্ষতিগ্রস্থ মানুষ দূর্যোগপূর্ন আবহাওয়াকে উপেক্ষা করে তাদের চরম দূর্গতির কথা তুলে ধরেন মন্ত্রীকে। মন্ত্রীর সাথে প্রতিমন্ত্রী নজরুল ইসলাম বীর প্রতীক এমপি, স্থানীয় সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক, চকরিয়া-পেকুয়ার এমপি মুহম্মদ ইলিয়াছ, বে-সামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব কুতুবদিয়ার কৃতি সন্তান খোরশেদ আলম চৌধূরী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মুহম্মদ জাফর আলম, উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুল বশর চৌধূরী, ইউএনও মমিনুর রশিদ, আ’লীগ সভাপতি ছৈয়দ আহমদ কুতুবী, সাধারণ সম্পাদক নুরুচ্ছাফা, পাউবো’র তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী কামরুজ্জামান, নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল হক, বিশ্ব ব্যাঙ্কের উপদেষ্টা আসাদুজ্জামান খান, মুজিবুর রহমান, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শাকের উল্লাহ, আজমগীর মাতবর, আলাউদ্দিন আল-আজাদ, সিরাজদৌল্লাহ, বিশিষ্ট রাজনীতিক আ.ন.ম.শহীদ উদ্দিন ছোটন, আ’লীগ’র সাংগঠনিক সম্পাদক আওরঙ্গজেব মাতবর, আ’লীগ নেতা মনোয়ারুল ইসলাম চৌধূরী মুকুল, যুবীগ সাধারণ সম্পাদক মিজবাহ উদ্দিন ইকো, ্কুতুবদিয়া প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক হাছান কুতুবী, উপজেলা জাপা নেতা জাফর আলম, হাজী আবদুল মোনাফসহ সাংবাদিকগণ উপস্থিত ছিলেন। মন্ত্রীদ্বয় পরে উত্তর ধূরুং ইউপিতে দুর্গতদেতর মাঝে ত্রাণ বিতরণ শেষে ধূরুং হাইস্কুল ময়দানে এক মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন। পরে দুপুর ১টায় তারা হেলিকপ্টারযোগে কুতুবদিয়া ত্যাগ করেন।

Saturday, August 16, 2014

নওয়াজ পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আন্দোলন: ইমরান

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) প্রধান ইমরান খান। এই দাবিতে তিনি আজ শনিবার বিকেলে ইসলামাবাদে তাঁর সমর্থকদের নিয়ে অবস্থান কর্মসূচিতে বসবেন। পাকিস্তানের ডন অনলাইনের খবরে এ কথা জানানো হয়।
২০১৩ সালের মে মাসে অনুষ্ঠিত দেশটির সাধারণ নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলে তা বাতিল করে নতুন করে নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিক বনে যাওয়া ইমরান খান।
বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে জানানো হয়, ইমরান খান আজ সকালে রাজধানী ইসলামাবাদে পৌঁছে সমর্থকদের উদ্দেশে বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘জাতির সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এসেছে। প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আমি এখানে অবস্থান করব। কারচুপি করে ক্ষমতায় বসা প্রধানমন্ত্রীকে আমরা মেনে নেব না।’
ইমরান খানের নেতৃত্বে তাঁর দল পিটিআইয়ের নেতা-কর্মীরা সরকারের পদত্যাগের দাবিতে গত বৃহস্পতিবার পাঞ্জাবের লাহোর থেকে রাজধানী ইসলামাবাদ অভিমুখে ‘আজাদি মার্চ’ শুরু করেন। গতকাল শুক্রবার তাঁদের গাড়িবহর গুজরানওয়ালা শহরে পৌঁছালে সেখানে ক্ষমতাসীন দল পাকিস্তান মুসলিম লিগের (পিএমএল-এন) নেতা-কর্মীরা আজাদি মার্চে জুতা ও ইটপাটকেল ছুড়ে মারেন।

>>পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ইমরান খান। ছবিটি গতকাল শুক্রবার তোলা। ছবি: এএফপি
ইমরানের অভিযোগ, তাঁর গাড়িবহর লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়েছে। তবে পুলিশ বলছে, কোনো গুলির ঘটনা ঘটেনি। ঘটনাস্থলে থাকা বার্তা সংস্থা এএফপির এক আলোকচিত্রী জানান, তিনি গুলি ছোড়ার মতো কোনো শব্দ শোনেননি।

ত্বকী হত্যার অভিযোগপত্র অনিশ্চিত- আজমেরীসহ জড়িত ১১, ৯ জনই এখন বিদেশে by তানভীর সোহেল ও আসিফ হোসেন

নারায়ণগঞ্জে মেধাবী ছাত্র তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যার ঘটনায় জড়িত হিসেবে আজমেরী ওসমানসহ ১১ আসামির মধ্যে নয়জনই বিদেশে পালিয়ে গেছেন। একজন অন্য মামলায় কারাগারে আছেন। আরেকজন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী একটি বাহিনীর হাতে নিহত হয়েছেন। র‌্যাবের তদন্ত দলের সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

র‌্যাবের সূত্র আরও বলছে, তদন্ত গুছিয়ে এনে তারা একটি খসড়া অভিযোগপত্রও তৈরি করেছে। তবে কবে নাগাদ অভিযোগপত্রটি চূড়ান্ত করে আদালতে জমা দেওয়া হবে, তা কেউই বলতে পারছে না। মামলার বাদীপক্ষের অভিযোগ, ওসমান পরিবার এই হত্যায় জড়িত থাকায় সরকারের উচ্চপর‌্যায় থেকে মামলাটির কার্যক্রম বন্ধ করে রাখা হয়েছে।
গত ৬ মার্চ ত্বকী হত্যার এক বছর পূর্ণ হওয়ার দিনে র‌্যাবের সহকারী মহাপরিচালক (এডিজি) জিয়াউল আহসান বলেছিলেন, শিগগিরই মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হবে। অবশ্য এরপর সাড়ে চার মাস পার হলেও অভিযোগপত্র দেওয়া হয়নি।
র‌্যাবের সূত্র জানায়, তদন্তে প্রধান সন্দেহভাজন হিসেবে ওসমান পরিবারের সদস্য আজমেরী ওসমানের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। আজমেরীর বাবা প্রয়াত সাংসদ নাসিম ওসমান। আর তার দুই চাচা হলেন বর্তমান সাংসদ শামীম ওসমান ও সেলিম ওসমান।
তদন্তে পাওয়া তথ্যমতে, ত্বকী হত্যায় অংশ নেওয়া বাকি ১০ জন হলেন রাজীব, কালাম শিকদার, মামুন, অপু, কাজল, শিপন, জামশেদ হোসেন, ইউসুফ হোসেন ওরফে লিটন, সুলতান শওকত ওরফে ভ্রমর ও তায়েবউদ্দিন ওরফে জ্যাকি। র‌্যাব ও পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এদের মধ্যে মাদক মামলায় লিটন কারাগারে আছেন। আর কালাম শিকদার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ধরা পড়েছিলেন। র‌্যাবের সূত্র জানিয়েছে, তিনি নিহত হয়েছেন এবং তাঁর লাশ গুম করা হয়েছে।
মামলার প্রধান আসামি আজমেরী ওসমান এখন কলকাতায় আছেন। এই হত্যা মামলায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়া একমাত্র আসামি সুলতান শওকত আছেন দুবাইয়ে। বাকি সাতজন বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে পালিয়ে আছেন বলে র‌্যাব ও পুলিশ জানতে পেরেছে।
অভিযুক্ত ১১ জনের মধ্যে প্রথম আলো ছয়জনের পরিবারের সদস্য ও দুজনের ঘনিষ্ঠজনের সঙ্গে কথা বলেছে। এর মধ্যে সাতজনের পরিবার ও ঘনিষ্ঠজনেরা তাঁদের বিদেশে চলে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জানতে চাইলে র‌্যাবের মহাপরিচালক মোকলেছুর রহমান বলেন, মামলার তদন্তে র‌্যাব অনেকটাই এগিয়েছে। কিছু কাজ বাকি আছে। সেগুলো শেষ করে অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেওয়া হবে। তিনি বলেন, ‘এটা ঠিক, কিছু সম্ভাব্য আসামি দেশের বাইরে পালিয়ে আছেন। অভিযোগপত্র দেওয়ার পর তাঁদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করানো হবে।’
তবে পলাতকদের মধ্যে কালাম, শিপন, জামশেদ, লিটন, সুলতান শওকত ওরফে ভ্রমর ও তায়েবউদ্দিন ওরফে জ্যাকি বিভিন্ন সময়ে পুলিশের হাতে আটক বা গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। এদের মধ্যে শিপন ও জামশেদকে আটকের পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ভ্রমর ও ও জ্যাকি আদালত থেকে জামিন নিয়ে গোপনে দেশ ত্যাগ করেছেন। এর মধ্যে ভ্রমর গত মার্চে এবং জ্যাকি গত জুনে জামিন পান। র‌্যাব সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া যায়।
মামলার প্রধান আসামি আজমেরী গত ১ মে নারায়ণগঞ্জে এসেছিলেন। ওই দিন তিনি বাবা নাসিম ওসমানের জানাজায় ও দাফনে অংশ নেন। এরপর আবারও তিনি কলকাতায় পালিয়ে যান বলে তদন্তসংশ্লিষ্টরা নিশ্চিত হয়েছেন। হত্যার পর কিংবা বাবার মৃত্যুর পর কলকাতা থেকে দেশে ঢুকলেও তাঁকে গ্রেপ্তারে পুলিশ বা র‌্যাব কোনো উদ্যোগই নেয়নি।
র‌্যাবের তদন্ত নথিতে বলা হয়েছে, হত্যায় অভিযুক্ত ইউসুফ হোসেন সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত এবং আজমেরীর ঘনিষ্ঠজন। সুলতান শওকত নারায়ণগঞ্জ জেলা জাতীয় পার্টির সাবেক সভানেত্রীর ছেলে। অপরাধজগতে আজমেরীর ডান হাত বলে পরিচিত তিনি। অভিযুক্ত তায়েবউদ্দিনের পরিবারের সঙ্গে ওসমান পরিবারের রয়েছে পুরোনো সম্পর্ক। তাঁর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসেরও অভিযোগ আছে। অভিযুক্ত কালাম শিকদার আজমেরী ওসমানের অন্যতম ঘনিষ্ঠজন ও চাঁদাবাজ। আরেক অভিযুক্ত মামুন আজমেরী ওসমানের খালাতো বোনের জামাই। কাজলকে চাঁদাবাজ ও আজমেরীর অন্যতম ঘনিষ্ঠজন বলে বর্ণনা করা হয়েছে নথিতে। তাঁর ভাই স্থানীয় যুবলীগের একজন নেতা। অভিযুক্ত অপু আজমেরীর তথ্যদাতা। রাজীব ও শিপন আজমেরীর বেতনভুক্ত ক্যাডার। অভিযুক্ত জামশেদ আজমেরীর গাড়িচালক।
এই হত্যাকাণ্ডে শামীম ওসমানের ছেলে অয়ন ওসমানের জড়িত থাকার অভিযোগ উঠলেও র‌্যাব দাবি করেছে, তারা তাঁর সম্পৃক্ততা পায়নি। অয়নের দুই সহযোগী সালেহ রহমান ওরফে সীমান্ত ও রিফাত বিন ওসমান বিষয়েও র‌্যাব একই কথা বলেছে। এই দুজন গ্রেপ্তারও হয়েছিলেন। এর মধ্যে সীমান্ত এখনো কারাগারে আছেন।
মামলার তদন্তের সঙ্গে যুক্ত র‌্যাবের কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ত্বকীকে যারা হত্যা করেছে, তাদের এখন বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো খুবই কঠিন হবে। কেননা, মূল আসামিদের কেউই দেশে নেই। বিদেশ থেকে আসামিদের ফিরিয়ে এনে বিচার করা অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে প্রায় অসম্ভব।
মামলার বাদী ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বি প্রথম আলোকে বলেন, তদন্তকারী সংস্থা খুনিদের চিহ্নিত করেছে। অভিযোগপত্র দেওয়ার সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন ছিল। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, হত্যায় ওসমান পরিবারের সদস্য আজমেরী ওসমান জড়িত থাকায় বিচার পাওয়াটা অনিশ্চিত হয়ে গেছে। তিনি বলেন, ‘আমি জানি, একমাত্র প্রধানমন্ত্রী চাইলেই এই মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া সম্ভব হবে। নয়তো কোনো দিনই দেওয়া হবে না।’
মামলার সর্বশেষ অবস্থা জানতে চাইলে র‌্যাবের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, অভিযোগপত্র দেওয়ার জন্য র‌্যাবের ওপর উচ্চ আদালত বা অন্য কোনো স্থান থেকে নির্দেশনা এলে অভিযোগপত্র দেওয়া সহজ হবে। তাঁরা অভিযোগপত্র প্রায় প্রস্তুত করে বসে আছেন।
তবে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান প্রথম আলোকে বলেন, স্পর্শকাতর এই মামলার অভিযোগপত্র শিগগিরই দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। তিনি বলেন, ‘হত্যায় অভিযুক্ত ব্যক্তিরা দেশে থাকুক আর দেশের বাইরে থাকুক, তাদের বিচার করা হবে।’
২০১৩ সালের ৬ মার্চ ত্বকীকে নারায়ণগঞ্জে নিজ বাসার কাছ থেকে অপহরণ করা হয়। ৮ মার্চ তার লাশ পাওয়া যায় শীতলক্ষ্যা নদীতে। উচ্চ আদালত র‌্যাবকে এই মামলার তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছেন।

Wednesday, August 13, 2014

পূর্ণিমার জোয়ারের ফুঁসে ওঠা পানিতে কুতুবদিয়া সয়লাব: বসতঘর ও ফসল বিনষ্ট by আহমদ কবির বাবুল

উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকায় রবিবার সাগরের পানি ঢুকে কয়েকশ’ একর আউশ ফসলসহ কয়েক হাজার বসতঘর পানির নীচে তলিয়ে গেছে। পূর্ণিমার চোরা জোয়ারে বঙ্গোপসাগরে অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় দ্বীপ-রক্ষাবাঁধের একাধিক ভাঙ্গা অংশসহ বেশ কয়েকটি পয়েন্টে সমুদ্রের লবনাক্ত পানি ঢুকে পড়েছে। পবিত্র রমজান মাসে বহু  মানুষ গৃহহারা হয়ে কষ্টের কোন সিমা নেই। ঝুঁকিপূর্ন এলাকায় জরুরী বাঁধ সংস্কারের টেন্ডার হলেও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্তা ব্যক্তি ও সংশ্লিষ্ট টিকাদারের অবহেলায় এই দূর্যোগের সৃষ্টি হয়েছে বলে এলাকাবাসীসহ কুতুবদিয়া বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি সাবেক চেয়ারম্যান আ.স.ম.শাহরিয়ার চৌধূরী অভিযোগ করেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে উত্তর ধূরুংয়ের চরধূরুং, আকবরবলী পাড়া, নজুমিয়া বাপের পাড়া, ফয়জানি বাপের পাড়া, দক্ষিণ ধূরুংয়ের মদন্যা পাড়া, অলি পাড়া, বাতিঘর পাড়া, লেমশীখালীর পেয়ারাকাটা, কৈয়ারবিলের মলমচর, বিন্দাপাড়া, বড়ঘোপের দক্ষিণ মুরালিয়া, আলী আকবর ডেইলের তাবালেরচর এলাকায় শনি ও রবিবার ভাঙ্গা বেড়িবাঁধ দিয়ে অনবরত সমুদ্রের পানি ঢুকে পড়ছে। লবণাক্ত পানির কারণে কয়েকশ’ একর আউশ ফসল বিনষ্ট হয়েছে। গেল জোর পানি নেমে গেলে সংশ্লিষ্ট কাজের টিকাদারের নিয়োগকৃত সাব টিকাদার নামমাত্র মাটির কাজ করে বরাদ্ধের সমুদয় টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ করেন এলাকার ক্ষতিগ্রস্থ লোকজন। বেড়িবাধের বাইরে থাকা প্রায় ৯শ’পরিবারের পুনর্বাসন দাবী করেন কৈয়ারবিলর ইউপি চেয়ারম্যান আজমগীর মাতবর। দ্বীপটির ৪০কি.মি. বেড়িবাঁধের মধ্যে প্রায়  ১৫ কি.মি. অধিক ঝুঁকিপূর্ণ বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। দূর্গত মানুষের প্রায়োজনীয় সহায়তা জরুরী বলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুমিনুর রশিদ জানিয়েছেন। এদিকে বারবার যোগাযোগ করেও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাউকে পাওয়া যায়নি।

Monday, August 11, 2014

প্রয়োজনীয় সংস্কার ও বাঁধ নির্মাণ না হওয়ায় কুতুবদিয়া দ্বীপ বিলীন হওয়ার পথে by কামাল হোসেন আজাদ

প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় ১৯৯১ এর পরে বিধ্বস্ত পুরো কুতুবদিয়া তৎকালীন সরকারের আমলে ব্যাপক পুনর্বাসন, বাঁধ নির্মাণ ও সাইক্লোন শেল্টার প্রতিষ্ঠার করার দীর্ঘ দেড়যুগ অতিবাহিত হলেও অবহেলিত দ্বীপাঞ্চল কুতুবদিয়ার প্রয়োজনীয় সংস্কার ও বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজ না হওয়ায় প্রতিবছর দ্বীপ ক্ষয় হয়ে আসছে। তারই ধারাবাহিকতায় এ মুহূর্তে বিলীন হওয়ান পথে দ্বীপাঞ্চল কুতুবদিয়া এমনটি জানালেন ৬ ইউনিয়নের লাখো জনতার জনপ্রতিনিধিরা।

#হারিয়ে গেছে খুদিয়ারটেক নামক একটা বিশাল ইউনিয়ন
#দেশের একমাত্র বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্পটি ধ্বংসাবশেষে পরিণত
#৬টির প্রতিটি ইউনিয়ন মারাত্মকভাবে ভাঙনে আক্রান্ত
#সরকারি দলের ছত্রছায়ায় উজাড় হচ্ছে উপকূলীয় প্যারাবন

একসময়ের বাতিঘরের জন্য বিখ্যাত কুতুবদিয়া দ্বীপ, পূর্বদিকে আঁকাবাঁকা নদী সারি সারি প্যারাবন। উত্তরে একমাত্র খরস্রোতা নদী- কর্ণফুলী, পশ্চিমে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি সমুদ্র সৈকত, শামুক, ঝিনুক এবং ঝাঁকে ঝাঁকে লাল কাঁকড়া। দক্ষিণে সীমানাহীন লবণের মাঠ, উত্তর-পশ্চিম, পূর্ব দক্ষিণ যে দিকেই তাকাই মাঝি-মাল্লার দেখা মিলে, চারদিকে বঙ্গোপসাগরে ঘেরা ২১৫ বর্গ কিলোমিটারের এই দ্বীপটি প্রাকৃতিক খনিজ সম্পদে ভরপুর।
হযরত শাহ আব্দুল মালেক কুতুব আউলিয়ার পুণ্যভূমি, পর্যটক সম্ভাব্য এলাকা, ক’দিন আগের কথা, গস্খাম-বাংলার চিরচেনা সব ঐতিহ্য বিরাজমান ছিল। কুতুবদিয়াবাসীর ছিল গোলাভরা ধান, পুকুর ভরা মাছ, গোয়াল ভরা গরু, মহিষ, ছাগল, মাঠে-ঘাটে সোনালী ফসল, নদী খালে সোনালী রুপালী নানা প্রজাতির মাছ। কিন্তু এসব আজ হারিয়ে যাচ্ছে আগ্রাসনী সমুদ্রের কবলে। শিক্ষা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য কোন অংশে পিছিয়ে নেই এই এলাকা। শিক্ষার হার বিবেচনায় কক্সবাজার জেলায় শীর্ষে অবস্থান। এই ছোট্ট জনপদের লোকজন মানব সম্পদে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের সচিবালয় থেকে শুরু করে নানা পদে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে এই এলাকার কৃতী সন্তানেরা।
এই অঞ্চলের লোকজন পেশায় সামুদ্রিক মাছ আহরণ ও লবণ চাষাবাদে জড়িত। কিন্তু প্রাকৃতিক প্রতিকূলতা, মানবসৃষ্ট ধূম্রজালে তালবেতাল হয়ে পড়েছে। এই এলাকার জনজীবন, হারিয়ে ফেলেছে জীবন যাত্রার ছন্দ। মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর আগেই প্রকৃতি তাদের জীবন যাত্রার অগ্রগতিকে থামিয়ে দেয়। হাজারো স্বপ্ন নিয়ে প্রতিকুলতার মাঝে সমুদ্র উপকণ্ঠে বসবাস করে আসছে লাখো মানুষ। শিক্ষা, সংস্কৃতি ঐতিহ্য নিয়ে অগ্রসর হতে চাইলেও বাধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। বর্ষা এলেই আতঙ্ক বিরাজ করে দ্বীপবাসীর মাঝে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, নদীভাঙন, জলোচ্ছ্বাস ল-ভ- করে দেয় তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী জলবায়ু বিপদাপন্ন দেশ হিসেবে স্বীকৃত যা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রকট হচ্ছে। বিশেষ করে ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে দেশটিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন হতে হয় বেশী।   
ওইসব দুর্যোগের কারণে সহায় সম্পত্তি, বসতবাড়ি জমি জমা হারিয়ে নিঃস্ব হতে হচ্ছে সহস্র মানুষকে। জলবায়ুবিদগণ ভবিষ্যদ্বাণী করেন বলেন- একবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে দেশের দক্ষিণাঞ্চল পানির নিচে তলিয়ে যাবে। জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশের ভূমিকা নগণ্য হলেও বৈশ্বিক উষ্ণতায় জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের ফলে এ দেশের দক্ষিণাঞ্চল সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে তার মাঝে কুতুবদিয়া অন্যতম।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে, অনাবৃষ্টি, বন্যা, খরা, অতিবৃষ্টি, ঋতুবৈচিত্র্য পাল্টে যাবে। সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস, মাটির লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা এবং ক্ষতির পরিমাণ বাড়বে। ক্ষতিগ্রস্ত হবে হাজার হাজার মানুষ এবং প্রভাব পড়বে মানুষের জীবন জীবিকার উপর। জার্মান ওয়াচের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- বাংলাদেশের উপর প্রভাবও ক্ষয়ক্ষতির যে আশঙ্কার কথা বলা হয়েছে তার হলো বাংলাদেশের বন্যা এলাকা বাড়বে ২৯ শতাংশ তার মধ্যে কুতুবদিয়া শীর্ষে।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ইতিমধ্যে দ্বীপবাসীর মাঝে চরমভাবে লক্ষণীয়, প্রতিনিয়ত পানির স্বাভাবিক উচ্চতা বাড়ছে। নিম্নাঞ্চল জোয়ারের পানিতে ভাসছে। যার ফলে উদ্বাস্তু মানুষের সংখ্যা বাড়ছে, ভাসমান পরিবার বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ এক বিভীষিকাময় জীবন, নিয়তির কাছে হার মানতে হচ্ছে দ্বীপবাসীর। একবার ঘূর্ণিঝড়ে সব হারায় আবার নদী ভাঙনে বিলুপ্ত করে তাদের অস্তিত্বকে, তবুও মায়ার টানে ঠাঁই নেয় আগ্রাসনী সমুদ্রের তীরে।
সূত্রে জানা যায়, জলবায়ু উদ্বাস্তু মানুষের পুনর্বাসনে আর্থিক ফান্ড আছে, ব্যয়ও হচ্ছে কিন্তু ক্ষতিগ্রস্তরা এই সুবিধার আওতায় পড়ছে না। এছাড়া জলবায়ু স্থানচ্যুত মানুষের জন্য কার্যকর প্রত্যাবর্তন, স্থানান্তর ও পুনবার্সন কর্মসূচি চালু নেই। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও মানবিক আইনানুযায়ী বাংলাদেশ সরকারের প্রাথমিক এবং প্রধান কর্তব্য ও দায়িত্ব হচ্ছে জলবায়ু স্থানাচ্যুত মানুষদের দেশের অভ্যন্তরে স্থানান্তর ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা। কুতুবদিয়া বাস্তুহারা মানুষের সমস্যার শেষ নেই, অনেকেই বেড়িবাঁধের উপর ব্যাঙের ছাতার মতো অস্থায়ী টংঘর বেঁধে জীবন যাপন করছে। আবার অনেকেই সুখের সংসার গড়তে অর্থ কড়ি জমিয়ে পাকা অথবা সেমিপাকা ঘরবাড়ি নির্মাণ করার সাহস পায় না।
বিশেজ্ঞদের মতে, বর্তমানে ২০০৭ সালের সিডরের ন্যায় দুর্যোগ সৃষ্টি হলে ৯১ এ ঘূর্ণিঝড়ের চেয়ে আরো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং দ্বিগুণ প্রাণহানি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
১৯৯১ সালের তা-বে উপকূলীয় এলাকায় প্রায় ১ লাখ ৩৮ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। এর সিংহভাগ ছিল কুতুবদিয়া এবং তার আশ-পাশের এলাকার। বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট এর তথ্য অনুযায়ী ৯১ সালের ঘুর্ণিঝড়ে কুতুবদিয়ার ৬টি ইউনিয়নে প্রাণহানি ঘটে ৯ হাজার ১৫ জনের। সরকারী তথ্য অনুযায়ী ১৫ হাজার ও বেসরকারী তথ্য অনুযায়ী ৪০ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটে। দীর্ঘ ২৩ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পরও মানুষের জানমালের ক্ষয়-ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারেনি। বর্তমানে কুতুবদিয়ার লোক সংখ্যা রয়েছে প্রায় দুই লাখেরও কাছাকাছি। ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে মাত্র ৭১টি। জনসংখ্যা অনুপাতে আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা অতি নগণ্য। নির্মাণ ত্রুটি এবং অযতেœর কারণে আশ্রয় কেন্দ্রগুলো ময়লা আবর্জনার স্তুপ হিসেবে পরিণত হয়েছে। অভিযোগ সূত্রে প্রকাশ, স্থানীয় প্রভাবশালীদের গুদামঘরে পরিণত করা হয়েছে অনেক আশ্রয়কেন্দ্রকে।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে কুতুবদিয়ার চার পাশের প্যারাবন, ঝাউবন এখন উজাড় প্রায়। কুতুবদিয়ার বহুল জনপ্রিয় বর্তমান মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মেহেরুন নেসা ও লেখক মুহাম্মদ হোছাইন কুতুবীর সাথে আলাপকালে তারা জানান, কুতুবদিয়া এখন জোয়ারের পানিতে ভাসছে। কুতুবদিয়াকে রক্ষা করতে চাইলে অবশ্যই কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। তারা আরো জানান, প্রবল সামুদ্রিক জোয়ারের কারণে পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে, সহস্রাদিক ঘর বাড়ি, ক্ষেত-খামার, বিশেষ করে আলী আকবর ডেইলের তাবালেরচর গ্রামটি বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই এলাকায় রয়েছে দেশের একমাত্র বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্প। বর্তমানে প্রকল্পটি ধ্বংসাবশেষে পরিণত হয়েছে।
সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি আ.স.ম শাহরিয়ার চৌধুরী জানান- আলী আকবর ইউনিয়নটি উপজেলার একমাত্র জনবহুল ইউনিয়ন। এর দক্ষিণে খুদিয়ারটেক নামক একটা বিশাল ইউনিয়ন ছিল। আজ বিলীন হয়ে গেছে সেই ইউনিয়নটি। এবার বিলীনের পথে আলী আকবর ডেইল। এছাড়াও ধুরুং, আকবর বলীরপাড়া, চর ধুরুং, কৈয়ালবিল, কাইছারপাড়া, জালিয়াপাড়াসহ বিভিন্ন গ্রামে জোয়ার-ভাটার পানি আনাগোনা অব্যাহত আছে।
প্রাকৃতিক নৈসর্গপূর্ণ এলাকা, যেখানে- লবণশিল্প, মৎস শিল্প, চিংড়ি ঘের প্রতিনিয়ত সফলতার হাতছানি দিচ্ছে। আমাদের লবণ শিল্পে বিশ্বের দরবারে প্রশংসার দাবীদার। আরো আছেÑ সোনালী-রূপালী হরেক প্রজাতির কাঁচা মাছ, শুঁটকি মাছ, উন্নত প্রজাতির কাঁকড়া, দেশ-বিদেশে রপ্তানি হয়ে জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেই চলছে। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, এ দ্বীপবাসী বৈষম্যের স্বীকার হচ্ছে, রাজনৈতিক বিবেচনায় অনেক ক্ষেত্রে মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এই জনপদ। 
চট্টগ্রাম সরকারী কলেজের অধ্যাপক ইউনুছ হাসান জানান- কুতুবদিয়া ৬টি ইউনিয়নের প্রতিটি ইউনিয়ন মারাত্মকভাবে ভাঙনে আক্রান্ত হচ্ছে। দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে এ দ্বীপের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।
তিনি আক্ষেপ করে বলেন- সাম্প্রতিক কুতুবদিয়াবাসীর জীবন-যাত্রার মান চরমভাবে বিপর্যস্ত হচ্ছে। টানা কয়েকদিনের পূর্ণিমার জোয়ারের পানিতে ফুলে উঠেছে বঙ্গোপসাগর। প্লাবিত হয়েছে কুতুবদিয়ার চারপাশের এলাকাগুলো। পূর্ণিমার জোয়ারের কারণে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ অপরিমেয়। খবর নিয়ে দেখা গেছে কুতুবদিয়ার প্রায় ২৭টি গ্রাম আংশিক বা পূর্ণাঙ্গভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তাবালেরচরের স্থানীয় লবণ ব্যবসায়ী শামসুল আলম জানান- আলী আকবর ডেইল ইউনিয়নের তাবালেরচর গ্রামটি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে, যে কোন মুহূর্তে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, প্রতিবছর জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেয়েছে ২৮ সেন্টিমিটার। যার ফলে বেড়িবাঁধ ভেঙে গিয়ে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়া, নদীভাঙন বেড়ে যাওয়া নতুন কোন খবর নয় দ্বীপবাসীর কাছে।
তৎকালীন পানি সম্পদ মন্ত্রী মরহুম আবদুর রাজ্জাককে সাথে নিয়ে ওই সময়কালের স্থানীয় এমপি জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে অবহিত করাসহ বিভিন্ন সময় দ্বীপাঞ্চল রক্ষায় ব্যাপক তৎপরতা চালিয়ে আসছিল। তিনি মন্ত্রীকে এলাকাসমূহও সরেজমিন পরিদর্শন করান।
এত দুর্যোগ থাকা সত্ত্বেও কুতুবদিয়াবাসীকে প্রকৃতির সাথে সংগ্রাম করে নতুন করে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখতে হয়। প্রকৃতপক্ষে এসব দুর্যোগের জন্য স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিরাই দায়ী। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতারা ক্ষমতার অপব্যবহার করে, সরকারের ছত্রছায়ায় লবণমাঠ, চিংড়ি ঘের ইত্যাদি নির্মাণের জন্য উপকূলীয় প্যারাবনের শত শত গাছ যেমন- বাইন, কেউড়া, ঝাউবন ইত্যাদি রাতারাতি উজাড় করে দিয়েছে। অনেক স্থানীয় প্রতিনিধি রক্ষক সেজে ভক্ষক হয়েছে, বেড়িবাঁধ  উন্নয়নের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে এখনও জনপ্রতিনিধির উচ্চাসন দখল করে আছেন। 
প্রতিঅর্থ বছরে সরকারের পক্ষ থেকে যে বরাদ্দ দেয় হয় তার সুষ্ঠ ব্যবহার হয়না, বেড়িবাঁধসহ অন্যান্য উন্নয়নমূলক কাজে ঠিকাদারদের প্রভাবিত করে স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিগণ, তাদের কাজে ভাগ-ভাটোয়ারা বসিয়ে হাত করে নেয় এমন অভিযোগ করেন এলাকাবাসী। অনেক রাজনৈতিক নেতার প্রতিহিংসার কারণে কুতুবদিয়া আজ বিদ্যুৎহীন অন্ধকারে ডুবে আছে তা কারো আজানা নয়। স্থানীয় লোকজন অভিযোগ করে বলেন- নেতারা গাড়ি-বাড়ি করে শহরে নগরে পাড়ি জমিয়েছে আমরা কিভাবে দিন কাটাচ্ছি তা তাদের নিকট স্পষ্ট নয়, দুঃখী মেহনতী মানুষের দুঃখ-দুদর্শা লাঘবে তাদের কোন প্রচেষ্টা লক্ষ্য করা যায় না, নির্বাচন ঘনিয়ে এলে হাত-পা ধরে ভোটভিক্ষা করতে আসে, পরে আর কোন খোঁজ থাকে না।
চারদিকে হাহাকার, দুর্বিষহ এক কঠিন জীবনযাত্রা, মাথা গুঁজার ঠাঁই নেই অনেকের- তিন বেলা খাবার জুটে না অধিকাংশ লোকের, দিগি¦দিক ছোটাছুটি করছে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য। ঘাটকুলপাড়া নিবাসী মহিউদ্দিন অভিযোগ করে বলেন- জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মাঝে সরকারী- বেসরকারী উদ্যোগে ত্রাণ বিতরণের কার্যক্রম ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা কাগজে কলমে থাকলেও তার সত্যতা ও বাস্তবতা নেই। সরকারের সামাজিক নিরাপত্তামূলক কার্যক্রম শুধু শুনা যায়, বাস্তবে তার প্রমাণ খুবই বিরল।
সাম্প্রতিক প্রকাশিত বেসরকারী তথ্যানুযায়ী কুতুবদিয়া অধিকাংশ লোক মধ্যবিত্ত থেকে দারিদ্র্যের নিম্ন সীমায় বসবাস করছে। ব্যক্তিগত পেশায় ভাটা নেমে এসেছে অনেকের। জেলে পরিবার অভাব-অনটনের মধ্যদিয়ে জীবন যাপন করছে। লবণ ব্যবসায়ীরা ন্যায্য মূল্য না পেয়ে বেকায়দায় পড়ে আছে, তাদের দাবী রাজনৈতিক বিবেচনায় তাদের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে দেখা গেছে সরকারী-বেসরকারী কোন সাহায্য সহযোগিতা না থাকায় তাদের মাঝে বিরূপ প্রভাব লক্ষ্য করা গেছে। দেখা গেছে প্রতি বছর শত শত একর জমি চাষাবাদ অনোপযোগী হয়ে পড়ছে, জেলেরা মাছ আহরণ ঝুঁকিপূর্ণ মনে করে উক্ত পেশা থেকে সরে দাঁড়াচ্ছে। এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে টিকিয়ে রাখতে হলে, তাদের জন্য- অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা নিশ্চিত করা সময়ের দাবী। সরকারী-বেসরকারী এনজিওগুলোর তৎপরতা একান্তভাবে কাম্য। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, মৎস্য এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় এর পক্ষ থেকে নেয়া দরকার বিশেষ উন্নয়নমূলক পরিকল্পনা এবং তার সুষ্ঠু বাস্তবায়ন। প্রতিটি উন্নয়নমূলক কাজের সুষ্ঠু তদারকি এবং জবাবদিতিহা নিশ্চিত করা দরকার। অন্যথায় ইতিহাসে নাম লেখাতে অচিরেই বাংলাদেশের মানচিত্র থেকে ছোট্ট দ্বীপটি হারিয়ে যাবে চিরদিনের জন্য।
দ্বীপবাসীর পক্ষে তরুণ লেখক ও সমাজ সেবক মুহাম্মদ হোছাইন কুতুবী দাবি করেন- কুতুবদিয়ার জলবায়ু স্থানচ্যুত সমস্যা অভ্যন্তরীণভাবে সমাধান,  নৌদস্যুদের তা-ব মোকাবিলায় কোস্টগার্ডের তৎপরতা বৃদ্ধি, খাস জমি নিয়ে বিরোধ, দাঙ্গা-হাঙ্গামা চিরতরে বন্ধ করা, ক্ষতিগ্রস্ত জেলে পরিবারকে সাহয্য সহেযাগিতা করাসহ বাস্তু ও একানব্বইয়ের স্বজনহারা লোকদের পুনর্বাসন নিশ্চিত করতে হবে।
কামাল হোসেন আজাদ, দৈনিক সংগ্রাম কক্সবাজার জেলা

Tuesday, August 5, 2014

সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা ইসরায়েলের

ফিলিস্তিন-শাসিত গাজা উপত্যকা থেকে সব সেনাসদস্য প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছে ইসরায়েল। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর বরাতে আজ মঙ্গলবার বিবিসি অনলাইনে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়, গাজা উপত্যকার বাইরে মোতায়েন করা সব সেনা সরিয়ে নেওয়া হবে।
>>গাজা সীমান্তের কাছে ইসরায়েলের সেনাসদস্যরা। আজ মঙ্গলবার ৭২ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতি কার্যকরের আগেই গাজা থেকে সব সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছে ইসরায়েল। ছবিটি গতকাল সোমবার তোলা। ছবি: ছবি: রয়টার্স
ইসরায়েল ও হামাসসহ ফিলিস্তিনের বিভিন্ন গোষ্ঠী ৭২ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। মিসরের মধ্যস্থতাকারী কর্মকর্তারা এ তথ্য জানিয়েছেন। আজ স্থানীয় সময় বেলা ১১টা থেকে এ যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার কথা।
গাজায় গত ৮ জুলাই থেকে ইসরায়েলের বর্বর হামলায় এখন পর্যন্ত এক হাজার ৮৬৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে নয় হাজারের বেশি। তাদের অধিকাংশ বেসামরিক নাগরিক। এর মধ্যে অনেক নারী ও শিশু রয়েছে। এ ছাড়া লাখো ফিলিস্তিনি হয়েছে বাস্তুচ্যুত।
ইসরায়েলের সামরিক কর্মকর্তা লে. কর্নেল পিটার লেরনার সাংবাদিকদের বলেছেন, আজ ৭২ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতি কার্যকরের আগেই তাদের সেনাদের প্রত্যাহার করা হবে।
ইসরায়েলের গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, গাজায় সর্বশেষ সামরিক অভিযানের মূল উদ্দেশ্য ছিল হামাসের সুড়ঙ্গ ধ্বংস করা। তেল আবিবের সে উদ্দেশ্য ইতিমধ্যে অর্জিত হয়েছে।
এর আগেও গাজায় কয়েক দফায় যুদ্ধবিরতির ঘোষণা আসে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত অধিকাংশ ঘোষণাই ভেস্তে যায়। যুদ্ধবিরতি ভঙ্গের জন্য হামাস ও ইসরায়েল পরস্পরকে দোষারোপ করে আসছে।
গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে সর্বশেষ গত সোমবার মিসরের রাজধানী কায়রোতে আলোচনা হয়। এতে হামাসের পাশাপাশি ফিলিস্তিনের অন্য দলগুলোও যোগ দেয়। সেখানে অনুপস্থিত ছিল ইসরায়েল।
পরে ইসরায়েলের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেন, মিসরের প্রস্তাব অনুযায়ী ৭২ ঘণ্টার শর্তহীন যুদ্ধবিরতির খসড়া গ্রহণ করবে ইসরায়েল।
গাজার নিয়ন্ত্রক হামাসের মুখপাত্র সামি আবু জুহরি বলেছেন, ৭২ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব তাঁরাও গ্রহণ করেছেন।
মিসরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে মিসর। তারা ৭২ ঘণ্টা যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে।
যুদ্ধবিরতির লক্ষ্যে এর আগেও একই ধরনের একটি উদ্যোগ নিয়েছিল মিসর। ওই প্রস্তাব ইসরায়েল গ্রহণ করলেও প্রত্যাখ্যান করে হামাস।
নতুন প্রস্তাবে বলা হয়েছে, সব পক্ষের প্রতিনিধিরা বিস্তারিত আলোচনা করতে পরে কায়রোতে বসবেন।

Sunday, August 3, 2014

কেড়ে নিয়েছে শিশুর প্রাণ -যুদ্ধবিরতি ভেঙে হামলা জোরদার

সর্বশেষ দফা যুদ্ধবিরতিও ভেঙে যাওয়ার পর ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় নতুন করে হামলা জোরদার করেছে ইসরায়েল। তাদের নির্বিচারে গোলাবর্ষণ কেড়ে নিয়েছে আরও ১০৭ জনের প্রাণ। বিধ্বস্ত হয়েছে গাজা ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বড় অংশ।

গাজার রাজনৈতিক নিয়ন্তা হামাসও থেমে নেই। ইসরায়েলের দিকে তারাও রকেট হামলা অব্যাহত রেখেছে। তবে সেসব হামলায় প্রাণহানির কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
এদিকে এ রকম একটি নাজুক পরিস্থিতিতে মার্কিন কংগ্রেস ইসরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র বিধ্বংসী প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ‘আয়রন ডোমে’র জন্য ২২ কোটি ৫০ লাখ ডলারের তহবিল অনুমোদন করেছে। আয়রন ডোমের সাহায্যে ইসরায়েল হামাসের ছোড়া রকেট আকাশেই ধ্বংস করে দিতে সক্ষম। বিদ্যমান সামরিক সহযোগিতার যুক্তি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে ইতিমধ্যে সে দেশেই মজুত মার্কিন সমর উপকরণ ব্যবহারের সুযোগ দিয়েছে। খবর এএফপি, বিবিসি ও আল-জাজিরার।
গত ৭ জুলাই থেকে চলা ইসরায়েলের এ অভিযানে গাজা উপত্যকায় এ পর্যন্ত অন্তত এক হাজার ৬৫০ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে প্রায় নয় হাজার। হতাহত ব্যক্তিদের বেশির ভাগই সাধারণ মানুষ। পক্ষান্তরে ইসরায়েল ৬৬ জনকে হারিয়েছে; যাঁদের মধ্যে ৬৩ জনই সেনাসদস্য।
জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় গত শুক্রবার স্থানীয় সময় সকাল আটটায় আরেক দফা মানবিক যুদ্ধবিরতিতে যায় ইসরায়েল ও হামাস। কিন্তু ঘণ্টা দুয়েক যেতে না-যেতেই গাজার দক্ষিণে রাফা শহরে ফের আক্রমণ শুরু করে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী। তাদের দাবি, গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের ওপর হামাসের চোরাগোপ্তা হামলায় তাদের দুজন সেনা নিহত হওয়া ছাড়াও এক সেনা অপহৃত হয়েছে। তবে হামাস এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, কথিত অপহৃত সেনাটি সংঘর্ষে নিহত হয়ে থাকতে পারে।
ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা জানান, রাফা শহরে শুক্রবার মধ্যরাত থেকে ব্যাপক বিমান হামলা চালানো শুরু হয়। গতকাল সকালেও তা অব্যাহত ছিল। হামলায় গাজা শহরে অবস্থিত ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে ওই হামলার ঘটনায় হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
ঘটনাস্থল থেকে আল-জাজিরার সাংবাদিক ইমতিয়াজ তায়েব বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন হামলা চালানো হলো, তা স্পষ্ট নয়। তবে গাজার পরিস্থিতি কতটা অনিশ্চিত ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে এ ঘটনা এটাই প্রমাণ করে।’
দুই পক্ষকে ওবামার আহ্বান: মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ‘নিখোঁজ’ ইসরায়েলি সেনার ‘নিঃশর্ত’ মুক্তি দাবি করেছেন। পাশাপাশি তিনি এও বলেছেন, গাজার বেসামরিক লোকজনকে রক্ষায় ইসরায়েলকে আরও অনেক পদক্ষেপ নিতে হবে।
এদিকে ইসরায়েলের এ অভিযানকে ‘বোকামি’ ও ‘অসামঞ্জস্যপূর্ণ’ বলে অভিহিত করেছেন যুক্তরাজ্যের জোট সরকারের অংশীদার লিবারেল ডেমোক্র্যাট পার্টির সাবেক নেতা লর্ড অ্যাশডাউন। তিনি উভয় পক্ষকে সহিংসতার পথ ছেড়ে শান্তি আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছেন। অ্যাশডাউন বলেন, ‘বিশ্বের সেরা ক্ষেপণাস্ত্র বিধ্বংসী ব্যবস্থা হাতে থাকার পরও সামরিক অভিযান শুরু করা ইসরায়েলের জন্য বোকামি হয়েছে।’ পাশাপাশি সাবেক ব্রিটিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী রক্ষণশীল দলের এমপি পিটার লাফ প্রধানমন্ত্রীকে চলমান গাজা-সংকটের বিষয়ে আরও দৃঢ় অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এর আগে ক্ষমতাসীন দলটির আরও কয়েকজন এমপি অনুরূপ আহ্বান জানিয়েছেন।
অস্ত্রবিরতির আহ্বান মিসরের: দেশটির প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি গতকাল বলেছেন, মিসরের অস্ত্রবিরতি পরিকল্পনাই গাজায় সংঘাত নিরসনের ‘সুবর্ণ সুযোগ’ হতে পারে। তিনি এই অস্ত্রবিরতি পরিকল্পনার দ্রুত বাস্তবায়নের তাগিদ দিয়ে বলেন, ‘এটাই উপযুক্ত সময়। ফিলিস্তিনে রক্তপাত বন্ধে ও গাজার আগুন নেভাতে আমাদের দ্রুত এর সুবিধা নিতে হবে।’